শেষ আপডেট: 19th October 2024 13:54
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাবা সিদ্দিকি খুনের পর ফের শিরোনামে উঠে আসে লরেন্স বিষ্ণোই ও তার গ্যাং। জানা যায়, সলমন ঘনিষ্ঠ বাবা সিদ্দিকি খুন হয়েছেন সলমনকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। টার্গেটে রয়েছেন বাবা সিদ্দিকির ছেলে জিশানও। এই আবহাওয়ায় উঠে আসছে পুরনো অনেক কথা। কেন বিষ্ণোই গোষ্ঠীর চক্ষুশূল হলেন বলিউডের এই অভিনেতা। কেনই বা এত বছর পুরনো একটা বিষয় নিয়ে সলমনের উপর এখনও রেগে গোটা একটা জনজাতি? বিলুপ্তপ্রায় কৃষ্ণসার হরিণ হত্যার অভিযোগ। যা নিয়ে এখনও এই গোষ্ঠীর টার্গেটে সলমন। তবে, বিষ্ণোইদের এই পশুপ্রেম বা প্রকৃতিপ্রেম নতুন নয়। রয়েছে এক বিরাট ইতিহাস। রক্তাক্ত ইতিহাস।
সালটা ১৭৩০। যোধপুরের প্যালেস বানানোর জন্য কাঠের প্রয়োজন হয়। মহারাজার নির্দেশে কাঠ জোগাড় করতে গাছ কাটার অভিযান শুরু হয় রাজস্থানে। বিষ্ণোই অধ্যুসিত খেজারলি এলাকায় খেজরি গাছ কাটা নিয়ে বিষ্ণোই গোষ্ঠীর সঙ্গে শুরু হয় বিবাদ।
এই খেজরি গাছ মরুভূমি এলাকায় মাটি ধরে রাখতে ও বাস্তুতন্ত্র ঠিক রাখতে সাহায্য করে। বিষ্ণোই গোষ্ঠীর কাছে এই গাছ ভগবানের সমান। তাই গাছ কাটার নির্দেশ এলে তাতে বাধা দেয় গোষ্ঠীর সকলেই। কথা না শুনে গাছ কাটার চেষ্টা করায় ক্ষেপে যায় গোটা গোষ্ঠী। গাছের সামনে ঢালের মতো দাঁড়িয়ে পড়েন তারা। গাছের দিকে তাকানোর আগে তাদের পেরিয়ে যেতে হবে।
মহিলা, পুরুষ, বাচ্চা মিলিয়ে প্রায় ৩৬৩ জন গাছগুলিকে জড়িয়ে ধরে। 'মানুষের কাটা মাথার থেকে একটা গাছের গুরুত্ব বেশি। দাম বেশি।' এমনই শোনা গেছিল ৩৬৩-এর মধ্যে এক মহিলার দৃঢ় কন্ঠে।
একটি গাছের জন্য এই মহিলাই প্রাণ দেন সেদিন। প্রাণ দেন তাঁর দুই মেয়েও। সকলে যখন গাছ জড়িয়ে দাঁড়িয়ে তখন তাদের সরিয়ে গাছ কাটার জন্য পদক্ষেপ করে সৈন্যরা। আগে মাথা কাটা যাক তারপর গাছ, এমন স্লোগান উঠলেও রেহাই মেলেনি। অমৃতা দেবী অর্থাৎ ওই মহিলা ও তাঁর দুই মেয়ের গলা কুড়ুল দিয়ে কেটে দেওয়া হয়। মাথা থেকে আলাদা হয়ে যায় ধর।
মৃত্যু হতে পারে জেনেও গাছের জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে গেছেন তাঁরা। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত নিজেকে ছাপিয়ে প্রকৃতির জন্য ভেবেছেন। মানুষের জন্য ভেবেছেন। ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে দিনটি। তিনজনের মৃত্যুর খবর পেয়ে সেদিন এলাকায় এসেছিল প্রায় ৮৩টি গ্রামের আরও মানুষজন। তাদের পরিণতিও একে একে এমন হয়েছিল। মৃত্যু হয়েছিল বিষ্ণোই গোষ্ঠীর প্রায় ৩০০ জনের।
মনে করা হয়, এই খেজারলি হত্যাকাণ্ডের প্রায় ২৪৫ বছর পর চিপকো আন্দোলন হয়, এবং এই আন্দোলন খেজারলি আন্দোলনের অনুপ্রেরণাতেই হয়।
অনেকেই এর পর থেকে বিষ্ণোইদের 'গার্ডিয়ানস অফ নেচার' বা 'পরিবেশের অভিভাবক' বলতে শুরু করে।
আরেকটু ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, ১৪৮৫ সালে বিষ্ণোই গোষ্ঠী তৈরি করেন গুরু মহারাজ জামবাজি। তিনি প্রথমেই এই গোষ্ঠীকে নিজের সঙ্গেই পরিবেশের জন্য বাঁচা শেখান। তৈরি করেন ২৯টি নিয়ম। যে নিয়মে সর্বপ্রথম রয়েছে, পশুহত্যা অপরাধ ও গাছ কাটা পাপ।
যা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে মেনে চলেন এই গোষ্ঠীর প্রায় সকল সদস্য। আর সেই সূত্র ধরেই বিলুপ্তপ্রায় কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা এই গোষ্ঠীর কাছে চরম অপরাধ। যার শাস্তি দেওয়ার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয় লরেন্স বিষ্ণোই।
১৯৯৮ সালে যেসময় সলমন খানের বিরুদ্ধে এই কৃষ্ণসার হরিণ মারার অভিযোগ ওঠে, তখন ছোট লরেন্স বিষ্ণোই। কিন্তু এই ঘটনা এড়িয়ে যায়নি ৫ বছরের শিশুর চোখ। বড় হয়ে অপরাধ জগতে হাত পাকিয়ে শুরু হয় বদলা নেওয়া। সলমনকে মারতে ছক কষতে শুরু করে লরেন্স ও তার গোষ্ঠী। গতকাল অর্থাৎ শুক্রবারও হুমকি উড়ে আসে অভিনেতার কাছে। এর আগে তাঁর বাড়ির সামনে ফায়ারিংও হয়। তাঁকে নিরাপত্তা দেন বাবা সিদ্দিকি। শনিবার সেই সূত্রে প্রাক্তন এই মন্ত্রীকেও মেরে ফেলে বিষ্ণোই গোষ্ঠী। আপাতত বাড়ানো হয়েছে তাঁর নিরাপত্তা।