শেষ আপডেট: 3rd December 2022 10:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: তাকে নাকি আর পাঁচজনের থেকে আলাদা দেখতে। 'অন্যরকম' দেখতে মেয়েকে আশ্রয় দেননি স্বয়ং বাবা-মাও। তাই জন্মের পরেই একরত্তি মেয়ের ঠাঁই হয়েছিল অনাথ আশ্রমে (Abandoned by parents)। কে জানত, যে রূপের কারণে মা-বাবার চক্ষুশূল হতে হয়েছিল, পরিবার-পরিত্যক্তা মেয়ের জীবনে সেই রূপই আশীর্বাদ হয়ে নেমে আসবে!
এ গল্প চিনের জুলি অ্যাবিং-এর (Xueli Abbing)। যদিও জুলি তাঁর বাবা-মার দেওয়া নাম নয়। তাঁরা আদৌ নাম দিয়েছিলেন কিনা, তাই বা কে জানে! অনাথ আশ্রমে ঠাঁই হওয়ার পর মেয়ের আশ্চর্য রূপ দেখে সেখানকার লোকজনই নাম রেখেছিলেন 'জুলি।' চিনা ভাষায় জু (xue) শব্দের অর্থ তুষার শুভ্র। লি (Li) শব্দের অর্থ হল সুন্দর। দুইয়ে মিলে, তুষারের মতো শুভ্র সুন্দরী।
মানানসই নাম রেখেছিলেন তাঁরা। আসলে জুলি 'অ্যালবিনিজম' (albinism) নামে এক ধরনের জিনগত সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন, যার কারণে ত্বকের বাদামী রঙের জন্য দায়ী রঞ্জক মেলানিন তৈরি হয় না। সেই কারণেই জুলির গায়ের রং ছিল বরফের মত সাদা। শুধু ত্বক নয়, তাঁর চুল, ভ্রু এবং চোখের পাতাও সাদা রংয়ের। সমস্যার কারণে জুলির দৃষ্টিশক্তিও বাকিদের তুলনায় ক্ষীণ। সাধারণ সমাজে জুলির এই রূপ 'অদ্ভুত' তো বটেই, সেই সঙ্গেই এই রূপের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে হাজার কুসংস্কার। যেমন, অনেক জায়গায় মনে করা হয় অ্যালবিনিজমে আক্রান্তদের হাড় ঔষধি গুণযুক্ত। সেই কারণে বহু জায়গায় 'শিকার' করা হয় ফ্যাকাশে চামড়ার এই মানুষদের।
জুলি অবশ্য মনে করেন, তাঁর কপাল অতটাও মন্দ না। তাই বিষয়টা শুধু মা-বাবা দ্বারা পরিত্যক্ত হওয়াতেই শেষ হয়েছে। চিনের ওই অনাথ আশ্রম থেকে নেদারল্যান্ডের এক দম্পতি দত্তক নেন জুলিকে। তাঁদের কাছেই পরম যত্নে বড় হয়েছেন জুলি। এখন তাঁর বয়স ১৬ বছর। যখন জুলির বয়স মাত্র ১১ বছর, তখন হংকংয়ের একজন ডিজাইনারের কাছ থেকে ফটোশ্যুটের প্রস্তাব আসে জুলির কাছে। ওই ডিজাইনার জানান, সৌন্দর্যের বিভিন্ন রকমের সংজ্ঞা তিনি তুলে ধরতে চান পৃথিবীর মানুষের কাছে। এরপরেই হংকংয়ে তাঁর ফ্যাশন শোতে প্রথমবার হাঁটেন 'মডেল' জুলি। সেই অভিজ্ঞতাই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
এরপরেই আসতে থাকে একের পর এক মডেলিং-এর প্রস্তাব। লন্ডনের একজন চিত্রগ্রাহক জুলিকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে জুলির বেশ কিছু ছবি তোলেন তিনি, যা ২০১৯ সালে পৃথিবীবিখ্যাত ম্যাগাজিন 'ভোগ ইতালিয়া'র (Vogue Italia) জুন সংখ্যায় জায়গা করে নেয়।
দুর্দান্ত জনপ্রিয়তা পায় জুলির সেইসব ছবি। 'তখন তো আমি জানতামও না, এই ম্যাগাজিনটি ঠিক কতখানি গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ কেন এই নিয়ে এত উত্তেজিত তা বুঝতে আমার বেশ খানিকটা সময় লেগেছিল,' জানিয়েছেন জুলি।
'অনেক মডেল আছেন যাঁদের উচ্চতা ৮ ফুট, চেহারা ছিপছিপে। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতাসম্পন্ন, অন্যরকম বাহ্যিক চেহারার মানুষকে এখানে দেখতে পাওয়ার অনুভূতি দারুণ। তবে এটা আরও স্বাভাবিক হওয়া উচিত,' দাবি জুলির।
'আমার কাছে বাহ্যিক রূপের বদলে মানুষের ভেতরের সৌন্দর্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। হতে পারে আমি যেহেতু সবকিছু স্পষ্টভাবে দেখতে পাই না, তাই আমি মানুষের কণ্ঠস্বর এবং তাদের বক্তব্যের উপর বেশি জোর দিই,'একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন জুলি।
অ্যালবিনিজমে আক্রান্ত মানুষদের প্রতি বাকি পৃথিবীর দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে চান জুলি। 'মডেলিং-এর মাধ্যমেই আমি অ্যালবিনিজম নিয়ে কথা বলতে চাই। আমি বোঝাতে চাই, এটা শুধুই একটা জিনগত সমস্যা, কোনও অভিশাপ নয়। এটা নিয়ে কথা বলার সময় মানুষ উল্লেখ করে দেয়, "ওই যে যার অ্যালবিনিজম আছে।" কিন্তু বিষয়টা তো তা নয়। যেন অ্যালবিনো হওয়াটাই আমার একমাত্র পরিচয়!' দাবি ষোলো বছরের কিশোরীর।
'অ্যালবিনো হওয়ার কারণে অনেক শিশুকে হত্যা করা হয়। আমি সেটা বদলাতে চাই,' জানিয়েছেন সাহসী এই মডেল কন্যা। আপাতত সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছেন তিনি।
ছুরির কোপে ক্ষতবিক্ষত মুখ, কাটা আঙুল! দিল্লিতে লিভ-ইন সঙ্গীকে গলা কেটে খুন প্রেমিকের