Date : 14th Jul, 2025 | Call 1800 452 567 | info@thewall.in
একটি গ্রাম পঞ্চায়েতেই ৪ হাজারের বেশি ভুয়ো জন্ম-মৃত্যু সার্টিফিকেট! হাইকোর্টে জানাল রাজ্যক্রিকেট বল খুঁজতে গিয়ে বাড়ি থেকে উদ্ধার ৭ বছর পুরনো মানব কঙ্কাল! হায়দরাবাদে রহস্যEng vs Ind: দাম পেল না জাদেজার অবিস্মরণীয় লড়াই, ২২ রানে হেরে গেল ভারতজাল রিফান্ড! একাধিক রাজ্যে অভিযান আয়কর বিভাগের, ধরা পড়ল হাজার কোটির কর ফাঁকিহিন্দমোটরের জমিতে বন্দে ভারত ট্রেন ও মেট্রোর কোচ তৈরির কারখানা, জমি লিজে দিচ্ছে রাজ্য সরকারমহাকাশে ১৮ দিন কাটিয়ে ফিরছেন শুভাংশু, ২২ ঘন্টার দীর্ঘ পথ চেয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় দেশবাসীবলিউডে আউটসাইডার ইনসাইডারি গেমটার বিষয়ে আমি প্যান্ডেমিকের পর থেকে শুনছি'মাকু' লোকজন মিশে গেছে! চাকরিহারাদের 'খোলা চিঠি' দিয়ে বিশেষ বার্তা শুভেন্দুর'বাবাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসতেন, অপমান থেকে বাঁচতে সেই খুন করল?' প্রশ্ন তুলছেন রাধিকার বান্ধবীকোর্টের নির্দেশে মুম্বইয়ে মসজিদ মিনার মাইকহীন, আজান শোনাচ্ছে অনলাইন অ্যাপ, বাড়ির স্পিকার
So Much Violence So Soon After the Wedding

সানাইয়ের সুর, ফুলের গন্ধ, চুড়ির শব্দ... বিয়ের রেশ না ফুরোতেই সব ভেঙে খানখান! এত রক্ত কেন?

মেরঠের মুসকান থেকে ইন্দোরের সোনম। একটা বিয়ে, একাধিক স্বপ্ন ও খেলা ঘরের মতো সবটা রাতারাতি ভেঙে পড়া। কেন বার বার হচ্ছে এমন? 

সানাইয়ের সুর, ফুলের গন্ধ, চুড়ির শব্দ... বিয়ের রেশ না ফুরোতেই সব ভেঙে খানখান! এত রক্ত কেন?

গ্রাফিক্স- শুভ্র শর্ভিন

শেষ আপডেট: 12 June 2025 06:34

গার্গী দাস
 

বসন্তের রং যখন জীবনে লাগে তখন সবটাই কেমন বদলে যায়। সামান্য শব্দেও মুখে হাসি ফোটে। আকাশ-বাতাস সবাই যেন দু'টো মনকে এক জায়গায় আনতে মত্ত। প্রেম এলে মানুষ দিশেহারা হয়ে যায়। এলোমেলো বিকেলেও গুনগুনিয়ে ওঠে। প্রেম যত গাঢ় হতে থাকে, বিশ্বাস বাড়তে থাকে, আঁকড়ে ধরার শক্তি আসতে থাকে, তত একে অপরের মধ্যে মিলিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে বাড়তে শুরু করে। নদীর একুল ভেঙে ওকুল গড়ার মতোই দ্রুত গতিতে ঘর বাঁধার স্বপ্নও আসে। কালের নিয়মে বিয়ে হয়, সংসার হয়...। কিন্তু! তারপরই সব কেমন বদলে যেতে থাকে। যে কথায় হাসি ফুটত, সেকথাই বিষের মতো বিধতে শুরু করে। হাসি মুখটা বদলে যেতে থাকে। না ভোলা প্রেম, সম্পর্কে তিক্ততা বা প্রতিশোধ ও লালসার স্পৃহা, কাছের মানুষকে বদলে দেয় অপরাধীতে। পরিণতি? সোনম রঘুবংশী বা মুসকানরা।

