শেষ আপডেট: 9th September 2024 18:32
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বঙ্গোপসাগরে নিম্পচাপ, আকাশের মুখ ভার কলকাতা-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গে। বাদ যাচ্ছে না উত্তরবঙ্গও। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে, তাই প্রথমেই যেটা খেতে ইচ্ছে করে তা হল খিচুড়ি। বাঙালির খিচুড়ি প্রেম নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই। তবে, জানেন কী, বাঙালির যত প্রেমই এই খাবারের সঙ্গে থাক, এই খাবার কিন্তু আদতে বাংলার নয়। খিচুড়ির ইতিহাস অনেক পুরনো।
মনসামঙ্গল কাব্য ও খিচুড়ি
এই কাব্য অনুযায়ী, স্বয়ং শিব ঠাকুর পার্বতীর কাছে যে খাবারের আবদার জানিয়েছিলেন তা হল 'বৈসাদৃশ্যময় উপকরণে তৈরি মিশ্র খাবার' অর্থাৎ খিচুড়ি। এখন এটা বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে তৈরি হয়।
খিচুড়ির ইতিহাস আসলে শতাব্দী প্রাচীন
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, গ্রীকদূত সেলুকাস উল্লেখ করেছেন, সেসময় চালের সঙ্গে ডাল মেশানো খাবার খুবই জনপ্রিয় ছিল। আল বেরুনির ভারততত্ত্বেও খিচুড়ির প্রসঙ্গ বাদ যায়নি। মরক্কোর ইবন বতুতাও খিচুড়ি নিয়ে কথা বলেছেন। চাণক্যের লেখা মৌর্যসম্রাট চন্দ্রগুপ্তের সময়কালে এর উল্লেখ মেলে। সপ্তদশ শতকে ভারত ভ্রমণকালে ফরাসী পরিব্রাজক তাভের নিয়ের লিখেছেন, সে সময় ভারতে প্রায় সব বাড়িতেই খিচুড়ি খাওয়ার রেওয়াজ ছিল নাকি।
মোঘল আমলের ইতিহাস খুঁজে দেখলে দেখা যাবে, আকবরের মন্ত্রী আবুল ফজল তাঁর আইন-ই-আকবরীতে নানা ধরনের খিচুড়ি তৈরির কথা বলেছেন। খিচুড়ির প্রতি ভালোবাসা ছিল জাহাঙ্গীরেরও। তাতে মিশত পেস্তা ও কিসমিস, ভালোবেসে নাম রেখেছিলেন 'লাজিজাঁ'। বিদেশেও উনিশ শতকে (১৮৩৭-১৯০১) খিচুড়ি ইংল্যান্ডের হেঁসেলে ঢুকে পড়েছিল। মোটামুটি উনিশ শতকের মাঝামাঝি মিশরীয়দের মধ্যে 'কুশারি' নামে একটি পদ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এটি তৈরি হত চাল, ডাল, চানা, ভিনিগার, টমেটো সস, পেঁয়াজ, আদা, রসুন দিয়ে। একে অনেকেই খিচুড়ি বলে।
বাংলায় খিচুড়ির প্রবেশ
মনে করা হয়, ১২০০-১৮০০ সালের মধ্যবর্তী কোনও এক সময়ে বাংলায় খিচুড়ি তৈরি শুরু হয়। আর তারপরই বাংলার অন্যতম পছন্দের তালিকায় নাম করে নেয় এই খাবার। নাম জড়ায় বহু নামী-গুনি মানুষের।
স্বামী বিবেকান্দের খিচুড়ি প্রেম
রামকৃষ্ণ দেবের সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে স্বামী বিবেকান্দ একটি পেটুক সংঘ চালাতেন। যার গবেষণার মূল বিষয় ছিল খিচুড়ি রাঁধার নতুন পথ। স্বামী বিবেকাননন্দর খিচুড়ি প্রেম এতোটাই ছিল যে বেলুড় মঠে দুর্গা পুজো প্রচলনের সময় খিচুড়ি ভোগ তাতে ঢোকানোর বেশিরভাগ ইচ্ছেই স্বামী বিবেকানন্দর ছিল। যারা এখানকার খিচুড়ি খেয়েছেন তারা অনেকেই বলেন বিশ্বের সেরা খিচুড়ি এখানেই তৈরি হয়।
স্বামী বিবেকানন্দর পরিকল্পিত খিচুড়িতে সম পরিমাণ চাল, মুগ ডাল ও সব্জি দেওয়া হয়। যেকোনও সব্জি। আর তার সঙ্গে টমেটো, আমড়া, কুমড়ো দিয়ে তৈরি চাটনি। এই খিচুড়ি ও চাটনি আবার বিশ্ববিখ্যাত। তার কারণ অবশ্যই স্বামীজি নিজে। এই খাবার তিনি বিদেশে গিয়েও বানাতেন। মশলা নিয়ে যেতেন বাড়ি থেকে। আর খিচুড়ির ডাল ফুরোলে, পাঠানো হত এখান থেকে।
শ্রী চৈতন্য ও খিচুড়ি
শ্রী চৈতন্যের এই খাবার খুবই পছন্দের ছিল। তাঁর ভোগও এই খাবারই। পুরীর মহাভোগও জগা-খিচুড়ি। মানে তালগোল পাকানো।
শোনা যায়, খিচুড়ি ভালোবাসতেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোসও। আর শুধু বাংলা নয়, বাংলার বাইরেও এই খাবার জনপ্রিয়। বিভিন্ন নামে এই খাবার বিভিন্ন এলাকায় পাওয়া যায়।