শেষ আপডেট: 3rd October 2022 10:15
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পুরাণে বলা হয়েছে দেবী দুর্গাকে বাহন হিসেবে সিংহ উপহার দিয়েছিলেন স্বয়ং হিমালয়রাজ। মনে করা হয়, পশুরাজ সিংহ আসলে দেবীর প্রবল শৌর্য,তেজ ও আভিজাত্যের প্রতীক। মহিষাসুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অশুভ শক্তির প্রতীক মহিষকে আক্রমণ করেছিল এই সিংহ। দেবী দুর্গার বাহন সেই মহাতেজা সিংহই না কি একবার গিলে খেয়েছিল এক গৃহস্থ ঘরের বউকে। প্রমাণস্বরূপ আজও সিংহের মুখে লেগে থাকে, সেই বধূটির শাড়ির আঁচলের টুকরো।
একেবারে শুরুর দিকে দেবী দুর্গার হাতে না ছিল অস্ত্র, না ছিল দশটি হাত– দুই হাতেই শত্রু নিধন করতেন তিনি। ক্রমে হাতের সংখ্যা যেমন বাড়তে থাকলো, তেমনই তাঁর অস্ত্রের সংখ্যাও বাড়তে থাকলো। দশটি হাতে দশ রকম অস্ত্রে সজ্জিতা হলেন দেবী। বাহন হয়ে এল সিংহ। উত্তর ভারতের অনেক জায়গায় আবার দেবীর বাহন বাঘ। বাংলার প্রাচীন মূর্তিগুলিতে দেখা যায় দেবীর বাহন ঘোড়ার মতো দেখতে একটি পশু যার মুখটা সিংহের মতো। বাংলাদেশের নানা প্রান্তে দেবী দুর্গাকে নিয়ে প্রচলিত গল্পকথার পাশাপাশি তাঁর বাহন সিংহকে নিয়েও নানা লোকশ্রুতি রয়েছে। তেমনই এক আশ্চর্য কাহিনি চালু আছে উত্তর ২৪ পরগনার ধান্যকুড়িয়ার সাহু-দেব বাড়ির দুর্গাপুজোয়। (Dhanyakuria Durga Puja)
এই সাহুরা একসময় ছিলেন ধান্যকুড়িয়ার জমিদার। কথিত আছে বহু বছর আগে এই বাড়ির এক বউ পুজোর দিন সন্ধের সময় এলোচুলে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। কিন্তু সন্ধের পর থেকে অদ্ভুতভাবে হারিয়ে যায় ঐ বধূ। যেন কর্পূরের মতো মিলিয়ে যায়। সারারাত খোঁজাখুঁজি চালিয়েও তার সন্ধান মেলে না। ভোরের দিকে দুর্গামণ্ডপে এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখে কেঁপে ওঠেন গ্রামবাসীরা। দেখা যায়, দেবীর বাহন সিংহের মুখে লেগে রয়েছে একটুকরো কাপড়ের আঁচল। এই কাপড় যে আগের রাত্রে হারিয়ে যাওয়া ওই বধূটির শাড়ি তা চিনে নিতে দেরি হয়নি। বধূটির অন্তর্ধান আর সিংহের মুখে শাড়ির অংশ - সব মিলিয়ে গ্রামবাসীরা ধরে নেন, কোনও অজানা অপরাধ করে ফেলার ফলে দেবীর বাহন সিংহ গিলে খেয়েছে ওই বধূটিকে।
এর পেছনের রহস্য আজও অজানা। সত্যি সত্যি মাটির সিংহ জলজ্যান্ত এক মহিলাকে গিলে খেতে পারে কি? আপাতভাবে যতই হাস্যস্পদ লাগুক, ধান্যকুড়িয়ার লোকজন আজও বিশ্বাস করে এই জনশ্রুতিতে। এবং প্রতি বছর দুর্গাপুজোর সময় সেই ঘটনার স্মরণে দেবীর বাহন সিংহের মুখে শাড়ির একটা টুকরো লাগিয়ে দেওয়া হয়।(Dhanyakuria Durga Puja) ধান্যকুড়িয়ার সাহু দেব বাড়িতে এই প্রথা চলে আসছে আজও।