
ইটবৃষ্টি, রক্ত, বিদ্যাসাগরের মূর্তি টুকরো হয়ে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়া থেকে আগুন, এর কোনওটাই দেখতে হত না যদি বিকেল বিকেলই ব্যবস্থা নিত পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, মঙ্গলবারের হিংসাকে সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়েছে পুলিশ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ বিভাগের এক শিক্ষাকর্মী বলেন, “গেটের ভিতরে যখন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মীরা জড়ো হয়, তখন বাইরে বিজেপি ছিল না। এর মিনিট কুড়ি বাদে বিজেপি ওখানে জমায়েত করে। তখনও অমিত শাহের রোড শো অনেকটা দূরে।” বিজেপি জমায়েত করতেই উত্তেজনা শুরু। এবং সেই শুরু থেকে অমিত শাহের গাড়ি আসা, এই সময়টা প্রায় এক ঘণ্টা কুড়ি মিনিট। প্রশ্ন উঠছে, এতটা সময় কী করল পুলিশ? কেন জমায়েত শুরুতেই সরিয়ে দেওয়া হল না?
কলেজে স্ট্রিটে যদি ট্রেলার হয়, তাহলে বিধান সরণি পুরো সিনেমাটা দেখিয়ে দিয়েছে। দু’দলের সমর্থকদের খণ্ডযুদ্ধের মাঝে অসহায় পুলিশ। মেরুদণ্ডহীন প্রশাসন।
সূত্রের খবর, আগাম রিপোর্ট ছিল পুলিশের কাছে। স্পেশাল ব্রাঞ্চের কাছে এই তথ্য ছিল যে, বিজেপি-র রোড শোতে তৃণমূল বিক্ষোভ দেখাতে পারে। পর্যবেক্ষকদের মতে, চন্দ্রকোণায় যদি চলতি কনভয়ে জয় শ্রীরাম শুনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কনভয় থামিয়ে নেমে বিজেপি কর্মীদের তাড়া করেন, তাহলে এত বিপুল পরিমাণ জমায়েতের মিছিলে কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। যে কথা একটা বাচ্চা ছেলে বুঝতে পারে, সেটা কলকাতা পুলিশের বড় কর্তারা বুঝলেন না? প্রশ্ন অনেকেরই।
পুলিশের একটি সূত্রের মতে, রিপোর্ট ছিল লাগোয়া কলেজগুলিতে তৃণমূল জমায়েত রাখবে। তাহলে কেন বিদ্যাসাগরের সামনে ফাঁকা ময়দান পেয়ে গেল। কেন কলেজের সামনে সাদা পোশাকের বিরাট বাহিনী রেখে সংঘর্ষের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা গেল না? পুলিশ তো বাংলারই। এর দায় কার? গোটা ঘটনার নেপথ্যেই বা কারা? প্রশ্ন ঘুরছে নাগরিক মনে। পর্যবেক্ষকদের অনেকেরই প্রশ্ন, রুটের অনুমতি তো পুলিশই দিয়েছিল। তাহলে নিরাপদে মিছিল করানো তো পুলিশেরই কাজ। রাজনৈতিক মহলের অনেকে এই প্রশ্নও তুলছেন, কমিশনের অধীনে প্রশাসন, কেন তারা দায় নেবে না?
পরে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজেশ কুমার পরে বলেন, গোটা ঘটনায় একশো জনের বেশি লোককে আটক করা হয়েছে। দোষীদের খুঁজে বের করতে চেষ্টার ত্রুটি থাকবে না।
মঙ্গলবার কলকাতার ছবি দেখে অনেকেই শিউরে উঠেছেন। উত্তর ও মধ্য কলকাতায় কাজের জন্য যাওয়া অনেকের জন্যই তাঁদের পরিবারের লোকেরা আতঙ্কের প্রহর কাটিয়েছেন। যা দেখে অনেকেই বলছেন, ভোটের চারদিন আগে যদি খোদ রাজধানী শহরের আইনশৃঙ্খলার হাল এই হয়, তাহলে বাংলার গ্রাম মফস্বলের ছবিটা এমনিতেই আন্দাজ করা যাচ্ছে।