
আমেরিকার পাশাপাশি আফগান সরকারের (Afganistan) সঙ্গেও শান্তি আলোচনা হয়েছে তালিবানের। আশা করা হচ্ছে, তালিবান ও আফগান সরকার দেশে কোনও স্থায়ী শান্তিচুক্তি করবে। আফগান সরকারের হয়ে তালিবানের সঙ্গে যাঁরা আলোচনা চালিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন এক মহিলা। তালিবানের জন্য একসময় তাঁকে পড়াশোনা ছাড়তে হয়েছিল। তাঁর স্বামীকে তালিবান বন্দি করেছিল। তাঁকেও খুন করার চেষ্টা হয়েছিল। তাতে ভয় না পেয়ে তালিবানের সঙ্গে মেয়েদের অধিকার নিয়ে আলোচনা চালিয়েছেন তিনি।
তাঁর নাম ফৌজিয়া কোফি। তাঁর ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবেন। ডাক্তারি পড়তে ভর্তিও হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে তালিবান আফগানিস্তানে ক্ষমতায় আসে। ফৌজিয়া মনে করতে পারেন, ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি প্রথমবার তালিবান সৈনিকদের দেখেছিলেন। তিনি তখন থাকতেন কাবুলের এক বহুতলের ছ’তলার ফ্ল্যাটে। সেখান থেকে দেখেছিলেন, রাস্তায় লড়াই চলছে। তালিবান যোদ্ধাদের হাতে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল।
তার কিছুদিনের মধ্যেই তালিবান মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়। ফৌজিয়া তখনও কাবুলেই বাস করতে থাকেন। যে মেয়েদের স্কুলের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তাদের তিনি প্রাইভেটে ইংরেজি শেখাতেন। পরে বলেছেন, “সেই দিনগুলি ছিল খুব হতাশাচ্ছন্ন।”
মেয়েদের জন্য কী ব্যবস্থা জারি হয়েছিল? (Taliban)
তালিবান ডিক্রি জারি করেছিল, প্রত্যেক মহিলাকে বোরখা পরতে হবে। তারা রাস্তায় ঘুরে ঘুরে দেখত কোনও মেয়ে বোরখা ছাড়া রাস্তায় বেরিয়েছে কিনা। তেমন দেখলে সেই মেয়েকে মারধর করত। ফৌজিয়া বলেছেন, “আমি কখনও বোরখা কিনিনি। আমি মনে করি না বোরখা আফগানিস্তানের সংস্কৃতির অঙ্গ।” বোরখা না পরার জন্য ফৌজিয়ার রাস্তায় বেরোন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
তালিবানের পতন হলে মহিলারা সকলেই আনন্দিত হয়েছিলেন। কারণ তাঁরা রাস্তায় স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার অধিকার ফিরে পেলেন। ততদিনে ফৌজিয়ার স্বামী মারা গিয়েছেন। দু’টি শিশুকন্যাকে নিয়ে তিনি থাকতেন কাবুলেই। চাকরি করতেন রাষ্ট্রসঙ্ঘে। শিশু সৈনিকদের পুনর্বাসন দেওয়ার কাজ করতেন।
পরে আফগান সরকার তালিবানের সঙ্গে আলোচনার জন্য যে প্রতিনিধিদের পাঠায়, তাঁদের মধ্যে ছিলেন ফৌজিয়া। তালিবানের সঙ্গে আলোচনার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে ফৌজিয়া বলেন, মস্কোর এক হোটেলে আলোচনা হয়েছিল। তাঁর কথায়, “আমি তালিবানের প্রতিনিধিদের বললাম, আফগানিস্তানের মানুষ বৈচিত্রে বিশ্বাস করেন। তাঁরা চান না কোনও এক বিশেষ মতাদর্শের অনুগামীরা দেশ শাসন করুক।” তিনি যখন কথা বলছিলেন, তালিবানের একজন প্রতিনিধি নোট নিচ্ছিলেন। বাকিরা তাকিয়েছিলেন অন্যদিকে। পরে তালিবান বলে, তারা আফগান সরকারের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী নয়। কারণ এই সরকার আমেরিকার পুতুল। পরে আমেরিকা ও রাশিয়ার চাপে তারা আফগান সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে রাজি হয়।
দেওয়ালজুড়ে যুদ্ধ-ক্ষত ঢাকছেন তরুণী, রুখতে পারেনি তালিবানি অ্যাসিডও