
দ্য ওয়াল ব্যুরো, বীরভূম: অমর্ত্য সেনের জমি বিতর্কে বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (CM Mamata Banerjee) বেনজির আক্রমণ করেছিল বিশ্বভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় (Visva Bharati)। একটি প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়েছিল, “পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী কান দিয়ে দেখেন। কারণ তাঁকে স্তাবকরা যা শোনান তিনি তাই বিশ্বাস করেন এবং টিপ্পনি করেন।” বিশ্ববিদ্যালয়ের এ হেন মন্তব্য নিয়ে বাংলার শিক্ষামহলের একাংশে ‘ছিঃ ছিঃ’ শুরু হলেও, বক্তব্যে অবিচল থাকলেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
বিশ্বভারতী যে প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করেছিল তা উপাচার্যের (Visva Bharati VC) কথা বলেই ধরে নেওয়া যায়। কারণ, তাঁর অনুমতি ছাড়া এহেন বিবৃতি প্রকাশ করা কখনওই সম্ভব নয়। কিন্তু প্রশ্ন হল, কোনও কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কি এই ভাষায় রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের উদ্দেশে মন্তব্য করতে পারেন? প্রশ্ন শুধু সেখানেই সীমিত নয়। উপাচার্য তাঁর ব্যক্তিগত পরিসর থেকে সেই মন্তব্য করেননি, তাঁর মতকে সামগ্রিক ভাবে এক গৌরবশালী প্রতিষ্ঠানের মত হিসাবে তুলে ধরেছেন। বিশ্বভারতীর ঐতিহ্যের সঙ্গে এই মত কি মানানসই?
বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে ‘দ্য ওয়ালের’ তরফে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, “আমার যা বলার বলে দিয়েছি। তা ব্যাখ্যা করা আপনাদের কাজ। আমার আর কিছু বলার নেই।”
বুধবারের বিবৃতিতে লেখা হয়েছিল, “গত ৩১ শে জানুয়ারি তিনি (পড়ুন মুখ্যমন্ত্রী) বোলপুরের রাঙাবিতানে বিশ্বভারতীর অর্থনীতি বিভাগের একজন শিক্ষক, পাঁচজন ছাত্র ও একজন গবেষণারত ছাত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এদের সঙ্গে কথা বলে তিনি বেশ কিছু দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেছেন জনসমক্ষে। …মুখ্যমন্ত্রী একটু বাড়াবাড়ি করলেন না কি? অবশ্য তিনি যদি নিজেকে আদালতের উপরে ভাবেন তবে বলার কিছু নেই।”
বীরভূম সফরে এসে মঙ্গলবার বিশ্বভারতীর (Visva Bharati University) আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানকার সাসপেন্ড হওয়া পড়ুয়া, কয়েক জন অধ্যাপক দেখাও করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অভাব-অভিযোগের কথা তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে জানান। মুখ্যমন্ত্রী তাতে বলেছিলেন, পড়ুয়া-অধ্যাপকদের যদি ক্ষমতার জোরে মেরুকরণের চেষ্টা করা হয় তাহলে তিনি তার বিরোধিতা করবেন।
মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের পরই বিবৃতি প্রকাশ করে বিশ্বভারতী (পড়ুন উপাচার্য)। মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বভারতী সম্পর্কে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ মন্তব্য করেছেন লেখার পাশাপাশি বিজ্ঞপ্তিতে আরও লেখা হয়েছে, ‘আপনার আশীর্বাদ না থাকলে আমাদের সুবিধা কারণ আমরা প্রধানমন্ত্রীর মার্গদর্শনে চলতে অভ্যস্ত।”
বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। প্রধানমন্ত্রী পদাধিকার বলে তার আচার্য। দেশের রাষ্ট্রপতি হলেন পদাধিকার বলে পরিদর্শক। অতীতে বাংলায় যখন বামফ্রন্ট সরকার চলছে, তখন পদাধিকার বলে বিশ্বভারতীর আচার্য কখনও ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী বা মনমোহন সিং। আচার্য হিসাবে বিশ্বভারতীতে এসেছিলেন ইন্দিরা গান্ধীও। কিন্তু দিল্লির শাসকের স্নেহ ও আচ্ছাদন নিয়ে বাংলায় বাম সরকারের সঙ্গে বিবাদ বা এ ধরনের বাকযুদ্ধে কখনও জড়াতে দেখা যায়নি তৎকালীন উপাচার্যদের।
এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার তৃণমূল মুখপাত্র তাপস রায় বলেন, উপাচার্য যে ধরনের কথা বলেছেন তা শিক্ষাঙ্গনের ভাষা নয়। কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের তো নয়ই। তাঁর কথায়, ভারতবর্ষের গণতন্ত্র মজবুত হয়েছে দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলি মজবুত থাকার ফলে। বিজেপি সেই প্রতিষ্ঠানগুলির মাজা ভেঙে সরীসৃপে পরিণত করতে চাইছে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে গেরুয়া বাহিনী ঢুকিয়ে শিক্ষা ও গবেষণার বারোটা বাজাতে চাইছে। বিদ্যুৎ চক্রবর্তীরা বিশ্বভারতীর ইট-কাঠে ধাক্কা মারছেন না, তাঁরা শিকড়ে বিষ ঢালছেন। এর দীর্ঘমেয়াদি ফল মারাত্মক।
মমতার প্রকল্পে টাকা দিলেন নির্মলা, বাজেটে কলকাতার দুই মেট্রো পেল আড়াই হাজার কোটি