শেষ আপডেট: 8th April 2025 12:07
দ্য ওয়াল ব্যুরো: প্রযুক্তি আর বিজ্ঞান যেন ফিরিয়ে আনছে হিমযুগের অতীত। আজ থেকে ১০ হাজার বছর আগে যেসব ভয়ংকর শিকারি উত্তর আমেরিকার বিস্তীর্ণ তৃণভূমিতে রাজত্ব করত, সেই ডায়ার উলফের ছায়া আবার ফিরল এ সময়ে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি জিন প্রকৌশল সংস্থা ‘Colossal Biosciences’-এর বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এমন তিনটি নেকড়ে শাবকের জন্ম দিয়েছেন, যাদের চেহারা অবিকল ডায়ার উলফের মতো। অর্থাৎ সেই প্রাগৈতিহাসিক শিকারি নেকড়ে, যারা বহু বছর আগেই পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। এই শাবকগুলির বয়স তিন থেকে ছ'মাসের মধ্যে। বর্তমানে তারা আমেরিকার একটি সুরক্ষিত গবেষণাকেন্দ্রে রয়েছে।
ডায়ার উলফ ছিল আধুনিক গ্রে উলফের তুলনায় অনেক বড় এবং শক্তিশালী। তারা ১০ হাজার বছর আগে উত্তর আমেরিকায় বিচরণ করত। এখন যে সব ধূসর নেকড়ে দেখা যায়, তাদের তুলনায় ডায়ার উলফের শারীরিক গঠন ও আচরণে ছিল অনেক বেশি হিংস্র এবং তাদের সক্ষমতাও ছিল অনেক বেশি।
Colossal Biosciences-এর গবেষকরা জিন বিশ্লেষণ করেছেন ১৩ হাজার বছরের পুরনো একটি দাঁতের জীবাশ্ম থেকে, যা ওহায়োতে পাওয়া গিয়েছিল এবং আরও একটি ৭২ হাজার বছরের পুরনো খুলি, যা খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল আইডাহোতে। এই প্রাচীন নমুনাগুলি আমেরিকার বিভিন্ন জাদুঘরে সংরক্ষিত ছিল। সেখান থেকে প্রাপ্ত ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে গবেষকরা নির্ধারণ করতে পেরেছেন ডায়ার উলফের কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনগত বৈশিষ্ট্য।
এরপর CRISPR জিন-সম্পাদনা প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা আধুনিক গ্রে উলফের রক্তকণিকায় ২০টি নির্দিষ্ট জায়গায় পরিবর্তন আনেন। এই সংশোধিত কোষগুলিকে কুকুরের ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিয়ে, গর্ভধারণের জন্য গৃহপালিত কুকুরকে 'সারোগেট' হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ৬২ দিন গর্ভধারণের পর জন্ম নেয় এই তিনটি জিনগতভাবে পরিবর্তিত শাবক, যাদের চেহারায় ডায়ার উলফের সঙ্গে অদ্ভুত মিল।
The first dire wolf howl in over 10,000 years pic.twitter.com/Z4PSKdjzYI
— Nature is Amazing ☘️ (@AMAZlNGNATURE) April 7, 2025
যদিও এদের চেহারা ডায়ার উলফের মতো হলেও, আচরণে তারা তেমন হবে না বলেই জানাচ্ছেন Colossal-এর চিফ অ্যানিমেল কেয়ার বিশেষজ্ঞ ম্যাট জেমস। তিনি বলেন, 'বিশাল বড় কোনও হরিণকে কীভাবে দ্রুত শেষ করে ফেলতে হয়, ওরা সম্ভবত কোনওদিনই শিখবে না সেটা। কারণ সেই শিকার-প্রক্রিয়া শেখার জন্য প্রয়োজন বন্য ডায়ার উলফ বাবা-মার কাছে বড় হয়ে ওঠা, যা এখানে সম্ভব নয়।'
অর্থাৎ, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণে দেখা যাচ্ছে, এই শাবকগুলির মধ্যে শুধুমাত্র বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে, প্রজাতিগত আচরণ বা অভ্যাস নয়।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের রিপোর্ট অনুযায়ী, গবেষণার সঙ্গে যুক্ত না থাকা একাধিক বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, এই ধরনের গবেষণার ফলে এখনও পর্যন্ত প্রকৃত অর্থে বিলুপ্ত প্রজাতিকে সম্পূর্ণভাবে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। University at Buffalo-র জীববিজ্ঞানী ভিনসেন্ট লিঞ্চ বলেন, 'এখন আমরা যা করতে পারি, তা হল কাউকে কারও মতো দেখতে বানানো। কিন্তু সেটি কখনই সম্পূর্ণ নতুন জীবন দেওয়া নয়।'
Colossal Biosciences ইতিমধ্যেই আরও বেশ কয়েকটি বড়সড় প্রকল্প ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে রয়েছে লুপ্তপ্রায় ম্যামথ, ডোডো ও অন্যান্য প্রজাতিকে জেনেটিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা। এছাড়াও সংস্থাটি সম্প্রতি চারটি রেড উলফ ক্লোন করেছে, যেগুলি বিপন্ন প্রজাতির প্রতিনিধি হিসেবে খুব কম সংখ্যায় রয়েছে আমেরিকার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে।