শেষ আপডেট: 28th February 2024 16:10
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ১০০ টাকার ট্যাবলেট?
ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য আর লাখ লাখ টাকা খরচ হবে না। মাত্র ১০০ টাকার ট্যাবলেটেই ক্যানসার বাপ বাপ বলে পালাবে! এমনটাই দাবি টাটা মেমোরিয়াল সেন্টারের গবেষক-চিকিৎসকদের।
ক্যানসার সারাতে যুগান্তকারী আবিষ্কার করে ফেলেছে টাটা গ্রুপ। টাটা ইনস্টিটিউটের তৈরি ট্যাবলেট ক্যানসার কোষের বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে পারবে বলেই দাবি। আর এই ট্যাবলেট বাজারে বিক্রি হবে মাত্র ১০০ টাকায়। ক্যানসার চিকিৎসায় আর লাখ লাখ টাকা খরচ করতে হবে না সাধারণ মানুষকে।
১০০ টাকার ট্যাবলেট কেমন?
টাটা মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউটের অভিজ্ঞ অনকোলজিস্টদের টিম এই ওষুধ নিয়ে গবেষণা করছে। ওই প্রতিষ্ঠানের প্রবীণ বিজ্ঞানী ডক্টর রাজেন্দ্র বাদভে একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, দেশের ফুড সেফটি ও সিকিউরিটি অথরিটির কাছে এই ওষুধের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। সবুজ সঙ্কেত পেলেই এই ওষুধ বাজারে নিয়ে আসা হবে। এর নাম ‘আর+সিইউ’ (R+CU), রেসভেরাট্রোল ও কপারের মিশ্রণ। বর্তমানে ক্যানসার চিকিৎসায় খরচ হয় লাখ লাখ টাকা। সেই খরচ একধাক্কায় অনেকটাই কমে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কেন বার বার ফিরে আসে ক্যানসার?
গবেষক রাজেন্দ্র জানাচ্ছেন, টাটা মেমোরিয়ালে ক্যানসারের নানা থেরাপি নিয়ে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে গবেষণা চলছিল। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ক্যানসার কোষ সহজে নির্মূল হয় না। এর দুটো কারণ—১) ক্যানসার বা টিউমার কোষ খুব দ্রুত বিভাজিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এইসব কোষের বিভাজন চলতেই থাকে। ২) কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি দিয়ে ক্যানসার কোষ পুড়িয়ে দিলেও তার অবশিষ্টাংশ থেকে নতুন করে কিছু ফ্রি রেডিক্যালস বের হতে থাকে। এই ধরনের উপাদানের নাম ক্রোমাটিন। মৃতপ্রায় ক্যানসার কোষের ক্রোমোজোমের অংশ থেকে এই ক্রোমাটিন বের হয় যা আশপাশের সুস্থ কোষগুলিকে বিষাক্ত করে তোলে। তাই দেখা যায়, ক্যানসার কোষ কেমো দিয়ে রেডিও তরঙ্গ দিয়ে নষ্ট করে ফেলা হলেও সেখানে ফের ক্যানসার কোষ গজিয়ে ওঠে। তাই বার বার রোগীকে কেমোথেরাপি দেওয়ার দরকার পড়ে।
গবেষকরা বলছেন, এই ফ্রি রেডিক্যালস ক্রোমাটিন কোষের ক্রোমোজোমের অংশ। তাই তাদের মধ্যে ডিএনএ (জিন) ও প্রোটিন একসঙ্গে থাকে। একদিকে ক্যানসার কোষের প্রোটিন সুস্থ কোষগুলিকে সংক্রমিত করতে থাকে, অন্যদিকে জিনগত উপাদান ক্রমেই বিভাজিত হয়ে এক কোষ থেকে অন্য কোষে ক্যানসারকে বয়ে নিয়ে যেতে শুরু করে। শুধু ক্যানসার নয়, এই ক্রোমাটিন অটোইমিউন ডিজিজ, ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ জনিত রোগের কারণও হয়ে ওঠে। তাই কেমোথেরাপি দেওয়ার পরেও নানারকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে দেখা যায়।
১০০ টাকার ট্যাবলেট কী কাজ করবে?
ডক্টর রাজেন্দ্র বলছেন, R+CU একধরনের প্রিঅক্সিডেন্ট ট্যাবলেট। রেসভেরাট্রল ও কপারের মিশ্রণ শরীরে ঢুকে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন র্যাডিকেল তৈরি করবে। এই অক্সিজেন ক্রোমাটিন পার্টিকলগুলো ধ্বংস করতে শুরু করবে। ওষুধটি খেলেই তা শরীরের রক্তরসের সঙ্গে মিশে গিয়ে অক্সিজেন তৈরি করতে শুরু করে দেবে। এই অক্সিজেন ক্যানসার প্রোটিনকে সমূলে বিনাশ করতে থাকবে। ফলে নতুন করে আর ক্যানসার কোষ তৈরি হবে না। এমনকী কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি দেওয়ার পরে যে টক্সিন তৈরি হয় শরীরে, তাও নষ্ট করতে পারবে ওই অক্সিজেন র্যাডিকেল। ক্যানসার বার বার ফিরে আসার সম্ভাবনাটাই নষ্ট হয়ে যাবে চিরতরে।
টাটার গবেষকরা বলছেন, ফুড সেফটি অ্যান্ড অথরিটির অনুমতি পেলে এবং সব ঠিক থাকলে জুন-জুলাই মাসে এই ওষুধটি বাজারে আসতে পারে।