
দ্য ওয়াল ব্যুরো: জঙ্গি কার্যকলাপে মদত দেওয়ায় আন্তর্জাতিক মঞ্চে আরও কোণঠাসা হল পাকিস্তান। ভারতের প্রতিবেশী দেশটির আকাশসীমা পর্যন্ত নিরাপদ নয় বলে নিজের দেশের উড়ান সংস্থাগুলিকে সতর্ক করে দিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
একটি বিবৃতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজেদের দেশের বাণিজ্যিক উড়ান সংস্থাগুলিকে সতর্ক করে দিয়েছে। সেই সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তিতে পাকিস্তানে উগ্রপন্থী/ জঙ্গি কার্যকলাপ থাকায় সে দেশে যাতায়াত করা তো বটেই, সে দেশের আকাশসীমা পর্যন্ত যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
United States warns its air carriers to avoid Pakistan airspace, it may be a risk & possible threat of attacks on US airlines (commercial&US state carrier) by Pakistan extremist & militant groups. pic.twitter.com/2lxcbljbPK
— ANI (@ANI) January 2, 2020
যেসব মার্কিন বিমান পাকিস্তানে অবতরণ করে এবং যেগুলি কম উচ্চতায় ওড়ে সেগুলির ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি বলে ওই বিজ্ঞপ্তি/ নির্দেশিকায় বলা হয়েছে। এইসব অসামরিক মার্কিন বিমানের উপরে হামলার আশঙ্কাও বেশি রয়েছে। যেসব সংস্থার বিমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নথিভুক্ত, তাদের সকলকেই সতর্ক করেছে মার্কিন প্রশাসন।
আগামী এক বছরের জন্য এই সতর্কতা জারি থাকবে। আগামী বছর ১ জানুয়ারি এই নির্দেশিকা নতুন করে বিবেচনা করা হবে বলে ওই বিজ্ঞপ্তিটিতে জানানো হয়েছে।
জঙ্গি তোষণ বন্ধ করতে ইসলামাবাদকে আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মার্কিন সেনেটর ম্যাগি হাসান। পাকিস্তানকে সাবধান করে একই কথা বলেছিলেন মার্কিন বিদেশ মন্ত্রকের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া সংক্রান্ত ভারপ্রাপ্ত সহ-সচিব অ্যালিস জি ওয়েলসও।
অক্টোবর মাসেই অ্যালিস বলেছিলেন, “আলোচনা ও সন্ত্রাসে মদত দেওয়া একসঙ্গে চলতে পারে না। পাকিস্তানকে জঙ্গিদের মদত দেওয়া বন্ধ করতে হবে। সন্ত্রাস রুখতে দ্রুত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে অচিরেই। প্রয়োজন হলে মধ্যস্থতা করতে রাজি ট্রাম্প প্রশাসন। ”
পাকিস্তানকে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই জঙ্গি কার্যকলাপে অর্থের জোগান বন্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলেছিল আন্তর্জাতিক নজরদারি সংস্থা ‘এফএটিএফ’। বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে পাক সেনাপ্রধান কমর বাজওয়া জানিয়েছিলেন, সন্ত্রাস দমনে সব ব্যবস্থা নিচ্ছে পাক সরকার। হালে তার কিছুই দেখা যায়নি। উল্টে উপত্যকার জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে প্রত্যক্ষ ভাবে মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দিল্লিতে পাক দূতাবাসের বিরুদ্ধে। এনআইএ জানিয়েছে, পাকিস্তানের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি সরাসরি যোগাযোগ রাখে দূতাবাসের সঙ্গে। অর্থের জোগানও হয় এখান থেকেই।
প্যারিসে পাঁচ দিনের ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ)-এর শীর্ষ বৈঠকের শেষে জানানো হয়, জঙ্গিদের পুঁজি জোগান রোধে যে ৪০টি পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছিল এফএটিএফ-র পক্ষ থেকে, তার প্রায় কিছুই করেনি ইসলামাবাদ। ন্যূনতম ২৭টি নির্দেশিকার মধ্যে মধ্যে ২২টিও করতে উঠতে পারেনি ইসলামাবাদ। আগামী বছর ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে ধূসর তালিকায় থাকা পাকিস্তানকে সত্যি সত্যিই কালো তালিকাভুক্ত করা হবে।
যদিও পরের বৈঠকেও পাকিস্তানকে কালো তালিকাভুক্ত না করে কড়া ভাবে সতর্ক করেই ছেড়ে দেওয়া হয়। কূটনৈতিক মহলের একাংশের ধারনা, পাকিস্তানকে বাঁচিয়ে দিয়েছে তাদের দীর্ঘদিনের বন্ধু চিন।
অ্যালিস বলেছিলেন, “নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবা, জইশ-ই-মহম্মদকে পালন করে পাকিস্তান। এই জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো নিয়ন্ত্রণরেখায় অশান্তি তৈরি করে চলেছে। সব জেনেও মুখ বন্ধ করে রয়েছে পাকিস্তান।” রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের ১২৬৭ নম্বর ধারায় তালিকাভুক্ত বিশেষ করে লস্কর-ই-তৈবা, জামাত-উদ-দাওয়া, ফালাহ-ই-ইনসানিয়াতের মতো সংগঠন বা তাদের মাথার বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়নি পাকিস্তান।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বারবারই পাকিস্তানকে সতর্ক করেছে, এবার পদক্ষেপও করল তাদের বিরুদ্ধে সতর্কতা জারি করে।