সুপ্রিম কোর্ট একাধিক রায়ে বলেছে, নিজের সঙ্গী বেছে নেওয়ার অধিকার একজন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের মৌলিক অধিকার।
প্রতীকী ছবি
শেষ আপডেট: 5 July 2025 07:52
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মেঘালয় হানিমুনে গিয়ে স্বামী রাজা রঘুবংশীকে খুনের ঘটনায় সোনম রঘুবংশী এবং তার প্রেমিক রাজ কুশওয়াহার গ্রেফতারির ঘটনা গোটা দেশে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে। তদন্তে উঠে আসে সোনমের ইচ্ছের বিরুদ্ধে বাড়ির লোক রাজার সঙ্গে তার বিয়ে দিয়েছে।
এছাড়াও ভারতের আনাচে কানাচে এমন অনেক ঘটনা ঘটে, যা সবসময় প্রচারের আলোয় আসে না। কিন্তু ভারতে এই ধরনের বিয়ের ক্ষেত্রে বর-কনে বা দু’জনের সুবিধার্থেই বেশ কিছু আইনি অধিকার রয়েছে।
ভারতের আইন ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর করে বিয়ের বিষয়ে কী বলছে?
সুপ্রিম কোর্ট একাধিক রায়ে বলেছে, নিজের সঙ্গী বেছে নেওয়ার অধিকার একজন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের মৌলিক অধিকার। কোনও প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা বা পুরুষকে যদি জোর করে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়, তাহলে তাঁরা পুলিশের কাছে সুরক্ষা চাইতে পারেন। এছাড়াও, রাজ্য মানবাধিকার কমিশন বা মহিলা কমিশনের সাহায্য নেওয়া যায়।
যদি কোনও মহিলাকে অপহরণ বা ভয় দেখিয়ে বিয়েতে বাধ্য করা হয়, তাহলে ভারতীয় দণ্ডবিধি (ভারতীয় ন্যায় সংহিতা) - ধারা ৮৭ অনুযায়ী মামলা দায়ের করা যায়। এর সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড।
নাবালকদের ক্ষেত্রে আইন আরও কড়া। ভারতে প্রিভেনশন অফ চাইল্ড ম্যারেজ অ্যাক্ট (২০০৬) অনুসারে, ১৮ বছরের নিচে কোনও মেয়ের বা ২১ বছরের নিচে কোনও ছেলের বিয়ে দেওয়া সম্পূর্ণ অবৈধ। এই আইন সমস্ত ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য।
যদি কোনও নাবালক বা নাবালিকার বিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে শুধুমাত্র তাদের পরিবার নয়, তাদের প্রতিবেশী, শিক্ষক কিংবা বন্ধুও পুলিশে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। এই ক্ষেত্রে স্থানীয় থানায়, জেলা চাইল্ড ম্যারেজ প্রিভেনশন অফিসারের কাছে বা জেলা পুলিশের জুভেনাইল জাস্টিস ইউনিটে অভিযোগ করা যেতে পারে। আইন অনুযায়ী, প্রশাসনের এই বিয়ে আটকানোর প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে।
অপরাধ হিসেবে শাস্তির পরিধি কী?
যদি কোনও নাবালক বা নাবালিকার বিয়ে হয়ে যায়, তাহলে তার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে চাইল্ড ম্যারেজ অ্যাক্ট, ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (BNS), পকসো আইন (POCSO), জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্টের মতো একাধিক আইনের সাহায্যে পদক্ষেপ করা যেতে পারে।
বিয়ের আচার-অনুষ্ঠানে যুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ, কনে ও বরের বাবা-মা ও অন্যান্যদের দুই বছরের জেল ও জরিমানা পর্যন্ত হতে পারে।
যদি নাবালিকা কনেকে যৌন সম্পর্কের জন্য বাধ্য করা হয়, তবে স্বামীর বিরুদ্ধে পকসো আইনে ১০ বছরের জেল হতে পারে। এক্ষেত্রে ‘বৈবাহিক ধর্ষণের’ যে ছাড় ভারতীয় আইনে দেওয়া হয়েছে, তা প্রযোজ্য নয়, কারণ কনে ১৮ বছরের কম। সেক্ষেত্রে স্বামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত দেওয়া যেতে পারে। স্বামীর পরিবারের সদস্যরাও শিশু ধর্ষণে প্ররোচনা বা অবহেলার জন্য দায়ী হতে পারেন। জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট অনুযায়ী, অভিভাবকের অপরাধের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এই বিয়ের পরিণতি কী?
২০০৬ সালের আইন কার্যকর হওয়ার পর, কোনও চাইল্ড ম্যারেজ আইনত রেজিস্টার করা যায় না, যদি না তারা দু’জনেই প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর ওই বিয়ে চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
এমন বিয়ের ক্ষেত্রে বিয়ের সময় অভিযোগ না জানালেও, মেয়ে বা ছেলে চাইলে জেলা আদালত, পুলিশ বা চাইল্ড ম্যারেজ প্রিভেনশন অফিসারের কাছে গিয়ে বিয়ে বাতিল করার মামলা করতে পারে। এক্ষেত্রে আদালত nullity decree অর্থাৎ বিয়ে বাতিলের আদেশ দিতে পারে।
যদি মেয়েটিকে অপহরণ, ভয় দেখানো বা প্রতারণা করে বিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে সেই বিয়েটি আইন অনুযায়ী একেবারেই অকার্যকর (void) বলে গণ্য হবে। এমন বিয়ে বাতিল হলেও, মেয়েটি ও তার সন্তানের খোরপোশ পাওয়ার অধিকার থাকে। স্বামীর পরিবারকে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী খরচ বহন করতে হয়। মেয়েটির আবার বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত মাসিক খরচ দিতে হয় এবং সন্তানেরাও বাবার সম্পত্তিতে অধিকারী হবে।