
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মঙ্গলবার পশ্চিম বর্ধমানের এক সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে জেহাদ (Jihad) ঘোষণা করবে তৃণমূল (TMC)।
তৃণমূলনেত্রীর (Mamata Banerjee) ওই জেহাদ শব্দোচ্চারণ নিয়ে এখন নতুন বিতর্ক তৈরি করেছেন অমিত মালব্য, শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। শুভেন্দুদের (Suvedu Adhikari) বক্তব্য, জেহাদ আপত্তিজনক শব্দ। শুধু এই একটি শব্দের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে ফেলে দেওয়া উচিত। আবার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে জেহাদের অর্থ জানতে চেয়েছেন রাজ্যপাল।
এখন প্রশ্ন হল, জেহাদ তথা জিহাদের (Zihad) প্রকৃত অর্থ কী?
জিহাদ হল একটি আরবি শব্দ। জুহদ শব্দ থেকে এর উৎপত্তি, যার মানে (জুহদ) হল ক্ষমতা। অক্সফোর্ড ল্যাঙ্গুয়েজ অভিধান অনুযায়ী, জিহাদের অর্থ হল, পাপের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য কারও মনের মধ্যে আধ্যাত্মিক চেতনাবোধ। সেখানে এও লেখা রয়েছে, জিহাদের অর্থ হল মুসলমানদের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই। তবে বিশ্বজুড়ে জিহাদের অর্থের সন্ধান কিন্তু অক্সফোর্ড অভিধানেই থেমে থাকেনি।
‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক’ পত্রিকা বিশ বছর আগে এর উত্তর সন্ধানে নেমেছিল। মাহের হ্যাথাউট নামে এক মুসলিম স্কলারকে উদ্ধৃত করে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের সেই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছিল যে, জিহাদের প্রকৃত অর্থ হল, মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায় বিচারের প্রসারের জন্য লড়াই।

মাহের হ্যাথাউট তাঁর জিহাদ ভার্সেস টেরোরিসম বইতে লিখেছেন, “জিহাদের অর্থ ব্যাপক। কোরানে জিহাদ বলতে নিজেকে বদলানোর চেষ্টাকে বোঝানো হয়েছে। তা ছাড়া জিহাদ বলতে শোষণ নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোকেও বোঝায়।”
ওই একটা শব্দের জন্য মমতার সরকারকে ফেলে দেওয়া উচিত, রাজভবনে দরবার শুভেন্দুদের
ভারতীয় পণ্ডিতদেরও অনেকের মতে, ইদানীং জিহাদ শব্দের অপব্যাখ্যা করা হয়। ইসলামিক পণ্ডিত মহম্মদ জাহির ও মহম্মদ আবু নাজিমের মতে, “ইসলামিক জিহাদে হিংসার কোনও স্থান নেই। বরং জিহাদ হল মানুষের মঙ্গলের লক্ষ্যে একটি উচ্চতর ধারনা। তবে এটা ঠিক সাম্প্রতিক কালে কিছু জঙ্গি সংগঠন তাদের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপকে মহান প্রতিপন্ন করতে জিহাদ শব্দের অপব্যাখ্যা করছে। যা মোটেও ইসলামে বলা নেই”।

এ ব্যাপারে ভাষাবিদ পবিত্র সরকারকে প্রশ্ন করা হলে তিনি অবশ্য জানিয়েছেন, আরবি অভিধান দেখে তবেই এর ব্যাখ্যা দিতে পারবেন। তবে সাহিত্যিক আবুল বাশার বলেছেন, “জেহাদ শব্দের উৎস বাংলা নয়, ভারতও নয়। কিন্তু এটি বাংলা ভাষায় ঢুকে গেছে। জেহাদ করা মানে কোনও কিছুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা। তার সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই। কোনও এক সময়ে ধর্মযুদ্ধকে জেহাদ বলা হয়েছিল ঠিকই, তবে তা শুধু মুসলমানদের যুদ্ধ নয়। খ্রিস্টানদের ধর্মযুদ্ধও ছিল জেহাদ”। তাঁর কথায়, “মুশকিল হল, বিজেপি দলটি না জানে আরবি, না জানে ফার্সি। লেখাপড়া তো করে না বলেই আমার মনে হয়। করলে জানত, জেহাদ শব্দটা কোনও ধর্মীয় শব্দই নয়”।

তবে আবুল বাশার এখানেও থেমে থাকেননি। তিনি বলেন, “এই যে ধরুন অমিত শাহ– এখানে ওঁর যে পদবী শাহ, সেটি মানে কিন্তু রাজা বাদশা। আকবর শাহের যে পদবি, অমিত শাহেরও তাই। এটি ফার্সি শব্দ। উনি কেন শাহ ব্যবহার করেন তাহলে। ওঁর তো বর্জন করা উচিত এই পদবী। নয়তো ওঁর স্পষ্ট করা উচিত, পদবীটি শাহ নয়, শাহজি। অমিত শাহ একা কেন, ওঁর দলের আরও অনেকেই হিন্দিতে কথা বলেন, যাতে অজস্র আরবি, ফার্সি শব্দ মিশে রয়েছে। তা হলে তো সেগুলোও ব্যবহার করা যাবে না!