শেষ আপডেট: 14th March 2025 18:26
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দোল বা হোলি রঙের উৎসব। গোটা দেশ এই একটা দিন রং খেলায় মাতে। কোটি কোটি মানুষ যে দেশে থাকেন, সেখানে হাজার খানেক নিয়ম দেখতে পাওয়া যাবে এটা তো স্বাভাবিক। সেই নিয়ম নিয়েই আজকের এই প্রতিবেদন। ভারতের এমন কিছু গ্রাম আছে, এই উৎসব একদম অন্যরকম ভাবে পালিত হয়। কোথাও পুরুষদের প্রবেশ নিষিদ্ধ তো কোথাও আবার বন্দুকের গর্জনেই শুরু হয় উৎসব।
মহিলাদের জন্য বিশেষ হোলি পালিত হয় নাগর, রাজস্থানে
রাজস্থানের নাগর গ্রামে হোলি শুধুই নারীদের উৎসব। ৫০০ বছর পুরনো প্রথা অনুযায়ী, হোলির দিনে পাঁচ বছরের বেশি বয়সি সমস্ত পুরুষকেই গ্রাম ছাড়তে হয়। তারা গ্রামের বাইরে এক মেলায় যোগ দেন ও ভক্তিমূলক অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
এই দিনে পুরো গ্রাম মহিলাদের দখলে চলে যায়। তাঁরা রং খেলেন, নাচেন, এমনকি পুরুষদের পোশাক পরেও আনন্দ করেন। আগে কোনও পুরুষ যদি গ্রামে ভুল করেও থেকে যেতেন, তাঁকে শাস্তি দেওয়া হত। আজও কেউ এই নিয়ম ভাঙলে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে পরের দিন, সব মহিলা-পুরুষ মিলে হোলি উদযাপন করেন। যেখানে মজার ছলে মহিলারা অনেক সময় পুরুষদের চাবুক দিয়ে আঘাত করেন।
বারুদের হোলি পালিত হয় মেনার, রাজস্থানে
উদয়পুরের কাছে মেনার গ্রামে রং নয়, বন্দুক আর তলোয়ারের ঝলকানিতে হোলি উদযাপন করা হয়। ৪০০ বছরের পুরনো এই প্রথা ‘বারুদের হোলি’। কথিত আছে মুঘলদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ইতিহাসের স্মারক এই আয়োজন।
হোলির পরেরদিন ‘জমরা বিজ’ নামে পরিচিত। এই দিন, পুরুষরা ‘গৈর’ নৃত্য করেন, হাতে থাকে তলোয়ার ও লাঠি। মহিলারা গান গেয়ে তাঁদের উৎসাহিত করেন। ছোড়া হয় গুলি, রাতভর চলতে থাকে। সবশেষে, মহিলারা জল ঢেলে আগুন নেভান, যা যুদ্ধের অবসানের প্রতীক।
বাগেশ্বর, উত্তরাখণ্ড: যেখানে হোলি নিষিদ্ধ
উত্তরাখণ্ডের বাগেশ্বর জেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে হোলি উদযাপন একেবারেই নিষিদ্ধ। স্থানীয়দের বিশ্বাস, হোলি পালন করলে দেবতার অভিশাপ নেমে আসতে পারে। হতে পারে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, ছড়িয়ে পড়তে পারে রোগব্যাধি।
তাই বহু প্রজন্ম ধরে এক ফোঁটা রংও ব্যবহার হয় না ওই এলাকায়। কোনও গান বাজে না, এমনকি তিলকও কেউ পরেন না। অনেকে বলেন, ৯০ বছর আগে একটি পবিত্র পতাকা চুরি যাওয়ার পর থেকে অনেক গ্রামেই হোলি বন্ধ হয়ে যায়। আজও কেউ এই রীতি ভাঙতে চাইলে তাকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দেওয়া হয়।
আগুনের উপর দিয়ে হাঁটা, পালিত হয় রাজস্থানের কোকাপুরে
ডুঙারপুর জেলার কোকাপুর গ্রামে হোলির অন্যতম আকর্ষণ ‘আগুনের উপর হাঁটা’। হোলিকা দহনের পর, কয়েকজন সাহসী গ্রামবাসী পুড়ে যাওয়া কয়লার উপর দিয়ে খালি পায়ে হাঁটেন।
এই প্রথা দীর্ঘদিন ধরে পালিত হয়ে আসছে এবং বিশ্বাস করা হয় এটি সৌভাগ্য ও সুস্বাস্থ্য বয়ে আনে। অংশগ্রহণকারীরা মনে করেন, যদি মন পবিত্র হয়, তবে আগুন তাদের কোনও ক্ষতি করবে না। ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও, এই ঐতিহ্য এখনও অটুট।
আগেভাগে হোলি, পালিত হয় সেমরা ছত্তীসগড়ে
ছত্তীসগড়ের সেমরা গ্রামে হোলি পালন করা হয় ভারতের অন্যান্য জায়গার চেয়ে এক সপ্তাহ আগে। শুধু হোলিই নয়, দিওয়ালি ও হরেলির মতো উৎসবও তাঁরা আগে পালন করেন।
এর পিছনের কারণ স্পষ্ট নয়, তবে স্থানীয়দের বিশ্বাস, এটি তাঁদের দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে। হোলি উদযাপন শুরু হয় সরদার দেব মন্দিরে পুরুষদের বিশেষ প্রার্থনা দিয়ে। এরপর শুরু হয় রং খেলা।