সম্পর্ক নিয়ে রিল, ভিডিও, সামাজিক মাধ্যমে ঢালাও শিক্ষা ও সচেতনতার পাহাড়। সম্পর্ক নিয়ে ঝুলি ভর্তি বিজ্ঞাপন। সম্পর্ক নিয়ে সিনেমা, সিরিয়াল, আরও কত কী। সমাজের একাধিক সমস্যাকে সাত হাত দূরে রেখে জনপ্রিয় কন্টেন্ট এখন এটাই। কিন্তু তাও সেই সম্পর্কই বার বার শূলে চড়ছে কেন। সারাজীবন একসঙ্গে থাকার শপথ নিয়েও কেন মাত্র কয়েকদিন বা কয়েক মাসে থেমে যাচ্ছে একত্র যাপনের পথ? এই সব ঘটনায় কি তবে কোনও বার্তা রয়েছে? যা আদতে আমরা এড়িয়ে যাচ্ছি বা ধরতেই পারছি না।

মেরঠের মুসকান থেকে ইন্দোরের সোনম। একটা বিয়ে, একাধিক স্বপ্ন ও খেলা ঘরের মতো সবটা রাতারাতি ভেঙে পড়া। স্বামীকে খুন, প্রত্যেক ক্ষেত্রেই প্রেমিকের জড়িত থাকার উদাহরণ। প্রশ্ন উঠছে, প্রেমই যদি থাকে, তাহলে তাকে বিয়ে না করে অন্য কোনও মানুষের জীবনে যাওয়া কেন। সামাজিক মাধ্যমে ঘুরছে এনিয়ে নানা তত্ত্ব। এমন পর পর ঘটতে থাকা বিষয়ে কী মনে করছেন মনোবিদরা? এই সব ঘটনার পিছনে লুকিয়ে থাকা বার্তা নিয়েই বা কী মত তাঁদের। জানতে দ্য ওয়ালের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল কনসালটেন্ট সাইকোলজিস্ট অ্যান্ড লাইফ কোচ সৌমি চক্রবর্তীর সঙ্গে। তিনি এনিয়ে খানিকটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

সমাজ একটা বড় বিষয়। সামাজিক হয়ে ওঠা আরও বড়। এই সমাজের সঙ্গে মানিয়ে নিতে নিতেই একটা মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত চলে যায়। দিন যত এগিয়েছে, সমাজের ছক ভাঙা নিয়মের বাইরে গিয়ে মানুষ নিজেকে মেলে ধরেছে। কাজ করেছে। নিয়ম বদলেছে, নিজেদের অধিকার বুঝে নিয়েছে। কিন্তু তাও কোথাও যেন সমাজের গোঁড়ামি, না বদলানো কিছু নিয়ম এখনও একটা মানুষকে সামাজিক করতে গিয়েই শেষ করে দিচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে একাধিক পরিবারের হাসি। এর পিছনে যে গলদটা সবচেয়ে বেশি রয়েছে বলে মনে করছেন মনোবিদ, তা হল 'শিক্ষা।'

পুঁথিগত শিক্ষার কথা তিনি কোনওভাবেই বলতে চাননি। প্রকৃত অর্থে শিক্ষা বলতে যা বোঝায়, একজন মানুষের চরিত্র গঠন করে যে শিক্ষা, সে শিক্ষার অভাব সমাজে সর্বত্র। তাঁর কথায়, 'মানুষ অনেক বেশি অর্ধৈর্য আজ। হাতের নাগালে ইচ্ছে পূরণের চাবিকাঠি না থাকলেই অস্থিরতা। পরিণতি সম্পর্কে অস্পষ্ট চিন্তাভাবনা। সবটাই শিক্ষার অভাবে।'

মানুষ বড় সস্তা, কেটে ছড়িয়ে দিতেই পারত। পারত নয়, ২০২৫- এ দাঁড়িয়ে কেটে ছড়িয়েই দিচ্ছে। এর পিছনে শিক্ষার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া, ইন্টারনেটের অপব্যবহার এবং সবসময় একটা যান্ত্রিক, আবেগ ও লোকদেখানো দুনিয়ায় 'বেঁচে থাকা'-কে দায়ি করেছেন মনোবিদ। তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন, কোনও একটা মানুষ অপরের দেখেও কিছুটা শেখেন। এই দেখাতেও অনেক বিষয় লুকিয়ে থাকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাল কন্টেন্টের চেয়ে আবর্জনার সংখ্যা অনেক বেশি। যার কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে মানুষ কোনটা গিলবে তা বুঝতে পারছেন না। 'ডিজিটাল ডায়েট' সম্পর্কে কোনও সচেতনতা বা পদক্ষেপই নেই কারও। ফলে সমাজ পিছিয়ে পড়ছে।

