শেষ আপডেট: 7th March 2025 21:00
সংসারের বোঝা তাঁর দুই কাঁধে। বয়সের ভারে ঝুঁকে পড়লেও, সেই বোঝা কাঁধে নিয়ে মাথা উঁচু করে দিব্যি প্রতিদিন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। হাসি মুখে বয়ে চলেছেন তিনটে মানুষের দায়িত্ব। সয়ংসিদ্ধা সেই মহিলার গল্পই রইল দ্য ওয়ালে।
রাস্তা দিয়ে যেতে গিয়ে হঠাৎই দেখা তাঁর সঙ্গে। গায়ে সুতির শাড়ি লেপ্টে, এক গাল হাসি মুখে সবজি বিক্রি করছেন। সবজি তো অনেকেই বিক্রি করে সংসার চালান। তিনি কেন বিশেষ? প্রথম তিনি ভ্যান চালান, তথাকথিত পুরুষদের কাজ পঞ্চাশোর্ধ্বতেও করেন। ভ্যানে করেই সবজি বিলি করেন এই বাড়ি থেকে ওই বাড়ি।
কেন এই পেশায় এলেন? প্রশ্ন করতেই লজ্জা জড়ানো হাসি নিয়ে বলে ফেললেন, 'সংসারে তো আর কেউ কিছু করে না। তখন সবাই অসুস্থ। আয় নেই বললেই চলে। সংসার সামলাতে তাই সবজি বিক্রি শুরু।' কিন্তু ভ্যান চালিয়ে সবজি বিক্রির পরিকল্পনা মাথায় আসে পরে।
মূলত পূর্বাচল, রাজডাঙা, আনন্দপুর, রুবি ও বাইপাসের কয়েকটি জায়গায় সবজি বিক্রি করেন তিনি। শুরুটা হয়েছিল মাথায় ঝুরি নিয়ে। সেসময় এই সব এলাকায় বড় মাপের স্কুল বা বিরাট লম্বা লম্বা বাড়ি গড়ে ওঠেনি। তিনি আনন্দপুরের বাড়ি থেকে হেঁটেই সবজি বিক্রি করতেন।
তাহলে ভ্যান কবে এল? মাধবী মুখোপাধ্যায় জানান, পায়ে হেঁটে কষ্ট হত। বয়সও বাড়ছিল। বেশি বাড়িতে গিয়ে সবজি বিক্রি করতেও পারতেন না। ফলে আদতে লাভের মুখ দেখতে পেতেন না। চলছিল না সংসারও। তখনই ভাবেন তিন চাকা এই যানের কথা।
বয়স হলেও ভ্যান চালানো দ্রুত শিখে নেন তিনি। তারপর থেকে ভ্যানই সওয়ারি। ব্যবহার ও হাসির জোরে এখন অনেকেই তাঁকে চেনেন। হাঁক পাড়তে হয় না সে অর্থে। সময় ধরে পৌঁছে যান, আর যা বিক্রি করেন তা নিয়েই খুশি হওয়ার চেষ্টা করেন।
সংসার চলে? প্রশ্নের উত্তরে অকপট শিকারোক্তি, 'না'। তাহলে এই কাজ করেন কেন? উত্তর একটাই, 'সংসারে আর যে কেউ করার নেই।'
বাড়িতে ছেলে-মেয়ে রয়েছে। তাঁরা এই মুহূর্তে উপার্জন করেন না। স্বামী পুজো করেন, তা দিয়ে চলে না। তাই সংসারের বোঝা কাঁধে নিয়ে রোজ খেটে চলেছেন তিনি। ওই যে সময় ধরে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যান, হাঁক পাড়তে হয় না! সময়ের অভাবেই তাই আর বেশি কথা বলতে পারলেন না। অনুমতি নিয়ে আবারও চওড়া হাসি দিয়ে ভ্যান চালিয়ে এগিয়ে গেলেন তিনি।
তাঁর লড়াই নিঃসন্দেহে বহু মানুষের কাছে অনুপ্রেরণা। নারীদিবসে মাধবীদের কুর্নিশ জানাচ্ছে দ্য ওয়াল।