ভেজ প্রোটিন নাকি ননভেজ?
শেষ আপডেট: 18 April 2025 18:10
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বিশ্বব্যাপী নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব দেশে উদ্ভিদজাত প্রোটিন (যেমন- ছোলা, টোফু, ডাল ইত্যাদি) খাওয়ার চল বেশি, সেইসব দেশের মানুষের গড় আয়ু (longer life) তুলনামূলকভাবে বেশি।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার্লস পারকিনস সেন্টারের গবেষকরা ১৯৬১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১০১টি দেশের খাদ্য সরবরাহ ও জনসংখ্যার তথ্য বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছেছেন। এই তথ্য বিশ্লেষণের সময় দেশগুলোর আয় এবং জনসংখ্যার তারতম্যও বিবেচনা করা হয়েছে।
গবেষণার প্রথম লেখক, পিএইচডি স্টুডেন্ট কেইটলিন অ্যান্ড্রুস বলেন, ‘শরীরের ওপর প্রাণীজ প্রোটিন (Non-veg Protein) এবং উদ্ভিদজাত বা ভেজ প্রোটিনের (Veg Protein) প্রভাব তুলনা করলে একটা মিশ্র ফলাফল দেখা যায়। পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের ক্ষেত্রে মাংস, ডিম ও দুগ্ধজাত খাবারজাতীয় প্রাণীজ প্রোটিন ও ফ্যাট শিশুমৃত্যুহার কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেই এর উল্টো ছবি দেখা গেছে- উদ্ভিদজাত প্রোটিন গড় আয়ু বাড়াতে সাহায্য করে।
এই গবেষণাই প্রমাণ, আমাদের খাদ্যাভ্যাস এবং গড় আয়ুর মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র রয়েছে।
গবেষণার বিষয়ে ঠিক কী কী তথ্য নিয়েছেন গবেষকরা?
গবেষকরা ৬০ বছরের তথ্য (যা সহজেই পাওয়া সম্ভব) বিশ্লেষণ করেছেন, যার মধ্যে প্রতিটি দেশে উৎপাদিত খাদ্যের পরিমাণ এবং সেগুলোর ক্যালোরি, প্রোটিন ও ফ্যাট উপাদানের বিবরণ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এই গবেষণায় এমনসব দেশের (যেমন অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন ও আর্জেন্টিনা) তথ্য রয়েছে যেখানে প্রাণীজ প্রোটিন এবং যেসব দেশে (যেমন পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া) উদ্ভিদজাত খাবার তুলনামূলক বেশি খান মানুষ।
পর্যাপ্ত উদ্ভিদজাত প্রোটিনের সরবরাহ রয়েছে এমন দেশে (যেমন ভারত) তুলনামূলকভাবে বেশি গড় আয়ুর প্রমাণ পাওয়া গেছে প্রাণীজ প্রোটিনের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোর তুলনায়- যেমন আমেরিকা।
প্রাণীজ প্রোটিনের সঙ্গে কি সত্যিই স্বাস্থ্যসংক্রান্ত কোনও ঝুঁকি রয়েছে? কী বলছে গবেষণা?
গবেষণা বলছে, বেশি মাত্রায় প্রাণীজ প্রোটিন (বিশেষৎ প্রসেসড মিট) দীর্ঘদিন খাওয়ার অভ্যেস থাকলে নানারকম রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে- যেমন হৃদরোগ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ক্যানসার। অন্যদিকে, ডাল-বাদাম এবং গোটা শস্যজাতীয় উদ্ভিদজাত প্রোটিন আয়ু বাড়ায় এবং কম মৃত্যুহারের সঙ্গে তার সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেছে। জাপানের ওকিনাওয়া, গ্রিসের ইকারিয়া এবং আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার লোমা লিন্ডার মতো দীর্ঘায়ু জনগোষ্ঠীগুলোতে এমন খাদ্যাভ্যাস দেখা যায়।
গবেষক ড. সিনিয়র বলেন, ‘প্রোটিন মানুষের খাদ্যতালিকায় একটি অপরিহার্য উপাদান। তবে বর্তমানে, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেইমতো খাদ্যাভ্যাসের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে, তখন প্রোটিনের উৎস নিয়েও ভাবার সময় এসেছে। উদ্ভিদজাত প্রোটিন শুধু আয়ুই বাড়ায় না, এটি পরিবেশের জন্যও দরকারি।’