শেষ আপডেট: 27th January 2025 09:20
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পরিবারে মেজ ছেলে বা মেয়েকে (Middle Children) নিয়ে প্রচলিত ধারণা হল, তারা যেন সবসময়ই একটু অবহেলিত। বড়রা বেশি গুরুত্ব পায়। আর ছোটরা পায় বেশি আদর। এই দুয়ের ছায়ার মাঝে মেজরা যেন হারিয়ে যায়। কিন্তু সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য—মাঝের সন্তানরাই নাকি ব্যক্তিত্বের দিক থেকে অনেক এগিয়ে!
প্রায় এক শতক আগে মনোবিজ্ঞানী আলফ্রেড অ্যাডলার প্রথম বলেছিলেন, জন্মক্রম নাকি আমাদের ব্যক্তিত্ব তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখে। তাঁর তত্ত্ব অনুযায়ী, বড় সন্তানরা দায়িত্ববান এবং আত্মবিশ্বাসী হয়, ছোটরা আদরের কেন্দ্রে থাকে, আর মাঝের সন্তানরা অনেক সময় নিজেকে গুরুত্বহীন ভাবে। এই তত্ত্ব নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও মাঝের সন্তানদের নিয়ে নতুন এই গবেষণা বলছে অন্য কথা।
কানাডার ব্রক ইউনিভার্সিটির মাইকেল অ্যাশটন এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্যালগারির কিবিয়ম লি পরিচালিত একটি গবেষণায় জানা গেছে, মাঝের সন্তানেরা সাধারণত আরও সৎ, নম্র এবং সহজে মিশুক স্বভাবের হয়। হেক্সাকো পারসোনালিটি ইনভেন্টরি (HEXACO Personality Inventory) নামের একটি বিশেষ মানদণ্ড ব্যবহার করে তাঁরা মাঝের সন্তানদের ব্যক্তিত্ব বিশ্লেষণ করেছেন। এতে দেখা গেছে, সততা ও নম্রতায় মাঝের সন্তানদের স্কোর সবচেয়ে বেশি।
গবেষণায় বলা হয়েছে, মাঝের সন্তানরা সহজে অন্যকে ক্ষমা করে, নমনীয়ভাবে বিচার করে এবং নিজেদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে জানে। এমনকি তারা নিজেদের স্বার্থের চেয়ে সম্পর্ককে বেশি গুরুত্ব দেয়। বিলাসবহুল জীবনযাপন বা সামাজিক মর্যাদার প্রতি তাদের বিশেষ আকর্ষণ থাকে না।
তবে সব সময়ই কি মাঝের সন্তানদের এই বিশেষ গুণগুলোর কথা বলা হয়? না। বরং প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, তারা পরিবারে যেন একটু চাপা পড়ে যায়। কিন্তু বাস্তবে এমন অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব আছেন, যারা এই তত্ত্বকে মিথ্যে প্রমাণ করেছেন। মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, ম্যাডোনা, ওয়ারেন বাফেট, এমনকি আব্রাহাম লিঙ্কনের মতো বিশ্বনন্দিত ব্যক্তিত্বরাও ছিলেন মেজ সন্তান।
অবশ্য এই তত্ত্বেরও বিরোধিতা রয়েছে। ২০২০ সালের একটি গবেষণা জানাচ্ছে, জন্মক্রমের সঙ্গে ব্যক্তিত্বের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। তার মানে, একমাত্র সন্তান নার্সিসিস্টিক হবে বা বড়রা সবসময় দৃঢ়চেতা হবে—এমন কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম নেই।
তবু মাঝের সন্তানেরা যে সম্পর্ক, নম্রতা আর সততার দিক থেকে অন্যদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে থাকে, তা নতুন করে ভাবাচ্ছে অনেককেই। নতুন গবেষণার দাবি তাই সাড়া ফেলে দিয়েছে।