শেষ আপডেট: 16th April 2022 08:10
দ্য ওয়াল ব্যুরো: উনিশ তো দূর, বিশ শতকের গোড়াতেও গ্রামবাংলায় মেয়েদের মধ্যে অন্তর্বাসের প্রচলন হয়নি। শাড়ি হিসেবে এক টুকরো লম্বা কাপড়ই ছিল তাঁদের আভরণ (History Of Bra)। আলাদা করে বুক ঢাকার জন্য শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজের প্রচলন হয় অনেক পরের দিকে। তাও শহরের মেয়েদের মধ্যে ব্লাউজ পরার প্রবণতা ছিল বেশি (lingerie)। মূলত পাশ্চাত্য নারীদের দেখাদেখিই ব্লাউজ এবং পরে অন্তর্বাসের প্রচলন হয় এদেশের মেয়েদের মধ্যেও।
আজকাল বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে যে কোনও প্রাপ্তযৌবন মেয়ের কাছেই ব্রা অপরিহার্য। পোশাকের নীচে স্তনযুগলকে বাড়তি সুরক্ষা দেয় ব্রা। আন্ডারওয়্যার ব্রা, স্পোর্টস ব্রা, নার্সিং ব্রা কিংবা স্ট্র্যাপলেস ব্রা, রোজকার যাপনের সঙ্গে মানানসই ব্রা বেছে নেন মহিলারা। কিন্তু এই ব্রা-এর অতীতটা (History Of Bra) ঠিক কী?
সালটা ১৯১৪। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা সবে বেজে উঠেছে। সেই বছরই আমেরিকায় বিপ্লবটা ঘটে গেল প্রথম। দু’টুকরো রুমাল, এক ফালি ফিতে দিয়ে জামার ভিতরে পরার জন্য ছোটখাটো আরেকটা জামা বানিয়ে ফেললেন মার্কিন তরুণী মেরি ফেলপস জেকবস। পরে কারেসেস ক্রসবি নামেও পরিচিতি হয় তাঁর। বাড়ির পরিচারিকার সঙ্গে মিলে এই ডিজাইনটি তৈরি করেছিলেন মেরি। বিশ্বের প্রথম ব্রা বলা হয় এটাকেই।
আরও পড়ুন: দক্ষিণের গোলাপখাসে ছেয়ে গেছে বাজার! গরমের শুরুতে সে আমে মন ভরছে না মালদহের
ব্রা তৈরির বছর খানের পর এই ডিজাইন ১০০০ ডলারে বিক্রি করেন মেরি। মেয়েদের নতুন এই অন্তর্বাসে এরপরই বাজার ছেয়ে যায় হু হু করে।
এর আগে পাশ্চাত্যের মেয়েরা জামা কাপড়ের ভিতর যে অন্তর্বাস পরতেন তাকে বলা হত ওভারবাস্ট করসেটস (History Of Bra)। কোমর থেকে সোজা বুক পর্যন্ত উঠে আসা সেই অন্তর্বাস কাঁধের সঙ্গে জুড়ে থাকত দুটো ফিতের মাধ্যমে। এই করসেটস বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন বিক্রি নিষিদ্ধ হয়ে যায়। ব্রা আসার পর এই ধরনের পোশাকের জনপ্রিয়তাও কমে যায় অনেক।
সেই থেকে পথ চলা শুরু। এরপর যত দিন গেছে ব্রা তত রূপ বদলেছে। নারী শরীরের গঠন আরও স্পষ্ট, আরও জমাট স্বীকৃতি পেয়েছে ওই এক চিলতে কাপড়ে। ১৯২০-র দশক থেকেই ব্রা ফ্যাশনের জগতেও নাক গলাতে শুরু করে। নারী শরীরকে আধুনিক ফ্যাশনের ট্রেন্ডে খাপ খাওয়াতে ব্রা-এর জুড়ি নেই (History Of Bra)।
এই সময় থেকে চাহিদা অনুযায়ী ব্রা-এর উৎপাদনও বেড়েছে দ্রুত। ১৯২২ সালে তৈরি হয় মেডেনফর্ম ব্রেসিয়ার কোম্পানি। তারাই কাপ সাইজ চালু করেন ব্রা-তে। যা এখনও ব্যবহৃত হয়।
