শেষ আপডেট: 24th January 2024 15:55
দ্য ওয়াল ব্যুরো: না, উবে যায়নি পুরোপুরি। বরং এখনও প্রচুর পরিমাণে জল রয়েছে ‘লাল গ্রহ’ মঙ্গলে। হয়তো তার অতীতের জলের সঞ্চয়ের ৯৯ শতাংশকেই ধরে রাখতে পেরেছে লাল গ্রহ। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি তাদের সাম্প্রতিক গবেষণায় দাবি করেছে, মঙ্গলের দুই পেল্লায় গহ্বরে টন টন জল জমে আছে মাটির নীচে। এত জল সঞ্চিত আছে যা পৃথিবীর লোহিত সাগরকে কানায় কানায় ভরিয়ে দিতে পারে।
কোটি কোটি বছরে তার বায়ুমণ্ডল খুবই পাতলা হয়ে গেলেও জলের ভাণ্ডারকে খোয়াতে দেয়নি লাল গ্রহ। বাঁচিয়ে রেখেছে। বাঁচিয়ে চলেছে। প্রায় ৩০০ কোটি বছর ধরে। এমনটাই দাবি ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির। লাল গ্রহের সারফেসের নীচে এখনও জল আছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, ৪০০ কোটি বছর আগে যে পরিমাণ জলের ধারা বইত মঙ্গলে, তার ৩০ থেকে ৯৯ শতাংশ জল এখনও উবে যায়নি। তার কিছুটা মঙ্গলের পিঠের নীচে অত্যন্ত ঠাণ্ডায় জমে বরফ হয়ে রয়েছে, বাকিটা রয়েছে পিঠে ছড়ানো বিভিন্ন খনিজের অন্দরে। মঙ্গলের লাল মাটির নীচে দেড় থেকে ২.৭ মিটার গভীরতায় জল জমে বরফ হয়ে আছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
৪০০ কোটি বছর আগে তরল অবস্থায় থাকা জলের পরিমাণ যথেষ্টই ছিল মঙ্গলে। কিন্তু জন্মের ১০০ কোটি বছর পর থেকেই শুকিয়ে যেতে শুরু করে। ওই সময় মঙ্গলকে চার দিক থেকে ঘিরে থাকা চৌম্বক ক্ষেত্রটি উধাও হয়ে যায়। নিজের অভিকর্ষ বলের টান ততটা জোরালো নয় বলে মঙ্গল দ্রুত তার বায়ুমণ্ডল হারাতে শুরু করে। আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে উবে যেতে শুরু করে লাল গ্রহের জলের ভাণ্ডার।
জল সাধারণত দু’ধরনের হয়। একটি ক্ষেত্রে জলের অণুতে থাকা হাইড্রোজেন পরমাণুর নিউক্লিয়াসে শুধুই একটি প্রোটন থাকে। এই ধরনের জলই বেশি দেখা যায়। অন্য ক্ষেত্রে জলের অণুতে থাকা হাইড্রোজেন পরমাণুর নিউক্লিয়াসে থাকে একটি প্রোটন ও একটি নিউট্রন। দ্বিতীয় ক্ষেত্রের জলকে বলা হয় ‘ডিউটেরিয়াম ওয়াটার’। এই ধরনের জলে হাইড্রোজেন পরমাণুতে প্রোটনের সঙ্গে বাড়তি একটি নিউট্রনও থাকে বলে তা তুলনায় ভারী হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মঙ্গলের দুর্বল অভিকর্ষজ বলের জন্য ওই হাল্কা ওজনের জল উবে গেছে আগেই, কিন্তু লাল গ্রহে রেখে গিয়েছে ভারী জলকে (ডিউটেরিয়াম ওয়াটার)। যে জলের অণুর একটি হাইড্রোজেন পরমাণুর অন্দরে একটি প্রোটনের সঙ্গে থাকে একটি নিউট্রনও। মঙ্গলে এমন অনেক ডিউটেরিয়ামের খোঁজ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে ডিউটেরিয়াম ও হাইড্রোজেনের যে অনুপাত পেয়েছেন তা বুঝিয়ে দিচ্ছে উবে যাওয়ার ফলে লাল গ্রহ যেমন তার জলের ভাণ্ডারের কিছুটা কয়েকশো কোটি বছরে খুইয়েছে, তেমনই সেই জলের অনেকটা পিঠের নীচে থাকা বরফ ও পিঠে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থের মধ্যে ধরেও রেখেছে।