
কানাডায় আশ্রয় পেলেন সৌদি থেকে পালিয়ে আসা তরুণী রাহাফ
রাহাফ তো মুক্তি পেলেন, নিজের ইচ্ছামতো বাঁচার অধিকার। কিন্তু সৌদির আরও বহু তরুণী সে দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ পেরেছেন। বেশির ভাগই পারেননি, পারছেন না। সৌদির গোঁড়া পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ও আইনে মেয়েদের পুরোপুরি পুরুষ অভিভাবকের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হয়। প্রতি মুহূর্তে পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি প্রয়োজন হয়। বাড়ি থেকে বেরোতে, চাকরি করতে জীবনের প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই। যদিও খুব সম্প্রতি গাড়ি চালানোর অধিকার পেয়েছেন সৌদির মেয়েরা।
রাহাফের আগে একই ভাবে সৌদির কঠোর শাসন ও বাড়ির পুরুষদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে পালিয়েছিলেন শাহাদ আল মুহাইমেদ। বছর দুয়েক আগে ১৭ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে টার্কিতে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন শাহাদ। সেখান থেকে তিনি ট্যাক্সি নিয়ে পালিয়ে জর্জিয়ায় প্রবেশ করে নিজেকে শরণার্থী বলে ঘোষণা করেন। অনেক জটিলতার পরে শাহাদ এখন সুইডেনে। তিনি বলেন, আমি যেমন ভাবে বাঁচতে চাই তেমন ভাবেই বাঁচছি। এমন দেশে থাকি, যেখানে মেয়েদের সমানাধিকার সব ক্ষেত্রেই।
রাহাফ তাঁর এই পালানো, ব্যাংককের বিমানবন্দরে নিজেকে আটকে রাখা, ও শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাহায্য পাওয়ার পুরো সময়টাতেই বুদ্ধি করে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেছেন। হাজার হাজার মানুষ দেখেছেন, তাঁর অভিযোগ শুনেছেন ও তাঁকে বাঁচাতে ক্যাম্পেন করেছেন #সেভ রাহাফ হ্যাশট্যাগে। রাহাফের অভিযোগ, তাঁকে জোর করে সৌদিতে ফিরিয়ে দেওয়া হলে তাঁর পরিবার তাঁকে হত্যা করবে। তিনি জানান, তাঁর বাবা ও বাড়ির অন্য পুরুষেরা তাঁর উপর নিয়মিত অত্যাচার করেন। তিনি চুল কেটে ফেলেছিলেন বলে তাঁকে ছয় মাস একটা ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল। তিনি ইসলাম ত্যাগ করেছেন। এই অপরাধে তাঁকে মেরে ফেলা হবে বলে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছিলেন।
সৌদি আরবের দমবন্ধ করা, গোঁড়া ধর্মীয় অনুশাসন ও সামাজিক পরিস্থিতি থেকে পালাতে ৭০-এর দশকে এক মরিয়া প্রয়াস করেছিলেন সৌদিরই এক রাজকুমারী। সঙ্গে ছিলেন তাঁর প্রেমিক। কিন্তু তাঁরা ধরা পড়ে যান। দুজনকেই হত্যা করা হয়। তবে সম্প্রতি সৌদির মধ্যযুগীয় রীতিনীতি থেকে পালাতে চাওয়া মেয়েদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর অ্যাডাম কুগল বলেন, বছর পনেরো আগেও সৌদির মেয়েদের যা পরিস্থিতি ছিল, তার থেকে অনেক পাল্টেছে। তাঁরা এখন মুক্তির সন্ধানে যাওয়ার কথা ভাবতে পারছেন অন্তত।