Latest News

তুরস্কে ভয়াল ভূমিকম্পের পূর্বাভাস এসেছিল তিনদিন আগেই, কীভাবে ভূকম্প আগাম টের পাওয়া যায়

দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভেঙে পড়া বহুতলের ধ্বংসাবশেষ হাতড়ে কাছের মানুষের খোঁজ করে চলেছেন কেউ। রক্তাক্ত শরীরে ধ্বংসস্তূপ দু’হাতে খামচে ধরে আর্তনাদ করে চলেছেন শয়ে শয়ে মানুষ। কেউ খুঁজে পাচ্ছেন তাঁদের প্রিয় জনের নিথর দেহ, কেউ বা ক্ষীণ আশায় শরীর ঝাঁকিয়ে প্রাণের স্পন্দর ফেরানোর বৃথা চেষ্টা করছেন। তাঁদের বুক ফাটা কান্নায় ভারী হচ্ছে আকাশ। এক প্রলয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগ এক লহমায় ছারখার করে দিয়েছে সব। শেষ করে দিয়েছে শয়ে শয়ে জীবন। রক্তাক্ত, নিস্পন্দ কাঠামোগুলো আজ ধুলোর আচ্ছাদনে ঢাকা। কেউ পলক ফেলছেন, কেউ নিস্পন্দ। কেউ আরও একবার সর্বস্ব খুইয়ে বসে রয়েছেন রাস্তায়। বহু বছর পর এ ভাবেই ধ্বংসের (Earthquake) স্মৃতি ফিরে এল তুরস্কে। ফের তীব্র ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল দেশ। 

Huge earthquake in south-east Turkey kills more than 300 - BBC News

মৃত সাতশোর উপরে। আহত হাজারের বেশি। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি গ্রাম ও শহরাঞ্চলে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে উদ্ধারকাজ শুরুই করা যায়নি বলে ক্ষয়ক্ষতি নির্দিষ্ট করে জানানো যায়নি। আরও অনেক খারাপ খবর অপেক্ষা করে রয়েছে, তা মেনে নিচ্ছেন সরকারি অফিসারেরা। জানা গিয়েছে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৭.৮। এর পরে ৬.৭ মাত্রার বেশ কয়েকটি ভূকম্প-পরবর্তী কম্পন (Aftershock) টের পাওয়া গিয়েছে। ১৯৯৯ সালের অগস্টে পর পর দু’টি ভূমিকম্পে ২০ হাজার মানুষের মৃত্যুর পর এই প্রথম এত বড় বিপর্যয়ের মুখে তুরস্ক।

12 dead, 400 injured as massive earthquake hits Turkey, triggers  mini-tsunami - Oneindia News

বিশাল বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ যে আসতে চলেছিল তা আগেই টের পেয়েছিলেন এক ডাচ ভূবিজ্ঞানী ও আবহাওয়াবিদ ফ্র্য়াঙ্ক হুগারবিটস। তিনি অঙ্ক কষে আগেই সতর্ক করেছিলেন ৭.৫ রিখটার মাত্রা ভূমিকম্প হতে পারে তুরস্কে। গাজিয়ানতেপ প্রদেশের পূর্ব দিকে নুরদাগি শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার পূর্বে ভূগর্ভের প্রায় ১৮ কিলোমিটার গভীরে ভূস্তরে যে পরিবর্তন হচ্ছে তা আগেই টের পেয়েছিলেন ফ্র্যাঙ্ক। ভূমিকম্পের তিন দিন আগেই তিনি সতর্ক করে টুইট করেছিলেন–

প্রত্যক্ষদর্শীরাও জানাচ্ছেন, ধ্বংসস্তূপের ভিতর থেকে চিৎকার শুনতে পাচ্ছেন তাঁরা। কোথাও আবার আতঙ্কে ভাঙা বাড়ির স্তূপের উপরে গিয়েই আশ্রয় নিয়েছেন দুর্গতরা। কিন্তু আটকে পড়া বাসিন্দাদের কী ভাবে বাইরে আনা হবে, কোথায়ই বা আশ্রয় দেওয়া হবে মাথার ছাদ হারানো মানুষগুলোকে, তা নিয়ে দিশেহারা স্থানীয় প্রশাসন। গৃহস্থ বাড়ি, বহুতল, স্কুল, ছাত্রাবাসের পাশাপাশি দু’একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রও ভেঙে পড়েছে। এমনকী রাস্তাঘাট এমন ভাবে ভেঙে গিয়েছে যে, ধ্বংসস্তূপ সরাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকারি-বেসরকারি উদ্ধারকারী দল। পাঠানো যাচ্ছে না অ্যাম্বুল্যান্সও। ফলে প্রাথমিক ভাবে উদ্ধারকাজ শুরু করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারাই।

Powerful quake kills more than 600 people in Turkey and Syria - Los Angeles  Times

কীভাবে ভূমিকম্প (Earthquake) আগাম বোঝা যায়?

