
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দিল্লির ব্যস্ত রাস্তায় ছুটছে অটোরিক্সা (Auto Rickshaw)। তবে চিরাচরিত হলুদ-সবুজ নয়, গোলাপি আর কালোর মিশেলে সেইসব অটো যে কারও চোখে পড়তে বাধ্য। অটোগুলির চালক যাঁরা, বলা উচিত যে সব মহিলারা, তাঁরা ভারতীয় নন তো বটেই, তাঁদের পরিচয় জেনে চোখ কপালে উঠেছে আমজনতার। ‘স্পেশ্যাল’ সেই অটোর ভিতরে থাকা ৪ জন মহিলা হলেন হাই প্রোফাইল চার মার্কিন কূটনীতিবিদ (US Women Diplomats)!
ভারত সফরে এসেছেন আমেরিকার চার কূটনীতিবিদ অ্যান এল মেসন, রুথ হোমবার্গ, শারিন জে কিটারম্যান এবং জেনিফার বাইওয়েটার্স। অফিসের কাজ ছাড়াও দিল্লিতে (Delhi) সমস্ত কাজের জন্যই চার ভিভিআইপির বাহন এখন এই গোলাপি-কালো অটো। তাঁদের জন্য বরাদ্দ বুলেট প্রুফ গাড়ি ছেড়ে আমজনতার অটোতেই এখন রাজধানীর রাস্তা চষে ফেলছেন ৪ জন। অ্যাডভেঞ্চার আর জনসংযোগ তো হচ্ছেই, তাঁর সঙ্গে সমাজের কাছে নয়া উদাহরণ হয়ে উঠছেন তাঁরা।
অ্যান জানিয়েছেন, গাড়ির প্রতি তাঁর ভালবাসা চিরন্তন। ডেট্রয়েট হোক বা দিল্লি, যেখানেই যান, নতুন নতুন যানবাহনে চড়তে ভোলেন না তিনি। ভারত সফরে আসার আগে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন অ্যান। সেখানে বুলেটপ্রুফ গাড়িতে করে যাওয়ার সময়েই রাস্তায় ঝলমলে অটোরিক্সা দেখে তাতে চড়ার ইচ্ছে জেগেছিল। কিন্তু তখন সুযোগ মেলেনি। ‘তারপর ভারতে এসে সেই সুযোগ আর হাতছাড়া করিনি, একটা অটো কিনেই ফেললাম,’ জানিয়েছেন অ্যান।

‘এর আগে শুধুই অটোমেটিক গাড়ি চালিয়েছি। ক্লাচ আছে, এমন কোনও গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল না। ফলে অটো চালাতে প্রথমে খুবই ভয় লাগত,’ দাবি অ্যানের।
কিন্তু হঠাৎ এমন অদ্ভুত কাজ করার কথা মাথায় এল কেন? অ্যানের জবাব, ‘আমার মা আমার অনুপ্রেরণা। উনি সারা পৃথিবী ঘুরেছেন, ভিয়েতনাম যুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন মা। মা এবং জীবন সবসময়ই আমাকে শিখিয়েছে, নতুন কোনও অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ পেলে তা হাতছাড়া না করতে। আমি তো বটেই, আমার মেয়েও এখন অটোরিক্সা চালানো শিখছে।’ তাঁর ব্যক্তিগত অটোয় ব্লুটুথ ডিভাইস লাগানো রয়েছে। অটোর পর্দায় আঁকা রয়েছে বাঘের ছবি। তাঁর অটোর নামও দিয়েছেন তিনি। আশির দশকের টিভি শো ‘নাইট রাইডার্স’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে অ্যান তাঁর অটোর নাম রেখেছেন কিট (KITT)।
শারিনের জন্ম কর্নাটকে। তবে বর্তমানে মার্কিন নাগরিক তিনি। এর আগে মেক্সিকোর অ্যাম্বাসাডর মেলবা প্রিয়ার কথা শুনেছিলেন শারিন। ভারতে তাঁরও একটি অটোরিক্সা ছিল, তাতে চড়েই অফিসের কাজে যেতেন মেলবা। তাঁর কথা জানার পর ভারতে এসে অ্যানকে দেখেন শারিন। ব্যাস, অটো কিনে নিজের মতো করে সাজিয়ে ফেলেছেন তিনি। ট্যাসেল আর ফুল দিয়ে সাজানো তাঁর সেই অটোর দু’দিকে লাগানো রয়েছে ভারত এবং আমেরিকা দুই দেশেরই পতাকা।
রুথের দাবি, তাঁর কাছে কূটনীতি হল সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করা। তাই প্রত্যেকদিন অটো নিয়ে অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে স্থানীয় বাজারে যান রুথ। ‘আমি আমার এলাকার সমস্ত ব্যবসায়ীকে চিনি। তাঁরাও আমাকে অটো চালাতে দেখলে খুব খুশি হন। তাঁরা নিজেরা এসে আমার সঙ্গে আলাপ করেন। এভাবেই রোজ নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে আমার আলাপ হয়, তাঁদের জীবনযাত্রার ব্যাপারে আমি জানতে পারি। মানুষের সঙ্গে এইভাবে আমার যে সম্পর্ক তৈরি হয়, সেটাকে আমি কূটনীতির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে করি,’ জানিয়েছেন রুথ।
জেনিফারের কাছে অটো চালানো হল ‘আউট অফ দ্য বক্স’ চিন্তাভাবনার নামান্তর। ‘দিল্লিতে এসে অ্যানের সঙ্গে আলাপ হয় আমার। ওঁর অটোয় ওঠার পর আমি সিদ্ধান্ত নিই, আমারও একটা অটো লাগবে। এতে করে আমি সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ পাই, তাঁদের মানবিক গুণ ধরা পড়ে আমার কাছে। আমি অটো চালাতে শুরু করার সময় অনেকেই আমাকে সাহায্য করেছেন। দিল্লির মানুষের মানবিক দিক দেখার সুযোগ হয়েছে আমার,’ জানিয়েছেন জেনিফার। প্রথম প্রথম অন্য অটোর, সাইকেল, বাইকের ভিড়ে চালানোর সময় সমস্যা হত বটে, তবে এখন সবটাই অভ্যেস হয়ে গেছে, দাবি জেনিফারের।
সব মিলিয়ে চার ভিভিআইপি বিদেশিনী এখন ব্যক্তিগত অটোয় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন রাজধানীর রাজপথে।
এইচআইভি আক্রান্ত অন্তঃসত্ত্বাকে ছুঁলেন না চিকিৎসকরা, প্রসবের পরেই মৃত্যু সদ্যোজাতের