শেষ আপডেট: 8th January 2025 18:44
ছোটবেলায় খেলনা বাটি খেলেছেন নিশ্চয়ই? মাটির, হাঁড়ি, কড়া, খুঁন্তি, উনুন নিয়ে মিছিমিছি চলত রান্নাবান্না। ছেলেবেলার সেই স্মৃতি এখনও বাঁচিয়ে রেখেছেন হাওড়ার দক্ষিণ সাঁকরাইলের অজয় পাল। তিনি মাটির খেলনা-বাটি তৈরি করেন। অনেকে এই পেশা ছাড়লেও, অজয় এখনও আঁকড়ে ধরে রয়েছেন। বিভিন্ন মেলায় খেলনার পসরা সাজিয়ে বসেন তিনি গোটা বছর ধরে।
বংশ পরম্পরায় মাটির জিনিস তৈরি করে আসছেন অজয়। দাদুর কাছে মাটির খেলনা তৈরি শিখেছিলেন। তারপর থেকে ছোটদের জন্য মাটির খেলনা তৈরি করে চলেছেন। একটা সময় ছিল, মাটির খেলনা নিয়ে খেলতে দেখা যেত বাচ্চাদের। কিন্তু মোবাইলের দুনিয়ায় সেই সব এখন ইতিহাস। সঙ্গে প্লাস্টিকের খেলনার বাজারে মাটির খেলনার চাহিদা তলানিতে এসে ঠেকেছে। এক সময়ে যে অজয়রা এই সব খেলনা পাইকারি দরে বিক্রি করতেন, এখন তাঁরাই মেলায় মেলায় খেলনা বিক্রি করছেন। আর পেশা মোমবাতির আলোর মতো টিমটিম করছে।
অজয় পাল বলেন, '৫০-৬০ বছরের ব্যবসা আমাদের। গ্লাস, বাটি, কলসি, কড়া এসব তৈরি হয়। সব মাটির। ব্যবসা আগে বড় ছিল, কলকাতায় যেত। বড় বড় জিনিস তৈরি হত। আমরা বড় জিনিস বানাতে পারি না। ছোট জিনিস তৈরি করতে পারি। আমার দাদু এসব কাজ শিখিয়েছিলেন। দাদুই বানাতেন। বাড়িতেও বিক্রি হয়, দোকানে অর্ডার পেলে তৈরি করে দি। মেলাও আছে। আশ্বিন থেকে কাজ শুরু হয় বৈশাখ-জৈষ্ঠ পর্যন্ত হয়। এখন আর আগের মতো তো নেই। পরিশ্রমটাই সব, লাভ আর কোথায় হয়। মাটির দাম যা। মাটির অর্ডার দিলে গঙ্গার মাটি পাওয়া যায়।'
'আস্তে আস্তে এসবের চাহিদা কমে গেছে। এখনকার বাচ্চারা আর এসব পছন্দ করে না। পুরনো হয়ে গেছে ওদের কাছে। এখন সব প্লাস্টিকের কত খেলনা। বাবা আছেন, তাই চলছে। আমরা এই লাইনে নেই। এখন আর এসব চলে না।' বললেন অজয় পালের ছেলে সুরজিৎ। তিনি এই পেশার ধারে কাছে ঘেঁষেন না, এমনই জানালেন শেষে।
তবে প্রতিবেশীদের এই নিয়ে বেশ আগ্রহ রয়েছে। তাঁদের কথায়, ছোট থেকে দেখছি, প্লাস্টিকের কাছে কদর কমলেও আমরা চেষ্টা করি মাটির খেলনাই কিনে দিতে। শৈশব ফিরে পাই। যাঁরা ভালবাসেন তাঁরা ঠিক কেনেন। স্মৃতিচারণাও তো হয়।