
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রাত তখন সাড়ে নটা। অন্য দিনের মতোই জমে উঠেছে শিলিগুড়ির পানশালার আসর। আটমকা নাটকীয় ভঙ্গিতে ঢুকে পড়ল একদল পুলিশ! নেতৃত্বে রাজগঞ্জ থানার এসআই মহম্মদ মনসুরউদ্দিন। ডান্সবারের মালিককে তাড়া করছে পুলিশের দল, দৌড়ে পালাচ্ছে মালিক! শেষমেশ পুলিশের জালে ধরা পড়ল সে! সবার প্রশ্ন, কী হয়েছে! কেন এমন আচমকা অভিযান!
না, ডান্সবার সংক্রান্ত কোনও ঘটনায় এই গ্রেফতারি নয়। আসল ঘটনার শিকড় আরও গভীরে, আরও জটিল। রাজগঞ্জের এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে ধরা পড়েছে শিলিগুড়ির ওই ডান্সবারের মালিক, পবন দাস। ঠিক কী হয়েছিল?
বছর দেড়েক আগে শিলিগুড়ির হংকং মার্কেটের এক দোকানদারের কাছ থেকে একটি চাইনিজ সেক্সডল কিনতে যান রাজগঞ্জের বেলাকোবা এলাকার এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। পুতুলটি কেনার জন্য প্রায় ১ লক্ষ টাকা দরদাম হয়। এর পরে ওই শিক্ষক পুতুলটি নিতে কয়েক হাজার টাকা আগামও দিয়ে দেন। কথা হয়, পুতুলটি ওই শিক্ষকের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে বাকি টাকা নেবেন বিক্রেতা।
দেখুন ভিডিও।
ওই শিক্ষক ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি, তিনি আদতে প্রতারণার জালে জড়িয়ে পড়ছেন। বাড়িতে অপেক্ষা করতে থাকেন ওই পুতুল আসবে বলে। কিন্তু কয়েক দিন পরেই তাঁকে জানানো হয়, ওই পুতুলটি দোকান থেকে ডেলিভারি দিতে নিয়ে যাওয়ার সময়ে আমবাড়ি থানার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেছে ডেলিভারি ম্যান।
এরপর জাকির হুসেন নাম বলে আমবাড়ি থানার পুলিশ অফিসার পরিচয় দিয়ে ওই শিক্ষককে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় গ্রেফতার করার। তাঁকে ভয় দেখানো হয়, গ্রেফতারি এড়াতে হলে তাঁকে ২ লক্ষ টাকা দিতে হবে। তাই করেন ওই শিক্ষক। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। এর পর বিভিন্নভাবে ভয় দেখিয়ে প্রায় দু’বছর ধরে ওই শিক্ষকের কাছ থেকে খেপে খেপে মোট ৩৭ লক্ষ টাকা নেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
শিক্ষকের আরও অভিযোগ, জলপাইগুড়ির জেলাশাসক পরিচয় দিয়েও বিষয়টি মিটমাট করার জন্য তার কাছে বড় অঙ্কের টাকা চাওয়া হয়। অবশেষে গত নভেম্বর মাসে গোটা বিষয়টি নিয়ে রাজগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই শিক্ষক।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, শিলিগুড়ির কসমস মলের ডান্সবারের মালিক পবন দাস, তাঁর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা দাস এবং পাপন দাস ও প্রকাশ পাল– এই চার জনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ওই ৩৭ লক্ষ টাকা জমা পড়েছে। এর পরেই সন্ধান চালিয়ে পবন দাসের খোঁজ পায় পুলিশ। শুক্রবার রাত সাড়ে নটা নাগাদ পবন দাসকে গ্রেফতার করা হয় ডান্সবার থেকে। আজ তাঁকে জলপাইগুড়ি আদালতে তোলা হলে ৫ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। বাকিদের সন্ধানে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।