Latest News

‘পালাতে গেলে জঙ্গলেই মরে যাবে’! অপহরণের অভিজ্ঞতা শোনাল নাইজেরিয়ার মুক্তি পাওয়া ছাত্ররা

 দ্য ওয়াল ব্যুরো: স্কুল শেষের পরে হোস্টেলে ফিরে একটু চোখ লেগে গিয়েছিল আন্নাস শুয়াইবুর। ১৬ বছরের কিশোর আচমকা চমকে ওঠে গুলির শব্দে। তখনও নিশ্চিত ছিল না সে, গুলিই চলছে বলে। স্কুলের ভিতরে গুলি কোথা থেকে আসবে! কিন্তু না, এটা কোনও দুঃস্বপ্ন ছিল না। কারণ কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে এবং তার সঙ্গে আরও কয়েকশো ছাত্রকে ঘিরে ফেলে বন্দুকবাজের দল। জোর করে তাদের স্কুল থেকে বের করে, কয়েক ঘণ্টা হাঁটিয়ে, নিয়ে চলে যায় এক জঙ্গলে। পণবন্দি হয়ে যায় তারা দিন দশেক আগে।

এর পরে সবে দু’দিন হল তারা ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরেছে। বোকো হারাম জঙ্গিগোষ্ঠীর কবলে এক সপ্তাহ বন্দি থাকার আতঙ্ক এখনও দগদগে।

শুয়াইবু বলছিল, “ওরা আমাদের বন্দুক ঠেকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। আমরা সকলে তখন হতবাক, কী হচ্ছে বুঝছি না। ওরা বলল, যদি পালানোর চেষ্টাও করো, আর আমরা যদি তোমাদের ছেড়েও দিই, তোমরা কোথাও যেতে পারবে না। জঙ্গলের পথেই ঘুরে ঘুরে মরে যাবে।”

You will die in the forest': Nigerian schoolboys describe kidnap ordeal

গত সপ্তাহের শেষে নাইজেরিয়ার ক্যাটসিনা প্রদেশের কাঙ্কারা শহরের একটি স্কুলের মধ্যে হামলা চালিয়ে কয়েকশো ছাত্রকে অপহরণ করে বন্দুকবাজের দল! এই ঘটনায় শোকে-আতঙ্কে বিহ্বল হয়ে পড়েন অভিভাবকরা। বোকো হারাম এই ঘটনার দায় স্বীকার করার পরেই অনেকের মনে পড়ে যায়, ২০১৪ সালে নাইজেরিয়ারই চিবক শহর থেকে ২৭০ স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করেছিল এই বোকো হারামই।

কেবল বোকো হারাম নয়, আরও নানা সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের উৎপাত এই প্রথম নয়। বিশেষ করে উত্তর-পশ্চিম নাইজেরিয়া এলাকায় এই দুষ্কৃতীরা প্রায়ই আক্রমণ করে সাধারণ মানুষদের। চুরি, ছিনতাই, অপহরণ করে মুক্তিপণ চাওয়া– এসব ঘটেই থাকে। অভিযোগ ওঠে, বেশ কয়েক মাস ধরেই নাইজেরিয়ায় এই ধরনের অশান্তি বাড়ছে। আফ্রিকার সবচেয়ে ঘনবসতি এই শহরে যেমন বাড়ছে কট্টরপন্থী ইসলামিস্ট জঙ্গিদের উৎপাত, তেমনই বাড়ছে আরও নানা অপরাধ। বাড়ছে হানাহানি, খুনখারাপি। সরকারের পর্যাপ্ত নজর নেই বলেই অভিযোগ সাধারণের।

You will die in the forest': Nigerian schoolboys describe kidnap ordeal


চরম উদ্বেগের পরে ১৮ ডিসেম্বর খবর মেলে, অপহৃত ৩৪৪ জন ছাত্রকে মুক্ত করেছে বোকো হারাম। তাদের জামফারা প্রদেশের সাফে টাউনে এনে রাখা হয় মুক্তি পাওয়ার পরে। তার পরে সরকারি ভাবে সকলের মেডিক্যাল পরীক্ষা করিয়ে তবে বাড়ি ফেরানো হয়।

ফেরার পরেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছে শুয়াইবু। সে আরও বলে, “আমার খুব ভয় লাগছিল। বুঝতেই পারছিলাম না কোতায় নিয়ে যাচ্ছিল আমাদের। তার পরে একটা ঘরে রেখে দিল। খুব অল্প খেতে দিত। আমরা কখনও গাছের পাতা ছিঁড়েও খেয়েছি। জল খেতে হতো একটা পুকুর থেকে। আমি বাড়ি ফিরে খুব খুশি। একসময় মনে হয়েছিল আর হয়তো বাড়ি ফিরতেই পারব না।”

You Will Die In The Forest": Nigerian Schoolboys Describe Kidnap Ordeal - Cablebuzz

তবে এর পরে ছেলেকে আর স্কুলে পাঠাতে রাজি নন শুয়াইবুর বাবা। ছেলের নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করা সম্ভব নয় তাঁর পক্ষে। যদিও সরকারি তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, সারা দেশের সমস্ত স্কুলেই সুরক্ষা আরও বাড়ানো হবে।

You might also like