Latest News

মমতা ডি লিট পাচ্ছেন, দেবতারা আনন্দিত হচ্ছেন: রাজ্যপাল

দ্য ওয়াল ব্যুরো: শেষ কবে বাংলার সাংবিধানিক প্রধান রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেছেন? শেষ কবে নবান্নের সঙ্গে রাজভবনের সম্পর্ক এতটাই সৌজন্য ও শিষ্টাচারের ছিল?

রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস যেন মাইলফলক তৈরি করলেন। সোমবার সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে রাজ্যপাল আনন্দ বোস পষ্টাপষ্টিই বোঝাতে চাইলেন, এই যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডিলিট উপাধি পাচ্ছেন এ এক অমৃতক্ষণ। কারণ, দেবতারাও আনন্দ পাচ্ছেন।

রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের (Governor CV Ananda Bose) ভূমিকা নিয়ে রাজ্য বিজেপির একটা বড় অংশ মোটেই খুশি নয়। স্বপন দাশগুপ্ত, শুভেন্দু অধিকারীর মতো নেতারা রাজ্যপালের হাতেখড়ি অনুষ্ঠানকে তীব্র কটাক্ষ করেছিলেন। সোমবার বোঝা গেল, শুভেন্দুদের সেই সমালোচনা ও টিপ্পনি একেবারেই গায়ে মাখছেন না রাজ্যপাল। তিনি নবান্নের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে আনন্দেই রয়েছেন।

এদিন সেন্ট জেভিয়ার্স ইউনিভার্সিটির সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীকে সাম্মানিক ডি লিট দেওয়া হয়। সেই মঞ্চেই রাজ্যপাল তাঁর ভাষণে সংস্কৃত শ্লোক উদ্ধৃত করে ইংরাজি তর্জমা করেছেন। যার বাংলা করলে দাঁড়ায় , ‘মহিলারা সম্মানিত হলে, দেবতারা আনন্দিত হন।’

রাজ্যপাল তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী রাজনীতির জন্য এই সম্মান পাচ্ছেন না। তিনি পাচ্ছেন তাঁর সাহিত্য, কবিতা, ছবির জন্য।’ সেইসঙ্গে রাজ্যপাল উল্লেখ করেন দেশবিদেশের রাজনীতিকদের কথা, যাঁরা রাজনীতির পাশাপাশি সাহিত্য ক্ষেত্রেও অবদান রেখেছিলেন।

চেক প্রজাতন্ত্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, এদেশে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন, অটলবিহারি বাজপেয়ী সাহিত্য চর্চার জন্য পরিচিত ছিলেন। তাঁদের নাম উল্লেখ করেছেন রাজ্যপাল। মমতাকে এদিন তিনি তাঁর সাংবিধানিক বন্ধু বলেও সম্বোধন করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বসু।

গত নভেম্বরে সেন্ট জেভিয়ার্স ইউনিভার্সিটি ঘোষণা করেছিল, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তারা সাম্মানিক ডি লিট ডিগ্রি দেবে। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সাম্মানিক ডি লিট দেওয়া হয় মুখ্যমন্ত্রীকে। সেই সম্মান গ্রহণ করার পর মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘এই সম্মান আমি বাংলার মানুষের জন্য উৎসর্গ করলাম।’ সেইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করেন, মাদার টেরেসাকে সম্মান জানাতে একটি চেয়ার রাখা হোক বিশ্ববিদ্যালয়ে।

রাজ্যপালের হাতেখড়ি অনুষ্ঠানের পরেই তিনি দিল্লি চলে গিয়েছিলেন। সেই সময়ে বিজেপির ঘরোয়া আলোচনায় কেউ কেউ বলা শুরু করেছিলেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিশ্চয়ই রাজ্যপালকে যা বোঝানোর বুঝিয়ে দেবেন। রাজ্যপাল দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পরীক্ষা পে চর্চা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। পরের দিন দেখা করেছিলেন অমিত শাহের সঙ্গেও। সোমবার রাজ্যপাল যে ভাষণ দিয়েছেন তা শুনে অনেকেই বলছেন, বাংলা বিজেপি আরও বিড়ম্বনায় পড়ল তো!

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বইমেলার উদ্বোধনে নিজের লেখা বইয়ের কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘কেউ কেউ আমায় বিদ্রুপ করে। আমি তাদের প্রশ্ন করতে চাই, রাজনীতি করলে কি সাহিত্য চর্চা করা যায় না?’ এদিন দেখা গেল রাজ্যপাল উপমা টেনে বোঝালেন, রাজনীতিকদের সাহিত্য চর্চা নতুন কোনও বিষয় নয়। অনেকেই তা করেছেন। সে জন্য প্রশংসা ও সম্মানও পেয়েছেন। রাজনীতিকদের এহেন সাহিত্য চর্চাকে মর্যাদা দেওয়া উচিত।

You might also like