Latest News

‘টোকাটুকিতে বাতিল হবে স্কুলের অনুমোদন!’ সংসদের সিদ্ধান্তে যৌক্তিকতা নিয়ে কী বলছে শিক্ষা মহল

দ্য ওয়াল ব্যুরো: রাত পোহালেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা (HS 2022)। আর তার আগেই সংসদের তরফে প্রতিটি স্কুলকে কড়া নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। ‘টোকাটুকি হলেই বাতিল হবে স্কুলের অনুমোদন’! সংসদের এই নির্দেশের পরে শোরগোল পরে গেছে শিক্ষা মহলে।

কারও কথায়, ‘এই নির্দেশের পর শিক্ষক-শিক্ষিকার মধ্যে আরও বেশি সচেতনতা বাড়বে’, তো কারোর কথায়, ‘এই নির্দেশের আইনি যৌক্তিকতা কতটা তা দেখতে হবে’, আবার কারও মতে, ‘স্কুলের অনুমোদন বাতিল হওয়া মানে অনেক নির্দোষ পড়ুয়ার ভবিষ্যত প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দেওয়া’।

পরীক্ষা শুরুর আগেই সংসদের নির্দেশ ঘিরে শুরু হয়ে গেছে নানান আলোচনা। প্ৰশ্ন উঠছে সত্যি কী কোনও পড়ুয়া বা শিক্ষক-শিক্ষিকার ভুলে স্কুলের অনুমোদন বাতিল করা সম্ভব? অনেকের মতে, এই নির্দেশ ‘টোকাটুকি’র মত অভ্যাস পরিবর্তন করতে খুব ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে।

কী মনে করছে শিক্ষক মহল? (HS 2022)

সংসদের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন তিলজলা বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা অভিনন্দা ঘোষ দস্তিদার। বলেন, ‘এই নির্দেশ নিঃসন্দেহে ভাল কারণ এতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা আরও বেশি সচেতন হবেন। পরীক্ষা সুষ্ঠভাবে হবে।’ তবে তিনি মনে এও মনে করেন যে, কারও ভুলের জন্য গোটা স্কুলের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেওয়া উচিত নয়।

তাঁর কথায়, ‘স্কুলের সঙ্গে তো শুধু শিক্ষক-শিক্ষিকা নন, অনেক বাচ্চার ভবিষ্যৎ জড়িয়ে থাকে। একটা স্কুলের অনুমোদন বাতিল হওয়া মানে অনেক বাচ্চার ভবিষ্যত প্রশ্নের মুখে দাঁড়ায়। তাই কোনও শিক্ষক-শিক্ষিকার বা কোনও পরীক্ষার্থীর ভুলে হয় তো এতবড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। নিশ্চয় কোনও বোঝাপড়ার জায়গা থাকবে।’

Image - 'টোকাটুকিতে বাতিল হবে স্কুলের অনুমোদন!' সংসদের সিদ্ধান্তে যৌক্তিকতা নিয়ে কী বলছে শিক্ষা মহল
ফাইল চিত্র

এবছর প্রথম হোম সেন্টারে পরীক্ষা হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক। চেনা পরিবেশে পরীক্ষা দেবেন পরীক্ষার্থীরা। তাই আগে থেকেই যে ‘টোকাটুকি’ হবে তা ধরে নেওয়া উচিত নয় বলে মনে করেন জগবন্ধু ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার্থীরা নিজের স্কুলে চেনা পরিবেশে পরীক্ষা দিচ্ছে। আগে থেকেই টোকাটুকি হবে এমন ভাবার তো প্ৰয়োজনই দেখছি না। সংসদ তার মতো নির্দেশ দিয়েছেন। আশা করি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না।’

আবার অন্যদিকে, নির্দেশ এলেও স্কুলের উচিত এমনভাবে পরীক্ষা পরিচালনা করা যাতে সংসদ কোনভাবেই তাদের নির্দেশ বলবৎ করতে না পারে, এমনই মনে করেন মর্ডান ল্যান্ড গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অনন্যা রায় চৌধুরী। তাঁর কথায়, ‘নির্দেশ যাই আসুক, সবার আগে আমাদের সচেতন হতে হবে। যদি আমরা সচেতন হই তো সংসদ কোনভাবেই স্কুলের অনুমোদন বাতিল করার মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।’

সংসদের এমন সিদ্ধান্ত স্কুলের পক্ষে চ্যালেঞ্জের সমান বলে মনে করছেন কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতি। তাঁর কথায়, ‘শিক্ষা সংসদের এমন সিদ্ধান্ত আমাদের পক্ষে চ্যালেঞ্জের সমান। আমরা সেটা মেনে চলার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ তবে তিনি এও মনে করেন যে, একজনের ভুলে গোটা স্কুলের অনুমোদন বাতিল করা কতটা সঠিক তাও প্রশ্নাতীত।

ফাইল চিত্র

তবে এই সিদ্ধান্তের মধ্যে আইনি সঙ্গতি কতটা থাকবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য পবিত্র সরকার। তিনি বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তে আইনি জটিলতা নিশ্চয় আছে। তবে আমার মনে হয় সংসদের এই সিদ্ধান্ত স্কুলগুলোকে সচেতন করতেই বলা হয়েছে। অনলাইনে পরীক্ষার সময় যে অনিয়মের অভ্যাস পড়ুয়াদের মধ্যে তৈরি হয়েছে তা স্কুলে ক্ষেত্রে কতটা মানা সম্ভব হবে তা সেটা দেখার। আমার মনে হয়, এই অনুমোদন বাতিলের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে স্কুলগুলোরও আবেদন করার জায়গা থাকবে।’

আগে এমন হোম সেন্টারে পরীক্ষা হয়নি তাই এই নতুন প্রক্রিয়ায় সংসদের কিছু আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে বলে মনে করছেন যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক তথা শিক্ষাবিদ পরিমল ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘নতুন সিস্টেম, তাই সংসদের পক্ষে কিছু আশঙ্কা থেকেই যায়। সেই আশঙ্কা থেকেই সংসদ এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। তবে আমার বিশ্বাস রাজ্যের শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিজেদের ক্ষমতা বলে এই আশঙ্কা মিথ্যে প্রমাণিত করবেন।’

একরত্তিকে উল্টে ঝুলিয়ে তুমুল মারধর! নৃশংসতার ভিডিও দেখে শিউরে উঠছেন নেটিজেনরা

You might also like