তবে প্রথমদিকে ব্রাগুলো ছিল একটাই কাপড়ে জোড়া। দুদিকে দুটো আলাদা আলাদা কাপ তৈরির ধারণা চালু হল ১৯৩০-এর পর। এই সময় নতুন ধরনের যে ব্রাগুলো তৈরি হল তার সঙ্গে আজকের আধুনিক ব্রা-এর মিল রয়েছে।
১৯৪৭ সালে হলিউডের ‘ফ্রেডরিক্স’-এর হাত ধরে পুশ-আপ ব্রা বাজারে এল। যিনি এই ব্রা তৈরি করলেন তাঁর নাম ফ্রেডরিক মেলিঙ্গার। তিনি এবং তাঁর বন্ধুরা নিজেদের স্ত্রীদের জন্য এই ধরনের ব্রা বানান। ব্রা ইন্ডাস্ট্রিতে পুরুষালি নজরের বহিঃপ্রকাশ পুশ-আপ ব্রা। পুরুষ যেভাবে মেয়েদের দেখতে চায়, স্তনের আকার স্বাভাবিকের চেয়ে আরও বড় করে দেখানোর সেই ভাবনা থেকেই এই ধরনের ব্রা-তে বাজার ছেয়ে গেছিল পঞ্চাশের দশকে। পশ্চিমে সে সময় পপ-কালচারও ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে।
একটা সময় আসে যখন মেয়েদের স্তনের আকার ব্রা-এর মাপকাঠিতে ফেলা হতে শুরু করে। এমনকি রোগা মেয়েদের তখন স্বাস্থ্যবতী হওয়ার পরামর্শও দেওয়া হত, এমনই ছিল পঞ্চাশ, ষাটের দশকের ইউরোপ, আমেরিকা।
১৯৬০-এর পর থেকে অবশ্য ব্রা-এর ধরনে আসে নতুন রকমের বদল। এই সময়ে ব্রা-তে রঙবেরঙের ডিজাইন, প্রিন্ট আসতে শুরু করে। প্যান্টির সঙ্গে ম্যাচিং ব্রা দিয়ে অন্তর্বাসের সেটও বিক্রি শুরু হয় পশ্চিমের বাজারে।
১৯৭৭-এ এসে ব্রা-এর ইতিহাস মোড় ঘুরল। লিসা লিন্দাহি বানিয়ে ফেললেন প্রথম স্পোর্টস ব্রা। খেলাধুলোয় মেয়েদের আরও বেশি করে উৎসাহ দেওয়ার ভাবনা থেকে স্পোর্টস ব্রা তৈরি। তবে আজকাল যে কেউ সারাদিনের দৌড়ঝাঁপের কাজে এই ধরনের ব্রা পরতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। ওই বছরই রয় রেমণ্ড স্থাপন করেন ‘ভিক্টোরিয়াস সিক্রেট’ নামের ব্রা ব্র্যান্ড।
একুশ শতকে পা দিয়ে ব্রা-এর আরও একগুচ্ছ নতুন ব্র্যান্ড বাজারে এসেছে। ব্রা-এর স্টাইল, ফেব্রিক, কাপের ছড়াছড়ি এখন। অঢেল বিকল্পের মধ্যে থেকে নিজের জন্য পছন্দের ব্রা-টি খুঁজে নিতে পারেন মহিলারা।
তবে ‘ফ্রি দ্য নিপল’ মুভমেন্টের মাধ্যমে ব্রা পরিত্যাগের ডাকও আজকাল দিচ্ছেন কেউ কেউ। ডাক্তাররাও বলছেন খুব প্রয়োজন না হলে স্তনযুগলকে আলাদা করে ব্রা-এর বন্ধনীতে আবদ্ধ করে রাখার প্রয়োজন নেই। দেহের স্বাভাবিক অঙ্গের মতোই তাও মুক্ত করে দেওয়া উচিত। স্তন ক্যানসারের কারণ হিসেবেও ব্রা-কে দায়ী করেন কেউ কেউ। তবে দিনের শেষে মেয়েরা ব্রা পরে তাদের নিজেদের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্যেই। পুরুষের চাহনি এড়িয়ে তাতে স্বচ্ছন্দেঘুরে বেড়ানো যায়।