Latest News

ফের কিং হওয়ার মুখে কেন কিং মেকার বনে গেলেন ফড়নবিশ

দ্য ওয়াল ব্যুরো: একেবারে শেষ মুহূর্তে বদলে গেল চিত্রটা। বৃহস্পতিবার বিকালে একনাথ শিন্ডেকে নিয়ে দেবেন্দ্র ফড়নবিশ (Devendra Fadnavish) যখন রাজভবনে রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারির সঙ্গে দেখা করতে ঢুকছেন তখনও সবাই জানত বিরোধী দলনেতাই তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী (Maharashtra) হতে চলেছেন। উপমুখ্যমন্ত্রী হবেন একনাথ। কিন্তু রাজভবন থেকে বেরিয়ে ঠিক উল্টো শুনিয়েছেন ফড়নবিশ। বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন একনাথ। তিনি মন্ত্রিসভাতে থাকছেন না। তবে তাঁর দল শিন্ডেকে সমর্থন জোগাবে।

রাজভবনের গেটে ফড়নবিশের ঘোষণা শুনে অনেকের ধারণা হয়েছে, উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কোশিয়ারির কোনও বিশেষ অবস্থানের কারণে সব কিছু উল্টে গেল। যদিও তা হওয়ার কথা নয়। কারণ, বিজেপি জমানার বাকি রাজ্যপালদের মতো কোশিয়ারিও কেন্দ্রীয় সরকারের সুনজরে আছেন প্রতি পদে দিল্লির সঙ্গে আলোচনা করে পা ফেলাতে।

এখন কিন্তু জানা যাচ্ছে সবাই ভুল জানত। ঠিকঠাক জানতেন হাতে গোনা কয়েকজন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা, কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং ফড়নবিশ। একনাথও জানতেন না, উপমুখ্যমন্ত্রীর জায়গায় হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর হওয়ার প্রস্তাব আসবে

আসলে বিজেপি (BJP) অপেক্ষা করছিল সব ঠিকঠাক, তাদের অঙ্ক মেনে হয় কিনা। বুধবার রাতে সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং পরক্ষণেই উদ্ধবের পদত্যাগের পর বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বুঝে যায় তাদের লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। সেই মতো আজ রাজভবনে যাওয়ার আগে একনাথকে সুখবরটি দেন দেবেন্দ্র।

বিজেপির গেম প্ল্যানটা কী? দলীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, মহারাষ্ট্রের এই অভ্যুত্থানের পিছনে তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল শিবসেনাকে ভাঙা এবং উদ্ধব ঠাকরেকে দলে একঘরে করে তোলা। সেই লক্ষ্যপূরণে গত এক-দেড় বছর ধরে শিন্ডের সঙ্গে গোপন শলা চালিয়ে গিয়েছেন ফড়নবিশ। তাঁরই পরামর্শে সুযোগ বুঝে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন শিন্ডে। প্রথমে সুরাত, পরে গুয়াহাটির হোটেলে বিদ্রোহী বিধায়কদের নিয়ে যাওয়ার গোটা ছকটাই ছিল বিজেপির। প্রথম থেকেই বিদ্রোহীরা একটি শর্তে স্থির থাকে, উদ্ধবকে কংগ্রেস ও এনসিপি-র জোট ছেড়ে বেরিয়ে এসে ফের বিজেপির হাত ধরতে হবে। সেই শর্ত ঘিরে রাজনীতির অঙ্কে টালমাটাল শিবসেনায় যত একঘরে হয়ে গিয়েছেন উদ্ধব, ততই লক্ষ্যপূরণ হয়েছে বিজেপির।

এই বিদ্রোহের শর্ত হিসাবে শিন্ডে কি তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করার দাবি তুলেছিলেন? বিভিন্ন সূত্রের খবর, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আগেই ফড়নবিশকে বুঝিয়ে দিয়েছিল, এই অভিযান থেকে ফের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি দখল যেন প্রত্যাশা না করেন তিনি। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন মহল থেকে ফড়নবিশ মুখ্যমন্ত্রী এবং শিন্ডে উপমুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন বলে জোর চর্চা শুরু হয়ে যাওয়ায় সামনে আসে আর এক ইস্যু যাতে ফড়নবিশের এখনই তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা নির্মূল হয়ে যায়।