ভূবিজ্ঞানী ফ্র্যাঙ্ক বলেছেন, সোলার ও লুনার জিওমেট্রি থেকে অঙ্ক কষে এবং মাটির স্তরের কম্পন পরীক্ষা করে তিনি ভূমিকম্পের আগাম আভাস পেয়েছিলেন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, উপগ্রহ চিত্রে পৃথিবীর যে রূপ এখন আমরা দেখতে পাই তার সঙ্গে কোটি কোটি বছর আগের পৃথিবীর মিল নেই। একটু একটু করে রূপ বদলাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই বদলের অন্যতম কারণ হচ্ছে এই টেকটনিক প্লেট ও তার নীচে পৃথিবীর গভীরে থাকা ম্যান্টল স্তরের চলাফেরা। গলিত ম্যান্টলের প্রবাহের ফলে তার উপরের টেকটনিক প্লেটগুলোর একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। কখনও মৃদু ধাক্কা আবার কখনও জোরদার ঠোকাঠুকি হয়ে প্লেটগুলো একে অপরের থেকে দূরে সরে যায়। কখনও বা একটি প্লেট অন্যটার ঘাড়ে উঠে যায়। এই ধাক্কাধাক্কির ফলেই ভূত্বকের পরিবর্তন হয়। আর এই পরিবর্তনের সঙ্গী হয় ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত বা কখনও সুনামি।

বিগত কয়েক দশক ধরে এই ম্যান্টলের গতিবিধি, টেকটনিক প্লেটগুলোর অবস্থান, সংঘর্ষের ফলে তৈরি শক্তিপ্রবাহ নিয়ে গবেষণা করছেন ভূবিজ্ঞানীরা। কম্পন মাপক যন্ত্র বা সিসমোগ্রামের সাহায্যে পাওয়া তথ্য থেকে যে গাণিতিক মডেল তৈরি করেছেন, তা থেকে তাঁরা পৃথিবীর বিভিন্ন স্তর সম্পর্কে অনেক নিখুঁত ভাবে জানা গেছে। ভূমিকম্পের কারণ জানতেও তৈরি হয়েছে মডেল।

Predicting earthquakes: are we there yet? › Ask an Expert (ABC Science)

গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে পৃথিবীর উপরিস্তরের প্লেটের কয়েক মিলিমিটার সঞ্চরণ মাপাও সম্ভব। তিন ধরনের কম্পাঙ্কের রেডিও তরঙ্গের চেহারা-চরিত্র বাছ-বিচার করেও ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া যায়। ভেরি লো (কম্পাঙ্ক-মাত্রা তিন থেকে তিরিশ কিলো হার্ৎজ), এক্সট্রিমলি লো (কম্পাঙ্ক-মাত্রা তিনশো হার্ৎজ থেকে তিন কিলো হার্ৎজ) ও আলট্রা লো ফ্রিকোয়েন্সি (কম্পাঙ্ক-মাত্রা তিন থেকে তিনশো হার্ৎজ) রেডিও সিগন্যাল বিশ্লেষণ করা হয়। দেখা গেছে,  অত্যন্ত কম কম্পাঙ্কের এই রেডিও তরঙ্গগুলো মাটিতে দশ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরে যেতে পারে। সমুদ্রের তলায় ভূকম্প হলে রেডিও সিগন্যালগুলো ছড়ায় আরও বেশি দূরে। জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করেই আমেরিকার পারডিউ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এরিক কালাইস হেইতি দ্বীপে ২০১০ সালে যে এক ভয়ঙ্কর ৭.২ মাত্রার ভূমিকম্প হবে তার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। একইভাবে কোস্টা রিকার নিকোয়াতে ১৯৯১ ও ২০০১ সালে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল।

ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত বা ভূমিধ্বস হলে সে শক্তি তৈরি হয় তাই তরঙ্গরূপে ভূ-পৃষ্ঠতল বরাবর বা পৃথিবীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয় যাকেই ভূকম্পন তরঙ্গ বা ভূ-তরঙ্গ তথা সিসমিক ওয়েভ বলে। ভূবিজ্ঞানীরা এই তরঙ্গগুলিকে বিশ্লেষণ করেন। ভূকম্পনমাপক যন্ত্রের সাহায্যে এই ভূকম্পন তরঙ্গের বিস্তার ও কম্পাঙ্কের পরিমাপ নির্ণয় করা হয়।

You might also like