প্রকৃত জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও, কোনও বিষয় নিয়ে না পড়াশোনা করে, গবেষণা করে মানুষ আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছেন, যা অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী প্রবাদের মতোই সত্য। মনোবিদ সৌমি বলছেন, 'মানুষ আগেও হয়তো এমন করেছেন, তাকে এত হাইলাইট করা হয়নি। এখন হচ্ছে, একজনের থেকে আরেকজন শিখছে। অন্তত ব্যাক অফ দ্য মাইন্ড তো তাই চলছে। পাশাপাশি মানসিকতাও তো মহিলাদের ধীরে ধীরে বদলেছে। ডিসায়ার ফুলফিল হচ্ছে না ফলে এই সব ঘটনা। শিক্ষা না থাকায় পরিণতি সম্পর্কে অচেতন। নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে বিয়ে করে ফেলা। এই সব সমস্যাও পাশাপাশি রয়েছে। একটা মানুষকে প্রচুর বৈভব পেতে দেখে, আরেকটা মানুষ অস্থির হচ্ছে দিন দিন। কোনও একদিন কিছু একটা করে বসছে। এটা বৈভব শুধু না প্রেম, চাকরিতে উন্নতি বা অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।'

এআই-এর দুনিয়ায় দাঁড়িয়েও সমাজের শ্রেণি বিভাজনের বিষয়টা মেঘালয়ের এই ঘটনায় উঠে আসছে। নেটিজেনদের অনেকেই বলছেন, ২৪ বছর বয়সি সোনম হয়তো বাবার কোম্পানির কর্মচারীকে ভালবাসেন তা বলতেই পারেননি। অসম সামাজিক পরিচিতি বা আর্থিক বিষয়ের জন্য রাজা রঘুবংশীকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছেন। এবিষয়ে মনোবিদকে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি এখানেও শিক্ষাকেই প্রধান ব্যাখ্যায় রেখেছেন। তিনি মনে করিয়ে দেন, শিক্ষা প্রকৃত অর্থে একজন মানুষকে এসব থেকে দূরে রাখে। শ্রেণি বিভাজন তো আসবেই না সেক্ষেত্রে। তাই শিক্ষা দরকার।

সম্পর্ক নিয়ে শিক্ষা এবং ভ্যালু এডুকেশন কি তবে স্কুলের পাঠ্যক্রমে ঢোকানো উচিত?

প্রশ্ন শেষ করার আগেই তাঁর জবাব, 'অবশ্যই।' 'এনিয়ে ছোট থেকেই সম্যক ধারণা থাকলে কেউ এমন কাজ করার আগে ভাববেন। খুনের ছক কষে সমস্ত কিছু সাজিয়ে কাউকে মেরে ফেলা বিরাট ব্যাপার। এই মানসিকতাই আসবে না। তাই শুধু প্রেমের সম্পর্ক নয়, মানুষকে মানুষ বলে গন্য করার শিক্ষা ও একজনের সঙ্গে কথা বলা, সম্পর্ক রাখা, কোনও সম্পর্কের প্রতি দায়বদ্ধতা, পরিবারের দায়িত্ব পালন করা সঙ্গে নিজেকে ভাল রাখার শিক্ষা দেওয়া উচিত ছোট থেকেই।' পাশাপাশি ধৈর্য বাড়াতে স্কুলে যোগ অভ্যাস, রিডিং এক্সারসাইজ, ব্রিদিং এক্সারসাইজ, সকলের সঙ্গে মিলেমিশে থাকা ও সর্বোপরি ইন্টারনেট থেকে দিনে অন্তত কয়েক ঘণ্টা দূরে থাকার কথা বলছেন সৌমি।

যদিও এই পদক্ষেপ সময় সাপেক্ষ। বর্তমানে এই ধরনের ঘটনা আটকাতে যেকোনও মামলাকে দীর্ঘায়িত না করে অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি। এই মনোবিদা তথা লাইফ কোচ মনে করেন, একটা যেকোনও কেসে অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে এমন খুনের কথা কল্পনা করার আগেও দুবার ভাববে মানুষ। বাকিটা তো সচেতনতা, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবা ও ধীরে ধীরে নিজেকে বাঁচতে শেখানোর ওপর নির্ভর করছে।


ভিডিও স্টোরি