Advertisement
Advertisement
শেষ আপডেট: 1 February 2024 16:50
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ছাপা, কিন্তু অক্ষরমালা নয়।
কাগজ বা কাপড়ে ছাপা নয়।
তবু এটা ‘ছাপা’-ই।
প্রযুক্তির এই নতুন বিস্ময়ের পোশাকি নাম ‘থ্রি-ডি প্রিন্টিং’ বা ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ। আর এই তিন মাত্রার প্রিন্টার মেশিন এবার মহাকাশে পাড়ি দিয়েছে। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ESA) ১৮০ কেজি ওজনের থ্রি ডি প্রিন্টার মহাকাশে পাঠিয়েছে। এই প্রিন্টার থেকে বেরবে ধাতু, রকেটের ধাতব যন্ত্রপাতি। মহাকাশে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে ‘জিরো গ্র্যাভিটি’ বা শূন্য মাধ্যাকর্ষণে ঝটপট ধাতু প্রিন্ট করবে এই মেশিন।
থ্রি-ডি প্রিন্টিং বিষয়টা ঠিক কী?
সোজা ভাষায়, কাগজের উপর শুয়ে থাকা সারি সারি অক্ষরমালা নয়। এমন ছাপা সে, যার দৈর্ঘ্য আছে, প্রস্থও আছে, আবার আছে উচ্চতাও। অর্থাৎ প্রিন্ট হয়ে যা বের হবে তার গঠন ত্রিমাত্রিক। কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে হুবহু মিল, অবিকলই একই প্রতিকৃতি হবে।
সাধারণ প্রযুক্তিতে ছাপতে গেলে দরকার হয় কালির। থ্রি-ডি প্রিন্টিংয়ের ক্ষেত্রেও বিষয়টা অনেকটা একই রকম। তবে এখানে কালি হিসেবে সাধারণত ব্যবহার করা হয় ধাতু, সেরামিক কিংবা পলিমার। যদিও দরকারে অন্য রাসায়নিকও ব্যবহার করা যেতে পারে।
আরও সহজ করে ব্যাপারটা বলা যাক। ধরা যাক, একটা ধাতুর রডের থ্রি-ডি প্রিন্ট করতে হবে। ছাপা হবে ত্রিমাত্রিক। রডের নকশা কম্পিউটারে বানিয়ে নিতে হবে। ত্রিমাত্রিক সেই নকশাটা প্রসেসে রাখতে হবে। এবার দরকার বিশেষ ধরনের ‘কালি’র। আর এখানেই অভিনবত্ব। থ্রি-ডি প্রিন্টিং-এ কালির বদলে যে রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে রডটা বানাতে হবে সেটাই ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ সেটাই কালি। ধরা যাক, রডটি টাইটেনিয়াম ধাতু দিয়ে তৈরি করতে হবে। তাহলে সেই টাইটেনিয়াম গলিয়েই বানাতে হবে প্রিন্টারের কালি। বাকিটা একই রকম। কম্পিউটারের প্রিন্ট লেখায় গিয়ে হালকা করে মাউসে ক্লিক। ব্যস! রডের ত্রিমাত্রিক প্রতিলিপি তৈরি।
তবে ভারী ধাতব যন্ত্রপাতি বা রকেটের যন্ত্রাংশ বানানো বিষয়টা আরও জটিল। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির বিজ্ঞানীরা বলছেন, মহাকাশে শূন্য মাধ্যাকর্ষণে ধাতব যন্ত্রপাতি প্রিন্ট করতে গেলে বিশেষ ধরনের কালি লাগবে। সেখানে ধাতু গলিয়ে দূষণ তৈরি করা যাবে না। সেক্ষেত্রে প্লাস্টিক বা প্লাস্টিকজাত পদার্থ রিসাইকেল করে তার থেকে কালি তৈরি হতে পারে। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে সবুজ পলিইথিলিন (Green PE) ৩ডি প্রিন্টারের ফিলামেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। একে বলে ‘অ্যাডিটিভ ম্যানুফ্যাকচারিং ফেসিলিটি’। এই মেশিনের কাজ হবে প্লাস্টিকজাত জিনিসের পুনর্ব্যবহার করে সেই ফিলামেন্ট তৈরি করা।
মহাকাশ বিজ্ঞানীরা চাঁদে বাড়ি বানানোর জন্যও থ্রি ডি প্রিন্টারের সাহায্য নিতে চলেছেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ইট-বালি-সিমেন্ট, কিছুই নিয়ে যেতে হবে না পৃথিবী থেকে। বাড়ি বানাতে ব্যবহার করা হবে চাঁদেরই মাটি। আর এই কাজে লাগবে শুধু একটা থ্রি-ডি মুদ্রণ যন্ত্র (প্রিন্টার)। সেটি অবশ্য এই গ্রহ থেকেই মহাকাশযানে চাপিয়ে পাঠানো হবে চাঁদে। থ্রি ডি প্রিন্টারে লাগানো কম্পিউটারে থাকবে চাঁদের বাড়ির বিভিন্ন অংশের নকশা। কালি হিসেবে ব্যবহার করা হবে চাঁদের মাটি। কম্পিউটারের ‘প্রিন্ট’ অপশনে গিয়ে মাউস ক্লিক করলেই, ওই মাটির মিশ্রণ স্তরে স্তরে জমে চেহারা নেবে ঘনবস্তুর। তৈরি হবে বাড়ির এক একটা অংশ।
Advertisement
Advertisement