কী সেই ইস্যু? ব্রাহ্মণ ফড়নবিশ ফের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন জেনে ক্ষোভের আগুন জ্বলতে থাকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মারাঠা সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে। তা আরও উস্কে দেয় শিবসেনার উদ্ধব শিবির। ব্রাহ্মণরা মহারাষ্ট্রের জনসংখ্যার অতি ক্ষুদ্র অংশ। ফলে শিবসেনার বিদ্রোহের সুযোগ নিয়ে মারাঠা সম্প্রদায়ের রাজ্যে ফের ব্রাহ্মণ দেবেন্দ্র ফড়নবিশকে মুখ্যমন্ত্রী করা হলে বিজেপির আসল লক্ষ্যপূরণ অধরা থেকে যাবে বুঝতে পারে দল। তাই ঠিক হয় মারাঠা সম্প্রদায়ের মানুষ শিন্ডেকেই আপাতত মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেবে বিজেপি। মণ্ডল কমিশন মারাঠাদের অগ্রবর্তী সম্প্রদায় হিসাবে ঘোষণা করলেও ওই সম্প্রদায়ের লোকেরা নিজেদের সামাজিক ও আর্থিকভাবে পশ্চাৎপদ মনে করে। উদ্ধব সরকার তাদের জন্য শিক্ষা ও চাকরিতে তিন শতাংশ সংরক্ষণ চালু করে। যদিও সুপ্রিম কোর্ট তা খারিজ করে দেয়।

ঠিক হয়েছে ফড়নবিশ উপমুখ্যমন্ত্রী হবেন। মহারাষ্ট্র বিধানসভার পরবর্তী নির্বাচন হওয়ার কথা ২০২৪-এ। বিজেপি সূত্রের খবর, শিন্ডের সরকারকে সমর্থন জোগানো এবং উপমুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সুবাদে ততদিন ফড়নবিশ রাজ্যে দলকে আরও গুছিয়ে তুলবেন। বস্তুত তিনি হতে চলেছেন শিন্ডে জমানার শরদ পাওয়ার। মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব সম্পর্কে চালু প্রচার ছিল, ফাইলে সই করার আগে তিনি হটলাইনে শরদ পাওয়ারের সঙ্গে কথা বলে নিতেন। পাওয়ারই প্রথম থেকে চালিত করতেন তাঁকে। ইতিমধ্যেই মুখে মুখে আলোচনা ছড়িয়েছে, এবার পাওয়ারের ভূমিকায় দেখা যাবে ফড়নবিশকে। বিজেপিকে শুধু মহারাষ্ট্র বিধানসভা নয়, ২০২৪-র লোকসভা ভোটের কথাও মাথায় রাখতে হচ্ছে। লোকসভার আসন সংখ্যার নিরিখে উত্তরপ্রদেশের পরই আছে মহারাষ্ট্র। ওই রাজের আসন সংখ্যা ৪৮। ২০১৯-এ বিজেপি পেয়েছিল অর্ধেকের কম, ২৩টি আসন। শিবসেনা দখন করে ১৮টি সিট। বাকি সাতটি আসন পায় এসসিপি, কংগ্রেস এবং অন্যান্য দল।

শিন্ডেকে মুখ্যমন্ত্রী করার পিছনে বিজেপিকে আরও একটি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হয়েছে। তাহল, শিন্ডেরা বিদ্রোহ করার পর উদ্ধব বারেবারেই বলেছেন, আমি মুখ্যমন্ত্রীর পদ আঁকড়ে থাকতে চাই না। যে কোনও মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিতে রাজি, যদি জানতে পারি, কোনও শিব সৈনিক পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন। বস্তুত, পালাবদলে নিশ্চিত বুঝে উদ্ধবও শিন্ডেকেই পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তুলে ধরার বার্তা দিয়েছিলেন।

আসলে ২০১৯-এ শিবসেনা-কংগ্রেস-এনসিপি-র জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কথা ছিল শিন্ডেরই। মারাঠা সম্প্রদায়ের মুখ হিসাবে উদ্ধব এই সিদ্ধান্ত করলেও তাঁর দাবি, পাওয়ার এবং সনিয়া গান্ধীর আর্জি রাখতে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসতে হয়। তিনি নিজে এটা চাননি। কারণ, তাঁর প্রশাসন চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল না। সেই শিন্ডেকে মুখ্যমন্ত্রী মেনে নিয়ে বিজেপি উদ্ধবের মুখ বন্ধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে রাখল।

You might also like