শেষ আপডেট: 25th January 2025 19:43
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কাশ্মীরের কেশর, নেপালের রুদ্রাক্ষ, থাইল্যান্ডের ড্রাগন ফল, অস্ট্রেলিয়ার অ্যাভোকাডো, ইতালির জলপাই ও মেক্সিকোর খেজুর— এই সবই এখন ফলছে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের কেশর পাহাড়ে। একসময় যেখানে সামান্য ঘাসও জন্মাত না, সেখানে আজ আস্ত বাগান। নানা প্রজাতির হাজার হাজার গাছ বেড়ে উঠছে। বহু মানুষ শীতে ভিড় জমান এখানে। এই পুরো বাগানটির একপ্রকার স্রষ্টা ড. শঙ্কর লাল গর্গ। যিনি বিশ্ব গবেষণা সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক।
২০১৫ সালে, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ড. গর্গ এবং তাঁর পরিবার একটি অনুর্বর পাহাড়কে বনাঞ্চলে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা ওই জমিটি কিনেছিলেন স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য, তবে তা সম্ভব হয়নি। তখনই জায়গাটিতে গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন। পরিবেশ প্রেমী হয়ে বনাঞ্চল গড়ার কাজ শুরু করেন। পরে একটানা গাছ লাগানো, তাদের পরিচর্যা, গ্রামবাসীদের মধ্যে গাছ নিয়ে সচেতনতার কাজ করা, তাদের মধ্যে গাছ সম্পর্কে ভাল ধারণা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করেন। টানা ৮ বছর এভাবে কাজ করার পর পাহাড়টি সবুজে ভরে ওঠে।
৮ বছর (২০১৬ থেকে ২০২৪) ধরে, ড. গার্গ প্রায় ৪০,০০০ গাছ লাগিয়েছেন, যার মধ্যে ৫০০-এরও বেশি প্রজাতির গাছ রয়েছে। কেশর, রুদ্রাক্ষ, আপেল, ড্রাগন ফল, জলপাই, লিচু, আফ্রিকান টিউলিপ, এলাচ ফুল এবং আরও অনেক কিছু গাছ রয়েছে এই পাহাড়ে।
কেশর পাহাড়ে নানা প্রকারের কাঠের গাছও রয়েছে। যেমন সেগুন, রোজউড, চন্দন, মেহগনি, বাঁশ, উইলো, দেবদারু, পাইন এবং সিলভার ওক। ওই বনাঞ্চলে থাকা ১৫,০০০টি গাছ ১২ ফুটেরও বেশি লম্বা হয়ে গেছে। চারা হিসেবে লাগানো ৯৫ শতাংশ গাছই বেঁচে যায় এখানে।
ড. শঙ্কর লাল গর্গ জানান, ২০২১ সালে প্রথমবার ২৫টি স্যাফরন ফুল ফোটে এখানে। পরে ২০২২-এ ১০০টি এবং ২৩-এ পাঁচ গুণ বেড়ে যায় ফলন।
কীভাবে এত গাছের পরিচর্যা করেন তিনি? ড. গর্গ জানান, গাছগুলির জন্য বিশেষ শীতল পরিবেশ তৈরি করেন প্রথমে এবং নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণ গাছ লাগান। জলের অভাব যাতে না হয় সেজন্য ট্যাঙ্কার ব্যবহার করেন। পরে, একটি পুকুর তৈরি করে সেখান থেকে জল সংগ্রহ করা হয়।
প্রাক্তন প্রধান শিক্ষকের লক্ষ্য আরও দশ হাজার গাছ বসানোর ওই এলাকায়। তিনি বলেন, 'পরিবেশ রক্ষা করুন, পৃথিবী রক্ষা করুন' এই তাঁদের স্লোগান। এখানে শুধুমাত্র গাছ লাগানো হচ্ছে পরিবেশ বাঁচছে নয়। বাচ্চাদের খেলার জায়গা রয়েছে। রয়েছে কনফারেন্স ও মেডিটেশন হলও। ড. গর্গ জানান, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণেও বিরাট ভূমিকা পালন করছে কেশর পাহাড়। ৩০টি প্রজাতির পাখি, ২৫ প্রজাতির প্রজাপতি, শিয়াল, নীলগাই, খরগোশ, বন্য শুয়োর ও হায়নাও রয়েছে এই পাহাড়ে।