শেষ আপডেট: 14th April 2025 18:32
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ইতিহাসের গর্ভ থেকে উঠে আসা, ভারতের এক রাজকীয় রত্ন আবার বিশ্বমঞ্চে আলো ছড়াতে চলেছে। গোলকোন্ডা ব্লু। জানা যাচ্ছে, বিরল ও উজ্জ্বল নীল এই হীরকখণ্ড একসময় ইন্দোর ও বরোদার মহারাজাদের গয়নার শোভা ছিল। আগামী ১৪ মে সুইজারল্যান্ডের জেনিভায় 'ক্রিস্টি’স-এর ‘Magnificent Jewels’ নিলামে উঠতে চলেছে সেটি। এই হিরের সম্ভাব্য দাম ধরা হয়েছে ৩৫ থেকে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩০০ কোটি থেকে ৪৩০ কোটি টাকা।
২৩.২৪ ক্যারাট ওজনের এই হিরেটি এখন খ্যাতনামা গয়নাশিল্পী জার-এর তৈরি একটি আধুনিক রিং-এ সেট করা আছে। 'ক্রিস্টি’স-এর আন্তর্জাতিক জুয়েলারি প্রধান রাহুল কাদাকিয়া বলেন, 'রাজকীয় ঐতিহ্য, অসাধারণ রং এবং দুর্লভ আকৃতির জন্য গোলকোন্ডা ব্লু নিঃসন্দেহে বিশ্বের অন্যতম বিরল নীল হীরে।'
গোলকোন্ডা হীরার ইতিহাস বহু প্রাচীন। চতুর্থ শতাব্দীর এক সংস্কৃত পাণ্ডুলিপিতে গোলকোন্ডার হিরের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। ৩২৭ খ্রিস্টপূর্বে আলেকজান্ডার ভারতে আসার সময়ে এই ধরনের হিরে ইউরোপে নিয়ে যান। এরপর ১২৯২ সালে মার্কো পোলো তাঁর ভ্রমণবৃত্তান্তে ভারতের হিরের সৌন্দর্য বর্ণনা করেন।
গোলকোন্ডার খনিগুলি থেকে একসময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত কয়েকটি হিরের আঁতুড়ঘর ছিল। তার মধ্যে কোহিনূর এবং হোপ ডায়মন্ডও আছে।
সেখানকার নির্দিষ্ট এই নীল হিরেটি একসময় ইন্দোরের মহারাজা যশবন্ত রাও হোলকর ২-এর সংগ্রহে ছিল। ১৯২৩ সালে ফরাসি গয়নাশিল্পী শোমে এই হিরেটি একটি ব্রেসলেটে বসান। পরে তাঁর সহকারী সেটি ‘ইন্দোর পিয়ার্স’ নামে খ্যাত আরও দুই গোলকোন্ডা হিরের সঙ্গে জুড়ে একটি বিশাল নেকলেসে পরিণত করেন।
এই নেকলেসটি আবার ফরাসি শিল্পী বার্নার্ড বুটে দ্য মনভেলের আঁকা ইন্দোরের মহারানির একটি বিখ্যাত প্রতিকৃতিতেও দেখা যায়, যা সেই সময়ের ভারতীয় রাজকীয়তা এবং ইউরোপীয় শিল্পরুচির মেলবন্ধনের প্রতীক।
১৯৪৭ সালে এই হিরেটি আমেরিকায় চলে যায়। কিংবদন্তি জুয়েলারি ব্যবসায়ী হ্যারি উইনস্টন এটিকে একটি ব্রোচে রূপান্তরিত করেন, যার সঙ্গে একটি সমান ওজনের সাদা হিরেও জোড়া হয়েছিল। পরে এই রত্নটি আবার ভারতীয় রাজপরিবারের বরোদার রাজপরিবারের হাতে আসে। সেখান থেকে এটি ব্যক্তিগত সংগ্রহে পৌঁছায়।
এখন, জেনিভায় ক্রিস্টি’সের যে নিলাম অনুষ্ঠিত হবে, হীরেটি সেখানে আবার এক নতুন ইতিহাস রচনা করবে বলেই মনে করছেন সকলে।
এই হিরেটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হিরের অন্যতম, তবে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ‘ফ্যান্সি ভিভিড ব্লু’ হিরে হচ্ছে হোপ ডায়মন্ড, যার ওজন ৪৫.৫২ ক্যারাট এবং এটি এখন আমেরিকার একটি মিউজিয়ামের সংগ্রহে রয়েছে।
গোলকোন্ডা ব্লু-এর আগে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়া নীল হিরের তালিকায় রয়েছে, ওপেনহাইমার ব্লু (১৪.৬২ ক্যারাট), যা ২০১৬ সালে ক্রিস্টি'স-এর জেনিভা নিলামে ৫৭.৫ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়। এর পরেই রয়েছে ১৫.১০ ক্যারাটের ডে বিয়ার্স ব্লু হিরে, যেটি ২০২২ সালে সোথেবি’স হংকং নিলামে ৫৭.৪ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়।
তবে গোলকোন্ডা ব্লু হিরেটি শুধুমাত্র এক বিরল রত্ন হিসেবেই আদৃত নয়, এটি ভারতের রাজকীয় অতীত, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং বিশ্ব হিরেব্যবসার এক জ্যোতির্ময় প্রতিনিধিও। আগামী ১৪ মে হিরের নিলামে গোলকোন্ডা হিরে হয়তো এক নতুন অধ্যায় রচনা করবে রত্নের ইতিহাসে।