শেষ আপডেট: 14th February 2025 10:53
নিজের হোয়াটসঅ্যাপ বায়োতে লিখে রেখেছেন, 'আমার ছোটবেলা'। ছোটবেলা মানেই দুরন্তপনা। স্মৃতি ও স্বপ্ন-জাগানিয়া সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাটানো সময়। সেই হারানো ধুলোমাখা দিনগুলো খুঁজে পেতে হন্যে হতে হয় আমাদের সকলকে। উপল সেনগুপ্তও বুঝি সেই রঙিন, ফেলে আসা দিনগুলো স্মৃতির ক্যানভাসে মেলে ধরতে চেয়েছিলেন। তাই কি? খোঁজ নিতে এক বদ্যিকে আর এক বদ্যি কিছু প্রশ্ন রাখলেন। নাড়াচাড়া করে দেখতে চাইলেন আঁকিয়ে উপলের 'পুঁচকি'বেলা। সঙ্গে পাওনা 'কুকি'।
চন্দ্রবিন্দুর গায়ক উপল সেনগুপ্ত গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের ছাত্র। ছবি আঁকতে ভালবাসেন। বহুদিন ধরে একটা ছোট্ট মেয়ে আর পোষ্য কুকুরছানাকে নিয়ে কার্টুন সিরিজ করছেন তিনি। আজ, ভালবাসার দিনে সেই জুটির নরম, তুলতুলে দিনযাপনেই উঁকি মারল দ্য ওয়াল।
'ছেলেমানুষ' উপল কি তবে তাঁর পুচকির মধ্যে নিজের শৈশব ধরে রাখতে চেয়েছেন? খোলসা করলেন নিজেই। উপলের কথায়, 'শুধু ছোটবেলা নয়, বড়বেলাতেও কিছু অভ্যেস থাকে যা ছেলেমানুষিতে ভরা। এই অভ্যেসগুলো খুব মজার। যেমন আমাদের ছোটবেলায় একটা পেন পাওয়া যেত যেখানে তিনটে রঙের রিফিল একসঙ্গে থাকত। একটা লাল, একটা নীল, সবুজ এরকম। তিনটে রিফিলই চাপ দিয়ে দেখতাম একসঙ্গে বেরোয় কিনা, বা কোনটা আগে বেরোয়। এরকম করার কোনও মানে নেই, কেন করবে লোকে? কিন্তু আমরা প্রত্যেকেই এরকম কিছু না কিছু করতাম। পরে বন্ধু-বান্ধবদের যখন জিজ্ঞেস করেছি, হ্যাঁ রে ছোটবেলায় তোরা এরকম ট্রাই করেছিস? সবাই বলেছে হ্যাঁ হ্যাঁ করেছি।'
এসব অদ্ভুত, ছোট ছোট, মিষ্টি মুহূর্ত আমাদের রোজকার জীবনের স্রোতে হারিয়ে যায়, যাকে আবারও খুঁজে পেতে উপল তৈরি করেছিলেন পুচকি সিরিজ। কীভাবে শুরু হল কুকুরছানা কুকির সঙ্গে পুচকির দিনলিপি?
স্রষ্টা বলতে শুরু করলেন, 'আমাদের বাড়ির পেছনের দিকের অন্য বাড়ির পাঁচিল লাগোয়া জায়গায় একটা কুকুর অনেকগুলো বাচ্চা দিয়েছিল। আমার স্ত্রী গার্গী ভীষণ কুকুর ভালবাসে। সকাল হলেই দু'জনে উঁকি মেরে ওই ছানাগুলোকে দেখতাম। কতটা বড় হল, কী করছে, কী খেলছে। সেই থেকেই আঁকা শুরু। তখন একটা মেয়ে চরিত্র তৈরি করলাম। ছানাগুলোর প্রতি গার্গীর যে স্নেহ, সেগুলোই কার্টুনের ওই মেয়েটার মধ্যে রাখতাম। যখনই তুমি সাবজেক্ট পেয়ে যাবে, সেই সিমিলার সাবজেক্টে একটার পর একটা ছবি অনায়াসে চলে আসবে। আমার ক্ষেত্রেও তাই হল। শুরুর দিকে পুচকিকে এরকম ঝুঁটিবাঁধা দেখতে ছিল না। পরে ধীরে ধীরে একটা পরিচিত মুখ হয়ে গেল। এ সবই এঁকে এঁকে স্টিকার করে বন্ধুদের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাতাম। তখনই আমার এক বন্ধু সময়িতা বলল, ওর নাম পুচকি দিলে কেমন হয়? তো সেই থেকেই মেয়েটা নিজের নাম পেল। আর আমার বাড়ির যে কুকুরটা ছিল, ওর নাম সত্যিই যেহেতু কুকি ছিল, তাই পুচকিও ওর বন্ধু কুকিকে পেয়ে গেল।'
পুচকি আর কুকিকে মুখে কিছু বলতে হয় না, হাবেভাবেই একে অপরের ভালবাসার দোসর হয়ে কাটিয়ে দিচ্ছে। নিজেরাই নিজেদের জন্য একটা সাধারণ দিনকে বিশেষ করে তুলছে।
পুচকি আর কুকি শুধু চরিত্র নয়। ওরা সচেতন নাগরিকও বটে। বৃষ্টি হলে ছাতায় জল জমিয়ে রাখে। হেলমেট পরে বাইকে চড়ে। পার্কে পড়ে থাকা নোংরা সাফ করে। যে কারণে তৎকালীন কসবা থানার ওসি দেবাশিস দত্ত এই জুটিকে নিয়ে নানা সচেতনতার পাঠও দিয়েছেন।
রাজ্যের শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের বহু প্রজেক্টে সুদেষ্ণা রায় হাঁটিহাঁটি পায়ে এগিয়ে এনেছেন উপলসৃষ্ট চরিত্রদের। শুধু দেশের মধ্যেই এই জুটি সীমাবদ্ধ নয়, বিদেশেও সমান জনপ্রিয়তা পেয়েছে পুচকি-কুকি। ইতালি ঘুরে সে দেশের কনস্যুলেটে বাহবা কুড়িয়েছে তারা।
অভিধান দেখলে উপল শব্দের মানে খুঁজে পাওয়া সহজ। কিন্তু কোথাও যেন শিল্পীর 'পাথুরে' নামের সঙ্গে একেবারেই তাঁর নিজের খেয়ালের সম্পর্ক নেই। নাকি আছে? তাঁর গান হোক বা আঁকা ছবি, সব ক্ষেত্রেই শক্ত প্রস্তরের চেয়ে বেশি করে প্রমাণ মেলে সহজ, সরল, নির্মল মনের। ঠিক উজ্জ্বল 'রত্নের' মতোই! আর আজকের দিবসযাপনের ছুতোয় ভালবাসার 'শিলা'লিপি তো বুঝে নেওয়াই যায়!
যদিও বড়বেলার 'ছেলেমানুষ' উপলের লালন করা পুচকি-কুকিকে আলাদা করে সে সব বলার বা লেখার দরকার পড়ে না। ওদের প্রতিটি দিনই প্রেমের, ভালবাসার, উদযাপনের। আজকের অন্ধকার সময়ে, গুলিয়ে যাওয়া পরিবেশে এই দুই চরিত্রের সহজপাঠ বড্ড জরুরি।