
দ্য ওয়াল ব্যুরো: এ যেন আর এক গুলাব গ্যাং! প্রত্যেকেরই পরনে গোলাপরঙা শাড়ি (Pink sarees)। দল বেঁধে ‘স্কুল’-এ (School) যাচ্ছেন তাঁরা। ছাত্রীরা প্রত্যেকেই ষাটোর্দ্ধ। স্কুল? তার না আছে ক্লাসরুম, না আছে বেঞ্চ কিংবা ডেস্ক। থাকার মধ্যে আছে শুধু একখানা ব্ল্যাকবোর্ড। তার সামনেই শতরঞ্চি পেতে বসেন ছাত্রীরা। শুরু হয় ক্লাস।
অভিনব এই স্কুলের দেখা পেতে গেলে আপনাকে যেতে হবে মহারাষ্ট্রের (Maharastra) ঠানে জেলায়। স্কুলের নাম ‘আজিবাইচি শালা।’ সেখানে পড়াশোনা করেন শুধুই ছাত্রীরা। তাঁদের বয়স ৬০-৯০ এর মধ্যে। ২০১৬ সালে ৮ মে, আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবসের দিন পথচলা শুরু এই পাঠশালার। এখন সেখানে মোট ছাত্রীসংখ্যা ৩৫। স্কুলের নির্দিষ্ট কোনও সময়সীমা নেই। সকলের সুবিধা অনুযায়ী কখনও সকাল ১০-১২টা, কখনও আবার পড়াশোনা চলে দুপুর ২-৪টে পর্যন্ত। প্রতি সপ্তাহে সোমবার থেকে শনিবার পর্যন্ত চলে লেখাপড়ার কাজ।
কিন্তু হঠাৎ এমন স্কুল কেন? যোগেন্দ্র ভাঙড় নাম একজন স্থানীয় জেলা পরিষদ শিক্ষক এবং সমাজকর্মী জানালেন সে কথা। টানে কাছে হঠাৎই একদিন এসে হাজির হন ৭০ বছর বয়সি এক বৃদ্ধা। তাঁর আক্ষেপ, একটু লেখাপড়া জানলে তিনি অন্তত ছত্রপতি শিবাজীর জীবনীটুকু নিজে পড়তে পারতেন। এরপরেই বয়স্ক মহিলাদের জন্য স্কুল চালু করার কথা মাথায় আসে তাঁর।
মোতিলাল দালাল ট্রাস্টের অর্থসাহায্যে শুরু হয় এক কামরার আজিবাইচি শালা। স্কুলের একমাত্র শিক্ষিকা মাধ্যমিক পাশ শীতল মোর। ৩০ বছরের শীতল বৃদ্ধাদের মারাঠি অক্ষর পরিচয় করান। এছাড়াও শেখান সংখ্যা, ছড়া। স্কুলের পাশেই আছে বাগান। সেখানে প্রত্যেক ছাত্রীর একটি করে গাছ আছে। চারা অবস্থা থেকে সেই গাছকে যত্ন করে বড় করে তোলার সম্পূর্ণ দায়িত্ব ছাত্রীদের।
৭০ বছরের কান্তাবাই ছোটোবেলায় স্কুলে যাওয়ার সুযোগই পাননি। পাঁচ ভাইবোনের সংসারে শুধু ভাইরাই স্কুলে যেত। বাবা মা চাষের কাজে বেরিয়ে গেলে ঘরের কাজ করতে করতেই সময় কেটে যেত কান্তাবাই ও তাঁর দুই বোনের। তারপর তো সংসারের জোয়াল টানা। শেষ বয়সে এসে শুরু করেছেন পড়াশোনা। এখন চড়া পড়তে তাঁকে সাহায্য করে নাতি নীলেশ। ঠাকুমাকে স্কুলেও পৌঁছে দিয়ে যায় সে।
আগে যখন পেনশন তুলতে ব্যাংকে যেতেন, সেখানকার কর্মীরা কোনও কথা না বলেই দরকারি কাগজপত্রে কান্তাবাইয়ের বুড়ো আঙুলের ছাপ নিয়ে নিতেন। ‘খুবই লজ্জা লাগত। মনে হতো, অন্তত নিজের নামটুকু সই করতে জানা উচিত। এখন যখন ব্যাংকে যাই, ওরাই আমাকে হাত জড়ো করে নমস্কার করেন, তারপর সই করার জন্য পেন এগিয়ে দেন। দারুণ গর্ব হয় তখন,’ দাবি কান্তাবাইয়ের।
সারা জীবন সংসার সামলে বয়স বাড়ার পর অনেক সময়েই সমাজের কাছে, পরিবারের কাছে ‘অপ্রয়োজনীয়’ হয়ে যান মহিলারা। সেই অবস্থা থেকে তাঁদের নিষ্কৃতি দেওয়াই আজিবাইচি শালার লক্ষ্য। । অন্তত লেখাপড়াটুকু শেখার পর একটু একটু করে ফিরে আসছে হারানো আত্মবিশ্বাস, বোঝা মনে হচ্ছে না নিজেদের, স্বীকার করছেন অভিনব এই পাঠশালার ছাত্রীরা। অত্যন্ত খুশি তাঁদের বাড়ির লোকজনও।
পালিত মেয়ের গলায় তুলসীর মালা, খাদ্যাভ্যাসই বদলে ফেললেন আব্বু-আম্মু! অনন্য নজির আলিপুরদুয়ারে