
অশোক মালহোত্রা
এমন মঞ্চ স্বপ্নে আসে কোনও ক্রিকেটারের। আজ সারাদিন ধরে একটা কথাই শুনেছি, কেকেআর কী প্লে অফে যাবে? মুম্বইকে হারাতে পারবে হায়দরাবাদকে? বিকেলে আমাদের কমপ্লেক্সের পার্কে গিয়েছিলাম, সবাই আমাকে জিজ্ঞাসা করছিল, ‘স্যার, আজ ম্যাচে কী হবে?’
আমি হাসতে হাসতে কমপ্লেক্সের ছেলেদের বলেছিলাম, তোমাদের বাংলার ছেলেকে তাড়াতাড়ি ফেরাতে হবে আজ ম্যাচে, না হলে মনে হয় কেকেআরের প্লে অফে যাওয়া হবে না। নেহাতই রসিকতা করে বলেছিলাম।
আর কী আশ্চর্য্য, সেই রসিকতাই মিলে গেল মঙ্গলবার রাতে। আমি ঋদ্ধিমানকে (সাহা) চিনি অনেকদিন ধরে। বাংলা ক্রিকেটের কোচ থাকার সময় তো বটেই, ওকে আমি ছোটবেলা থেকে চিনি। জানি ঋদ্ধির মনের জোর খুব, আর ভেতরে ভেতরে একটা শক্তি রয়েছে। যেটা বাইরে প্রকাশ করতে চায় না। এমনভাবে থাকে যেন কিছুই হয়নি, আসলে মনের ভেতর কী চলছে, সেটা ওর কাছে যারা থাকে, তারাই জানে।
কলকাতার দলকে এবারের আইপিএল থেকে বিদায় করে দিল খোদ কলকাতারই ছেলে। হয়তো ওর আসল বাড়ি শিলিগুড়িতে, কিন্তু থাকে তো দক্ষিণ কলকাতায়, আরও ভাল করে আমারই প্রতিবেশী হয়ে সাউথ সিটি কমপ্লেক্সে। তাই ঋদ্ধির ব্যাটে কেকেআরের বিদায় নিশ্চিত হতে একটা নতুন প্রেক্ষাপট তৈরি হল।
আমি বরাবরই কেকেআর টিম ম্যানেজমেন্টের বিরোধী, কেননা এই দলে কলকাতারই কোনও ছেলে নেই, নিদেনপক্ষে বাংলার কোনও ক্রিকেটার। ঋদ্ধিমান অন্তত সেটি প্রমাণ করতে পেরেছে বাংলার ছেলেদের ওপরও ভরসা করতে শিখতে হয়। কেউ বলার নেই, তাই নিজেদের মতো টিম করে কেকেআর কর্তৃপক্ষ, এটাই তো নিয়ম, কর্পোরেট ক্রিকেটে আবেগ থাকবে কেন? আমি চাই সামনের বার ঋদ্ধিমান, ঈশানদের দলে রাখুক কেকেআর।
মুম্বইয়ের আগে ব্যাটিং করে ১৪৯/৮-র জবাবে ডেভিড ওয়ার্নার (৫৮ বলে ৮৫) ও ঋদ্ধিমান (৪৫ বলে ৫৮) মিলে রান তুলে দিয়ে চলে গেল। তাও খেলা শেষ করে দিল তিন ওভার আগেই। হায়দরাবাদের জয় ১০ উইকেটে, আর কেকেআরের বিদায় নিশ্চিত করে তারা চলে গেল প্লে অফে। এবারের সবচেয়ে মসৃণ জয়, সবচেয়ে একপেশে ম্যাচ দেখা গেল এদিন শারজা স্টেডিয়ামে।
মুম্বইয়ের মতো হেভিওয়েট দল এত সহজে হারবে, ভাবা যায় না। যদিও এই ম্যাচে মুম্বই দলে রাখেনি তাদের দুই সেরা বোলিং অস্ত্র, ট্রেন্ট বোল্ট ও যশপ্রিৎ বুমরাকে, আবার খেলায়নি হার্দিক পান্ডিয়াকে, হয়তো সেমিফাইনাল ম্যাচের জন্য তুলে রাখল ওদের তাস।
রোহিত শর্মা (৪) চোট কাটিয়ে ফিরল বটে, কিন্তু সফল হতে পারেনি। মুম্বই ইনিংসে বলার্ মতো রান চারজনের, কুইন্টন ডি’কক (২৫), সূর্যকুমার যাদব (৩৬), ঈশান কিশান (৩৩) ও শেষদিকে কাইরন পোলার্ড (২৫ বলে ৪১) রান পেয়েছিল বলেই দেড়শো রানের লক্ষ্যমাত্রা রাখতে পেরেছে।
শারজা স্টেডিয়াম এমনিতেই ছোট, সেই মাঠের ব্যাটসম্যান সহায়ক উইকেটে ২০০ রান না করলে জেতার স্বপ্ন দেখা ঠিক নয়। তবে আসল ম্যাচে হায়দরাবাদের বোলারদের পারফরম্যান্স সত্যিই ভাল। সন্দীপ শর্মা তো দারুণ, তিন উইকেট পেল ৩৪ রানে। দুটি করে উইকেট নিল জেসন হোল্ডার ও শাহবাজ নাদিম।
যদিও ম্যাচের আকর্ষণ হায়দরাবাদের ওপেনিং জুটি। ঋদ্ধিমান যেভাবে দলের অধিনায়ক ওয়ার্নারের সামনে ব্যাটিং করল, কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। বাংলার এই তারকাকে বসিয়ে রেখেছিল, দিল্লি ম্যাচ থেকে নামতে হায়দরাবাদও বদলে গেল। ওয়ার্নারের জন্য কোনও বিশেষণই জুতসই হবে না। প্রকৃত অধিনায়কের মতো দলকে টানল সেনাপতির মতো। মাঠের চারিদিকে খেলে গেল, যেন ৩৬০ ডিগ্রিতে ব্যাটিং করল। ঋদ্ধিমানের ব্যাটে ছিল সাতটি চার ও একটি ছয়। ম্যাচের সেরা ওয়ার্নারের ব্যাট থেকে এসেছে ১০টি চার ও একটি ছয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর : মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ২০ ওভারে ১৪৯/৮। পোলার্ড ৪১, সূর্যুকুমার ৩৬, সন্দীপ ৩/৩৪।
সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ১৭.১ ওভারে ১৫১/০। ওয়ার্নার অপরাঃ ৮৫, ঋদ্ধিমান অপরাঃ ৫৮।
হায়দরাবাদ জয়ী ১০ উইকেটে। ম্যাচের সেরা : ওয়ার্নার