
দ্য ওযাল ব্যুরো: সংখ্যালঘুদের সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে। এমনই বার্তা দিলেন বিজেপির জোটসঙ্গী ও শিরোমণি আকালি দলের নেতা প্রকাশ সিং বাদল। তাঁর কথায়, “এই মুহূর্তে দেশের পরিস্থিতি ভাল নয়। বরং যথেষ্ট উদ্বেগজনক সময়ের মধ্যে দিয়ে এগোচ্ছি আমরা। এখন সব ধর্মকেই সম্মান করতে হবে। যদি কোনও সরকার সফল হতে চায় তবে অবশ্যই সংখ্যালঘুদের সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে। হিন্দু, মুসলমান, শিখ এবং খ্রিস্টান– সবাই একই পরিবারের অংশ। তাই সবার উচিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দেশে যে অশান্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছে তা আটকানো। আর এর প্রথম ধাপ হল, সংখ্যালঘুদের নিয়ে চলা।”
বৃহস্পতিবার অমৃতসরে এক সভায় বক্তব্য রাখার সময়ে এই বার্তাই দিলেন প্রবীণ নেতা। তিনি আরও মনে করিয়ে দেন, দেশের সব ধর্মের মানুষদের একে অপরের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে চলা উচিত। কখনই নিজেদের মধ্যে ঘৃণার বীজ বপন করা উচিত নয়।
একথার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের সংবিধানে লেখা আছে, দেশে ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক শাসন থাকবে। তাই ধর্মনিরপেক্ষতার পবিত্র নীতির যে কোনও ত্রুটি বা বিচ্যুতি আমাদের দেশকে দুর্বল করে দেবে। ফলে ক্ষমতাসীন দলকে অবশ্যই ভারতকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে, ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র রক্ষায় কাজ করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, এই সর্বধর্মসমন্বয়ের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারকে শিখ গুরুদের থেকে শিক্ষা নিতে হবে। সৌভ্রাতৃত্ব এবং সমাজতন্ত্রের পক্ষে ছিলেন শিখেরা। শিখ শাসক মহারাজা রঞ্জিত সিংয়ের কথাও উল্লেখ করেন প্রকাশ সিং বাদল। তিনি বলেন, “রঞ্জিত সিং এক জন মুসলিম বিদেশমন্ত্রীকে নিয়োগ করেছিলেন। তিনি ভোটের চিন্তায় কাতর ছিলেন না। তিনি আমাদের দেশের সংবিধানের লেখা ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটির প্রকৃত অর্থ বুঝতে পেরেছিলেন।”
গত বছরের শেষ দিক থেকেই নাগরিকত্ব আইন নিয়ে তোলপাড় হয়ে গেছে গোটা দেশ।
বস্তুত, এই আইনের যাঁরা বিরোধিতা করছেন তাঁদের বক্তব্য, এই নতুন আইনটির মাধ্যমে ধর্মের ভিত্তিতে বিবেচনা করে অবৈধ অভিবাসীদের দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার যে কথা বলা হয়েছে, তা সংবিধানের মূল কাঠামোর পরিপন্থী। সংবিধান অনুযায়ী ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। যে কোনও ধর্মীয় বিশ্বাসের মানুষের সঙ্গে সমান আচরণ করতে বাধ্য এ দেশের সরকার। নতুন আইন সেই সংবিধানকে আঘাত করছে। এই আইন নাগরিকদের জীবন ও মৌলিক অধিকার তথা সাম্যের অধিকারও লঙ্ঘন করে।
১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য ১২ মাস টানা ভারতে থাকতে হত৷ একইসঙ্গে গত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর ভারতবাস জরুরি ছিল। সংশোধনী বিলে এই দ্বিতীয় নিয়মটিতে পরিবর্তন ঘটানো হচ্ছে। ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আনা নির্দিষ্ট ছ’টি ধর্মাবলম্বীদের জন্য ১১ বছর সময়কালটিকে নামিয়ে আনা হচ্ছে ৬ বছরে। বেআইনি অভিবাসীরা ভারতের নাগরিক হতে পারে না। এই আইনের আওতায়, যদি পাসপোর্ট বা ভিসা ছাড়া কেউ দেশে প্রবেশ করে থাকেন, বৈধ নথি নিয়ে প্রবেশ করার পর নির্দিষ্ট সময়কালের বেশি এ দেশে বাস করে থাকেন, তা হলে তিনি বিদেশি অবৈধ অভিবাসী বলেই গণ্য হবেন।