Latest News

মন ছুঁয়ে যায় বিজয়ায় ইস্টবেঙ্গলের বার্তা, গণেশের কাছে তাঁবুই মণ্ডপ, দলটাই দুর্গা

শুভ্র মুখোপাধ্যায়

ময়দানে (Kolkata Math) এমন অনেক সমর্থক (East Bengal Fans) রয়েছেন, যাঁদের কর্মকাণ্ড নিয়ে একটা আস্ত বই লেখা হয়ে যাবে।

যেমন ধরুণ, বাবা-মায়ের মধ্যে কেউ প্রয়াত হয়েছেন আগেরদিন। সদ্য বড় শোক পেয়েও দলের (East Bengal) খেলার টানে মাঠে চলে এসেছেন কাচা গলায়। গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি, সবাই তাঁর দিকে সহানুভূতির দৃষ্টিতে তাকিয়ে। তবুও তিনি নির্বাক। পলকহীন চোখে দলের খেলা দেখছেন।

ভালবাসার কোনও খাদ নেই তাঁর কাছে। বাবা অথবা মা চলে যেতেও কেঁদেছেন, আবার যে কোনও ম্যাচে দল হারলেও কাঁদেন।

ফের জয়, গুজরাতকে হারিয়ে জাতীয় গেমসের সেমিফাইনালে বাংলা

এমনও দেখেছি, চাকরিপ্রার্থী যুবক ইন্টারভিউ কোনওক্রমে দিয়ে এসেই লিগের ম্যাচ দেখতে মাঠে চলে এসেছেন। এসেই সবুজ গ্যালারিতে গল্পও করেছেন বাকিদের সঙ্গে। ‘‘জানিস তো রে, আজ ইন্টারভিউটার সময়টা এমন বাজে ছিল যে খেলার জন্য অর্ধেক প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই চলে এসেছি।’’

সেই মন ছুঁয়ে যাওয়া ভিডিও ইস্টবেঙ্গলের।

ভালবাসার কোনও রং হয় না, হয় না কোনও ভাষাও। তাই ওই সমর্থকদের জন্যই বেঁচে রয়েছে কলকাতার ফুটবল, আরও ভাল করে বললে বাংলার ফুটবলই। তাঁরাই আসল অক্সিজেন ময়দানের, আসল জিয়নকাঠি।

এমনই এক লাল হলুদ সমর্থক রয়েছেন, তাঁর নাম গণেশ। তাঁর হাত-পা থাকলেও পথ দুর্ঘটনায় সেগুলি অবশ হয়ে গিয়েছে , হুইলচেয়ারে চলাফেরা করেন। দলের প্রতি তাঁর ভালবাসায় কর্তারাও গর্ববোধ করেন। তাঁকে দারুণ এক স্বীকৃতি দিল ইস্টবেঙ্গল ক্লাব। তারা এদিন রাত পৌনে নয়টা নাগাদ সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে গণেশই যেন লাল হলুদের সকলের প্রতিনিধি।

নয়া প্রজন্ম তাঁর দলের প্রতি ভালবাসায় নতজানু। সুবেশা তরুণ-তরুণীরা ওই প্রতিবন্ধী সমর্থককে শারদোৎসবের মেজাজের সঙ্গে পরিচিত করাচ্ছেন। তাঁকে উৎসবের সময় মাঠে নিয়ে এসেছেন, তাঁবু ঘুরে দেখাচ্ছেন। কেউ আবার আশীর্বাদও নিচ্ছেন গণেশের।

তিনি জিতেছেন দলের প্রতি ভালবাসা দেখিয়ে, তিনি বাকিদের প্রেরণাদাতা হিসেবে হাজির হয়েছেন। তাঁকে দেখে নয়া প্রজন্মের যুবক-যুবতীরা আনন্দে উদ্বেল হন, বাকি জীবনের সাহস খোঁজেন। মন বলে, গণেশদা পারলে আমরা পারব না কেন!

ওই লাল হলুদ সমর্থকের কাছে আসল মণ্ডপ হল লাল হলুদ তাঁবু, আর দলটি হল দুর্গা। সেটাকেই তিনি প্রতিমা রূপে পুজো করেন। দলের আরাধনা করাই তাঁর কাজ, বাকিটা তো তাঁর হাতে নেই। মাঠে এসে গণেশের করজোরে প্রণাম সকলের নজর কেড়ে নেবে, চিকচিক করবে চোখের দুটি পাশ।

ওই সমর্থককে এবার লাল হলুদ দল কোচিতেও নিয়ে গিয়েছে। তাঁকে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ম্যাচে মাঠে রাখা হবে। পূর্ব কলকাতার বাসিন্দাকে দলের প্রতি ভালবাসার জন্য যা সম্মান দেওয়া হল উৎসবের সময়, সেটি বাকি দলকেও পথ দেখাবে সন্দেহ নেই।

লাল হলুদের এই ভাবনাকে কুর্নিশ।

You might also like