
পার্শ্বশিক্ষকদের একাধিক দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন চলছে দীর্ঘদিনই। রাজ্য জুড়ে প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিকে কর্মরত শিক্ষকদের দাবি কোনও ভাবেই পূরণ না হওয়ায় সল্টলেকের বিকাশ ভবনের সামনে ধর্নায় বসার জন্য বিধাননগর পুলিশের অনুমতি চান প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষক। অনুমতি না মেলায় হাইকোর্টে মামলাও করেন শিক্ষকরা। শেষমেশ রবিবার বিশেষ বেঞ্চ বসিয়ে ধ্রনার অনুমতি দেয় আদালত। তবে বিকাশ ভবন থেকে ১০০ মিটার দূরে ধর্না ও অবস্থানে বসার অনুমতি পান ৩০০ জন পার্শ্ব শিক্ষক-শিক্ষিকা। বাকিদের সেন্ট্রাল পার্কের কাছে বিধান চন্দ্র রায়ের মূর্তির কাছে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করতে বলা হয়েছে ৷
এই আন্দোলন সম্পর্কে পুলিশকেও আদালতের তরফে বলা হয়েছে, ধর্নায় বসা শিক্ষকদের প্রতি যেন কোনও রকম বেপরোয়া মনোভাব না দেখানো হয়। উল্টো দিকে পার্শ্বশিক্ষকদেরও অনুরোধ করা হয়েছে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করতে। পাশাপাশি তাঁদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, তাঁদের যে দাবিদাওয়াগুলি ন্যায্য বলে মনে হবে, সেগুলি বিবেচনা করে দেখা হবে। সরকারি সূত্রের খবর, আগামী বুধবার ফের শুনানি হবে শিক্ষকদের মামলার। তার আগে পর্যন্ত যেন কোনও রকম অসংবেদনশীল আচরণ না করা হয় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে। কারণ, সব কিছুর পরে তাঁরা রাজ্য সরকারেরই স্টাফ।
এখানেই শেষ নয়। শিক্ষা দফতরের বিরুদ্ধে আরও একটি আন্দোলন ঘনাচ্ছে জঙ্গলমহলেও। পুরুলিয়া, মেদিনীপুর, বাঁকুড়ায় জেলাভিত্তিক ঘেরাও কর্মসূচিতে সামিল হতে চলেছে আদিবাসী সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল। ২০২০ শিক্ষাবর্ষ থেকেই যাতে জঙ্গলমহলের একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাঁওতালি শিক্ষা শুরু করা হয়, সে জন্যই এই ঘেরাও কর্মসূচি বলে জানানো হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে। তাঁদের এই ঘেরাও কর্মসূচির কথা লিখিত ভাবে প্রশাসনকেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সংগঠনের যুব শাখার সভাপতি রাজেন টুডু টেলিফোনে ‘দ্য ওয়াল’-কে বলেন, “আমাদের জল-জঙ্গল-জমির অধিকারের যে বৃহত্তর লড়াই, তাতে শিক্ষা সংস্কৃতির গুরুত্ব খুব জরুরি। সেই কারণেই স্কুলগুলিতে সাঁওতালি ভাষাশিক্ষার দাবিতে ঘেরাও করতে চলেছি আমরা। চলতি মাসের ১৮ তারিখে মেদিনীপুরে এবং আগামী মাসের ২৩ তারিখে পুরুলিয়ার বিভিন্ন স্কুলে এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আপাতত জেলা স্তরের মধ্যে এই আন্দোলন সীমাবদ্ধ থাকলেও, দাবি মানা না হলে আমরা বড় আন্দোলনের পথে নামব।”
কলকাতায় ১১ নভেম্বর থেকে বিকাশ ভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করতে চেয়েছিলেন পার্শ্বশিক্ষকরা। কিন্তু ১৪৪ ধারা দেখিয়ে সে অনুমতি দেয়নি পুলিশ। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ শর্তসাপেক্ষে পার্শ্বশিক্ষকদের অবস্থান-বিক্ষোভ এর অনুমতি দিলেও তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় রাজ্য সরকার। হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ফের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় রাজ্য। তার পরেই অনুমতি মেলে ৩০০ জনের বসার।
এ সবের পাশাপাশিই আবার শিক্ষকদের আরও একটি আন্দোলন ঘনিয়ে উঠেছে রাজ্যের অন্য প্রান্তে। উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুরে রাজ্যের শ্রম প্রতিমন্ত্রী গোলাম রব্বানির বাড়িতে হাজির হন টেট উত্তীর্ন ৬০ জন যুবক। তাঁদের দাবি, তাঁরা উর্দু ভাষায় শিক্ষকতা করার জন্য আবেদন করেছিলেন। অভিযোগ, পরীক্ষায় পাশ করে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে নির্দেশ দেওয়ার পরেও তাঁদের কাউন্সিলিংয়ের জন্য ডাকা হয়নি। এমনকি তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রীরা বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও কাজের কাজ হয়নি।
সোমবার সকালে এই আন্দোলনকারীদের মধ্যে ৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রবিবার মন্ত্রী গোলাম রব্বানির কাছে ওই চাকরিপ্রার্থীরা এলে তিনিও তাঁদের কোনও আশ্বাসই দিতে পারেননি বলে অভিযোগ। এর পরেই মন্ত্রীর বাড়ির সামনে ধর্নায় বসেন ওই আন্দোলনকারীরাও। তাঁরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, সমস্য়া না মিটলে তাঁরা আমরণ অনশন শুরু করবেন।
ইসলামপুর থানার পুলিশ ধর্না তুলে নেওয়া নিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেও কোনও ফল হয়নি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় এই চাকরিপ্রার্থীরা। আন্দোলনকারীদের তরফে রিজওয়ান আলম রিয়াজ জানান, টেট পাশ করার পরে তাঁদের ইন্টারভিউ হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত নিয়োগের নোটিস জারি হয়নি। একাধিক বার মন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়ে আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই মেলেনি।
এবার আশ্বাস তো দূরের কথা, হতে হল গ্রেফতারও! চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, তাঁরা শান্তিপূর্ণ ভাবেই আন্দোলন করছিলেন। তবুও পুলিশ এসে বেআইনি ভাবে তাঁদের গ্রেফতার করেছে। যদিও ইসলামপুর পুলিশ জেলার সুপার শচিন মাক্কার জানান, আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় তাদের প্রিভেন্টিভ অ্যারেস্ট করা হয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে।