
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মাত্র ক’মাস আগের কথা। তখন জানুয়ারি মাস। সর্বভারতীয় তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) নেতৃত্ব নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলেছিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee)। একুশের ভোটে বিপুল জয় সত্ত্বেও তৃণমূলের (TMC) মধ্যে সে সময়ে যেন ডামাডোলের বাজার! দলের প্রবীণতন্ত্রের মুখে প্রকারান্তরে তখন আক্রান্ত নতুন প্রজন্মের নেতা।
এখন তৃণমূলের অন্দরে সেই রসায়ন আর নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) পর অভিষেকই যে সংগঠনের শেষ কথা সেই ধারণা একপ্রকার বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছে দলে ও বাংলার রাজনীতিতে। আর সেই আবহে দেখা গেল, অভিষেক সম্পর্কে মতও বদলে ফেলছেন প্রবীণরা!
বৃহস্পতিবার অভিষেক ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি সফরে গিয়েছেন। এদিন তৃণমূলের সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয়েছিল রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায়ের সরকারি বাসভবনে। সেখানে দিদি আধ ঘণ্টার মতো থেকে বেরিয়ে যান। তার পর সাংসদদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে বৈঠক করেন অভিষেক। সেই বৈঠকের পর শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দ্য ওয়ালকে বলেন, “আমার বলতে দ্বিধা নেই অভিষেক অনেক পরিণত রাজনীতিকের মতো আচরণ করছে”। কল্যাণ জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চলে যাওয়ার পর অভিষেক প্রায় ১ ঘণ্টা তাঁদের সঙ্গে ‘আড্ডা’ দেন। বিভিন্ন বিষয় ধরে ধরে খোলা মনে সব সাংসদদের মতামত শোনেন। শ্রীরামপুরের সাংসদের কথায়, “অভিষেক নিজের মত চাপিয়ে না দিয়ে যে ভাবে সবার মত নিল তাতে আমি অভিভূত। এই তো ম্যাচিওর নেতার মতো আচরণ। ভেরি ম্যাচিওর। খুব ভাল লাগল”।

পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, কল্যাণের এই বোধদয় তাৎপর্যপূর্ণ। তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ রসায়নে অভিষেকের উত্থানের ব্যাপারে যাঁরা প্রশ্ন তুলেছিলেন কল্যাণ তাঁদের অন্যতম ছিলেন বলে কেউ কেউ মনে করেন। সেই কল্যাণ যদি অভিষেককে পরিণত নেতা বলে মেনে নেন, তা হলে ধরে নেওয়া যেতে পারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর তৃণমূলের অভিষেক তাঁর অবস্থান প্রতিষ্ঠা করতে সফল হয়েছেন। অর্থাৎ সাংগঠনিক ভাবে এ এক নতুন তৃণমূল। মুকুল-পার্থ-সুব্রত বক্সীদের জমানা পিছনে ফেলে সময়ের সঙ্গে অভিযোজন ঘটছে বাংলার শাসক দলের।
প্রসঙ্গত, অভিষেক সম্পর্কে কল্যাণের মন্তব্য নিয়ে এ বছরের গোড়ায় বেশ কয়েকদিন সরগরম ছিল রাজ্য রাজনীতি। ডায়মন্ড হারবারের প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের অভিষেক বলেছিলেন, তাঁর ব্যক্তিগত মত হল বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিতে কোনও নির্বাচন না হওয়াই ভাল। বড়দিনের উৎসব, পুজো এ সব এড়িয়ে চললেই ভাল হয়।
এর পরই কল্যাণ হঠাৎ মুখ খুলেছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, অভিষেক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধাচরণ করছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক হয়ে কোনও ব্যক্তিগত মত দেওয়া যায় না। এটা ঠিক নয়। কল্যাণ এও বলেন যে উনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই নেত্রী হিসাবে মানেন, আর কাউকে নেতা বলে মানেন না।
পরে টেলিভিশন চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে কল্যাণ প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, “কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় কী বলেছেন? উনি আমায় মানেন না, মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়কে মানেন। ঠিকই তো বলেছেন। আমায় মানবেন কেন? আমি অতি ক্ষুদ্র, তুচ্ছ একজন তৃণমূলের কর্মী!”
এটুকু শুনে মনে হতে পারে শ্রীরামপুরের সাংসদ সম্পর্কে বোধহয় বিনয়ী প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। কিন্তু এরপরেই ওই সাক্ষাৎকারে অভিষেক বলেছিলেন, “…তারপর দেখলাম উনি (পড়ুন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়) শ্রীজাতর কবিতা উদ্ধৃত করে লিখলেন, ‘তুমিও মানুষ, আমিও মানুষ, তফাত শুধু শিড়দাঁড়ায়। আমার বিরুদ্ধে বলে আপনাকে শিরদাঁড়ার জোর প্রমাণ করতে হচ্ছে? আগে তৃণমূলকর্মীদের হয়ে দাঁড়ান, তারপর বুঝব শিড়দাঁড়ায় কত দম।”
বৃহস্পতিবার বোঝা গেল, তৃণমূলে সেই অধ্যায় অতীত। বরং পরিণত অভিষেককে মেনে নিচ্ছে দলের প্রবীণতন্ত্রও। তবে পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে অভিষেকও প্রবীণদের নিয়েই আগামী দিনে চলতে চাইছেন। এই কারণেই দলের সাংসদদের গুরুত্ব দিয়ে তাঁদের মতামতও নিচ্ছেন তিনি।