
আকাশ ঘোষ
‘স্কুলের যে ড্রেস ছিল সেটা পড়াতে গিয়ে দেখছি ছোট হচ্ছে’, একজনের এই মুখের কথা কেড়ে নিয়ে আর একজন বলে উঠল, ‘মেয়ের তো পায়ে জুতোই ঢুকছে না’। এরা সবাই অভিভাবক। কেউ ছেলেকে নিয়ে, কেউ মেয়েকে নিয়ে এসেছেন স্কুলে। না স্কুল বললে ভুল হবে, ‘পাড়ায় শিক্ষালয়ে’।
স্কুলের বাইরে যেমন অভিভাবকদের মধ্যে আড্ডা চলত, সেই আড্ডাই ফিরে এল পাড়ায় শিক্ষালয়ের বাইরে। তবে এদিনের আড্ডায় রান্নাবান্না বা সাংসারিক আলোচনার থেকে বেশি করে জায়গা করে নিয়েছিল স্কুল ড্রেস ও জুতো ছোট হয়ে যাওয়ার বিষয়টি।
উল্লেখ্য, আগামী ৩ তারিখ থেকেই অষ্টম শ্রেণি থেকে পড়ুয়ারা স্কুলে পড়াশুনা শুরু লড়ছে। তবে প্রাক প্রাইমারি থেকে সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়ারাদেরও এই জীবনে ফেরাতে রাজ্য সরকারের প্রস্তাবিত ভাবনা অনুযায়ী সোমবার শুরু হল পাড়ায় শিক্ষালয়।এলাকার ফাঁকা জায়গা বা মাঠের মধ্যেই বাচ্চাদের বসিয়ে পড়াশুনা করানোর হবে। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাই সেই শিক্ষালয়ে পড়াবেন। কিন্তু তফাত একটাই, ক্লাস হবে রুমের মধ্যে নয়, মাঠের মধ্যে। করোনা যাতে ছড়িয়ে না পড়ে তাই খোলা জায়গায় পড়াশুনা করানোর উদ্যোগ। প্রায় দু’বছর স্কুল বন্ধ থাকার পর ফের স্কুলের আমেজ।
কিন্তু অনেকের কাছেই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে দু’বছর আগের জামা-জুতো নিয়ে। দু’বছরে যেমন অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে তেমনই শিশুদের শারীরিক পরিবর্তনও হয়েছে। এই বয়সে বাচ্চাদের চেহারা দ্রুত বাড়ে।দু’বছরে যেমন অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে তেমনই শিশুদের শারীরিক পরিবর্তনও হয়েছে। এই বয়সে বাচ্চাদের চেহারা দ্রুত বাড়ে।
আগের তুলনায় বড় হয়েছে তারা, কিন্তু জামা-জুতো সেই দু’বছর আগেরই। এতদিন আলমারি বন্দি ছিল তা। স্কুল চালুর ঘোষণা হওয়ার পরেই আলমারি থেকে তা নামিয়ে বাচ্চাদের পরাতে গিয়ে বিপদে পড়ছেন মায়েরা।জামা যে আর গায়ে হয় না, পা বড় হয়েছে, জুতোও ঢুকছে না। জুতোর ব্যবস্থা করা গেলেও দোকানে গিয়ে স্কুল ড্রেস তাড়াতাড়ি তৈরি করানো সম্ভব নয়। দোকানেও নেই এমন মাপ মত স্কুলের জামা। তাই বানাতে হবে।
অভিভাবকদের এখন চিন্তার বিষয় এটাই। এমনই এক অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন জোৎস্না ভদ্র। ক্লাস সেভেনে পরে তাঁর মেয়ে। ফাইভের পর থেকে স্কুলের নতুন জামা কেনা হয়নি। দু’দিন আগে পুরনো জামা বের করে পরাতে গিয়ে মাথায় হাত পড়েছে তাঁর। তিনি বলেন, ‘মেয়ে বলছে ড্রেস ছোট হয়ে গেছে। কী করব? কিন্তু কিছু করার নেই সঙ্গে সঙ্গে তো ব্যবস্থা করা যায় না।’আর এক অভিভাবক সুষমা চৌধুরীরও একই সমস্যা। মেয়ের স্কুলের জামা কোনও রকমে পরানো গেলেও পায়ে ঢোকেনি জুতো। তাই আজ বাড়ির জুতো পরিয়েই পাঠিয়েছেন। বললেন, ‘যাদের হচ্ছে ঠিক আছে যাদের হচ্ছে না তারা কী করবে?’ আরও বললেন, ‘দোকান থেকেও বলেছে কয়েকদিন পরে এসে জামা নিতে। কয়েকদিন এই কষ্ট করেই পরে আসবে কী করব আর?’
যেহেতু জামা-জুতো স্কুল থেকেই দেওয়া হয় তাই অভিভাবকরা স্কুলকেই জানাচ্ছেন এই সমস্যার কথা। যদি ব্যবস্থা করা হয় স্কুলের থেকে তাহলে ভাল হয় বলে মনে করছেন প্রতিমা মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘শিক্ষিকাদের কাছে অনুরোধ করব যদি তা রাখে তো ভাল হয়।’