
ক্লাস নাইনের ছাত্রী মাইসি রে অ্যাডামস জানিয়েছে, শিক্ষকের এমন মন্তব্যের পরে সে এক রকম জোর করেই ক্লাস থেকে বেরিয়ে শৌচালয়ে চলে যায়। কারণ এ ছাড়া অন্য উপায় ছিল না তার। কিন্তু এর পরে ক্লাসে ফিরে এলে শিক্ষক আর ঢুকতে দেননি তাকে। তার দাবি, তার ব্যাগ-বই-খাতাও ক্লাসরুম থেকে বার করে অন্য জায়গায় সরিয়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনা যদি এ দেশের কোনও প্রত্যন্ত গ্রাম্য এলাকায় ঘটত, তা হলে হয়তো এ নিয়ে তেমন তোলপাড় হতো না। হয়তো এমন অনেক কিছুই মেয়েদের সঙ্গে ঘটে থাকে পিছিয়ে পড়া সমাজে। কিন্তু এই ঘটনার স্থান ইংল্যান্ড। আধুনিকতম দেশের আধুনিক স্কুলে এমন ঘটনা ঘটার কতা জানতে পেরে নেটিজেনরা তাই প্রবল নিন্দায় সরব হয়েছেন।
ইংল্যান্ডের গ্লসেস্টার শহরের ডার্সলে এলাকার ওই স্কুলটিতে মাইসি নামের ছাত্রীটির অন্য সহপাঠীরা জানিয়েছে, যে বার বিনা অনুমতিতে জোর করে ক্লাস থেকে বেরিয়ে যায় মাইসি, তার আগেও তিন-তিন বার ওই শিক্ষকের কাছে অনুমতি চেয়েছিল সে। তিন বারই শিক্ষক শৌচালয়ে যেতে বারণ করেন। চতুর্থ বার তার যাওয়াটা যে জরুরি, সেটা বোঝানোর জন্য পিরিয়ড হওয়ার কথাও জানায় মাইসি। কিন্তু তখন উত্তর আসে, ‘পিরিয়ড চেপে রাখো।’ এর পরেই ক্লাস থেকে বেরিয়ে যায় মাইসি।
মাইসির মা, কেলি অ্যাডামস জানিয়েছেন, মাইসির এন্ডোমেট্রিওসিসের সমস্যা রয়েছে। সেই কারণে প্রতিটা পিরিয়ডে অসম্ভব বেশি ব্লিডিং হয় তার। এমনকী প্রায়ই মাসে এক বারের বেশি এই সমস্যায় পড়তে হয় তাকে। ফলে তার জন্য এই বিষয়টি অত্যন্ত কষ্টকর ও গুরুত্বপূর্ণ। এরকম অবস্থায় তাকে শৌচালয়ে যেতে না দেওয়ার ঘটনাটি অত্যন্ত অসংবেদী।
কেলি আরও জানিয়েছেন, এ সব যদি বাদও দেওয়া হয়, তবু কোনও শিক্ষক ছাত্রীকে বাধা দিতে পারেন না শৌচালয়ে যাওয়ার জন্য। এবং সে যখন পিরিয়ড হওয়ার কথা বলছে, তার পরেও সেটা ‘চেপে রাখতে’ বলা শুধু অন্যায় নয়, অযৌক্তিকও। পিরিয়ড যে ‘চেপে রাখা’ যায় না, এটা প্রতিটা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষই জানেন।
মাইসি বলেছে, “উনি ওই কথা বলার পরে সারা ক্লাসই স্তম্ভিত হয়ে গেছিল। আমার পক্ষে আর দাঁড়িয়ে থাকা বা তর্ক করা সম্ভব ছিল না, আমি ব্যাগ থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন বার করে নিয়ে ছুটে চলে যাই টয়লেটে। ফিরে এসে দেখি, আমায় ঢুকতে দেওয়া হল না। আমার ব্যাগও ছিল না ক্লাসে।”
কেলি বলেন, “আমি যখন মাইসির কাছে ঘটনাটা শুনলাম, রাগে, দুঃখে কান্না আসছিল আমার। এই সমস্যা আমারও আছে। এই বয়স আমিও পেরিয়ে এসেছি। আমি বুঝতে পারছিলাম, ওর কেমন লাগছিল ওই সময়ে। শুধু তা-ই নয়, ও প্রচণ্ড অপমানিত। একটা মেয়েকে পিরিয়ডের সময়ে শৌচালয়ে যেতে বাধা দেওয়া উচিত নয় কখনও। বলতে গেলে, কোনও সময়েই বাধা দেওয়া উচিত নয়।”
স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, ওই স্কুলে ‘পিঙ্ক কার্ড’ পলিসি চালু আছে। পিরিয়ড হলে সেই কার্ডটি দেখাতে হয় শিক্ষককে। তিনি শৌচালয়ে যেতে বাধা দেন না, বা আর কোনও প্রশ্ন করেন না। সে দিন যে কোনও কারণেই হোক, কার্ডটি দেখায়নি মাইসি। তাই এই সমস্যা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক ডেভিড আলেকজান্ডার বলেন, “আমরা স্কুল থেকে মেয়েদের প্যাড এবং ট্যাম্পনও দিই প্রয়োজনে। আমরা এই বিষয়ে যথেষ্ট সংবেদনশীল। নির্দিষ্ট একটি মেয়ের সঙ্গে কী ঘটেছে, সেটা আমি জানি না।”
যদিও প্রধান শিক্ষক এ কথা বললেও, ইউনিসেফের গবেষণা ও পরিসংখ্যান এই কথা বলছে না। ইউনিসেফের দাবি, ইংল্যান্ডের মতো একটা আধুনিক দেশেও ৪৯ শতাংশ স্কুলছাত্রী মাসে অন্তত এক দিন করে স্কুল কামাই করে পিরিয়ডের জন্য। এবং ১০ জনের মধ্যে এক জন কিশোরী খবরের কাগজ, মোজা, টিস্যু পেপার– ইত্যাদি ব্যবহার করতে বাধ্য হয় পিরিয়ডের সময়ে। ইউনিসেফের রিপোর্ট আরও বলছে, ইংল্যান্ডের এক শ্রেণীর মানুষের কাছে এখনও স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করাটা বিলাসিতা। এতে পাঁচ পার্সেন্ট অতিরিক্ত ট্যাক্সও গুনতে হয় দেশবাসীকে।