
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ১৫ হাজার ফুট উচ্চতায় তাপমাত্রার পারদ নেমে গেছে মাইনাস ৪০ ডিগ্রিতে। যতদূর চোখ যায় শুধু সাদা বরফের স্তর। ক্ষণে ক্ষণে নাড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে কনকনে হিমেল হাওয়া। শিরদাঁড়া অবধি কেঁপে যায়। বরফে ঢাকা দুর্গম পাহাড়ি উপত্যকা, হাড়হিম ঠান্ডা, শত্রুসেনার আস্ফালন—কোনও কিছুই দমাতে পারেনি ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত রক্ষী বাহিনীদের (আইটিবিপি)। প্রজাতন্ত্র দিবসের সকালে বরফে মোড়া পাহাড়ি উপত্যকাতেই প্যারেড করলেন জওয়ানরা। তেরঙ্গা উড়িয়ে গাইলেন জাতীয় সঙ্গীত।
১৫ থেকে ১৬ হাজার ফুট উচ্চতায় দেশের তিন সীমান্ত হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুন এলাকা ও লাদাখ আগলে বসে আছেন আইটিবিপি জওয়ানরা। হিমালয় পার্বত্য় এলাকায় ভারত-চিন সীমান্ত বরাবর বরফে মোড়া উপত্যকা প্রতি মুহূর্তেই বিপদের ইঙ্গিত দেয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, শত্রুসেনার আচমকা আগ্রাসনের চেষ্টা, প্রাণ হাতে নিয়ে অতন্দ্র প্রহরীর মতো অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সীমান্ত আগলে বসে থাকতে হয়। দেশের নিরাপত্তা ও দেশবাসীদের সুরক্ষাই যাঁদের জীবনের মূলমন্ত্র সেই অসম সাহসী জওয়ানরা ৭৩তম প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডের ভিডিও পোস্ট করেছেন। মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে পড়েছে নেট মাধ্যমে। হিমাচলের ১৬ হাজার ফুট উচ্চতায় ও কুমায়ুনের ১২ হাজার ফুট ওপরে বরফের মধ্য়ে দাঁড়িয়ে জওয়ানদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন মুগ্ধ করেছে দেশবাসীকে।
লাদাখের পাহাড়ি এলাকাতেও পারদ নেমেছে হিমাঙ্কের ৪০ ডিগ্রি নীচে। পাহাড়ি খাঁজ এখন আরও দুর্গম। বরফ পড়ছে। তার মাঝেই চিনের সেনাদের তৎপরতা বেড়েছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর গোগরা ও হট স্প্রিংয়ে এখনও সেনা মোতায়েন করে রেখেছে চিন। পাহাড়ি ফিঙ্গার এলাকাগুলোতে নতুন করে সামরিক কাঠামো তৈরি করতে দেখা গেছে। অস্ত্রশস্ত্র আনা নেওয়ার জন্য সেতু বানাচ্ছে চিনের লাল ফৌজ। তাই প্রচন্ড ঠান্ডাতেও দিনরাত সীমান্ত আগলে বসে আছেন ভারত-তিব্বত সীমান্ত রক্ষী বাহিনী জওয়ানরা।
এদিন আইটিবিপি-র অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেলে যে পোস্ট করা হয়েছে তাতে দেখা গেছে, ১৭ হাজার ফুট উচ্চতায় বরফে ঢাকা উপত্যকায় জাতীয় পতাকা উড়িয়ে প্রজাতন্ত্র দিবস পালন করছেন আইটিবিপি-র জওয়ানরা। গাইছেন জাতীয় সঙ্গীত।
দেখুন ভিডিও।
ভারত-চিন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা ছড়িয়ে রয়েছে ৩ হাজার ৪৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত। লাদাখের কারাকোরাম থেকে অরুণাচল প্রদেশের জাচেপ লা পর্যন্ত। এই গোটা এলাকায় নজরদারি চালায় ভারত-তিব্বত সীমান্ত রক্ষীবাহিনী। জুন মাসে গালওয়ানে চিনা সেনার অবৈধ অনুপ্রবেশ রুখে দিয়েছিল আইটিবিপির জওয়ানরা। এর পরেও লাগাতার চুক্তি ভেঙে লাল সেনার অনুপ্রবেশের চেষ্টা আটকে দেয় আইটিবিপির জওয়ানরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সীমান্তে অতিরিক্ত বাহিনী পাঠায় কেন্দ্র। গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ভারতের পার্বত্য বাহিনী তথা স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স মোতায়েন করা হয় পাহাড়ি এলাকাগুলিতে।
আইটিবিপি সূত্র জানিয়েছে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এখন সীমান্তে ভারতীয় সেনার সংখ্যা অনেক বেশি। আইটিবিপির ফোর্স মিলিয়ে মোট সংখ্যা লাখ পেরিয়েছে। লাদাখ সীমান্তের সবচেয়ে বড় প্রতিকূলতা হল সেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ। পাহাড়ি খাঁজের বিপদসঙ্কুল পরিবেশে শত্রুসেনার মোকাবিলা করার জন্য দিনরাত জাগছেন ভারতীয় জওয়ানরা। সেই সঙ্গেই হাড়হিম ঠাণ্ডায় পাহাড়ি এলাকা হয়ে উঠেছে আরও দুর্গম। লাদাখে শীত পড়লেই তাপমাত্রা নেমে যায় হিমাঙ্কের প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড নিচে। এই হাড়হিম ঠান্ডায় শত্রুসেনার গতিবিধির ওপর দিবারাত্র নজর রেখে বসে থাকতে হয়।