
হাসিমুখে সাইকেল সারিয়ে চলেছেন তরুণী, স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে একা হাতে ধরেছেন সংসারের হাল
চায়না নিজে সেকেন্ড ইয়ার পর্যন্ত পড়াশোনা করে আর করতে পারেননি। কিন্তু দুই বোনের যাতে পড়াশোনায় কোনও ক্ষতি না হয়, তার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন।
আর পাঁচ জন বাচ্চার মতোই বেড়ে উঠছিল ছোট্ট চায়না। পাত্রসায়রের কর্মকার পরিবারের মেয়ে হিসেবে স্বাচ্ছন্দ্যেই মানুষ হয়েছিল সে। হঠাৎ এক দমকা হাওয়ায় ছন্দপতন ঘটল। আচমকা চলে গেলেন বাবা মোহন কর্মকার। মাথার উপর থেকে হারিয়ে গেল ছাদ। আজ থেকে ছ’বছর আগে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার সময়ে কলেজে পড়ছেন চায়না। দু’চোখে অনন্ত স্বপ্ন তাঁর।
কিন্তু বাবা চলে যাওয়ার পরে আচমকাই সবকিছু বদলে যেতে শুরু করে। অভাব এসে কামড় বসায় সংসারে। ধীরে ধীরে নিঃস্ব হয়ে যেতে বসে একটা পরিবার। বাবা বেঁচে থাকতে যে সব ফাঁকফোকর কখনও চোখে পড়েনি, সে সবই চওড়া ফাটলের মতো হয়ে গ্রাস করে ফেলতে লাগল তাঁদের। মাটির ঘরে গিয়ে থাকতে হয় একসময়।
তখনই চায়না ঠিক করেন, সংসারের হাল ধরতে হবে যেভাবে হোক। কিছু না ভেবেই বাবার সাইকেল সারানোর দোকানের দায়িত্ব নেন তিনি। অভিজ্ঞতা যে খুব ছিল তা নয়, তবে উৎসাহ আর রোজগারের তাগিদ ছিল অনেকটা পরিমাণে। সেই সঙ্গে বাড়তি গুণ তাঁর মিষ্টি ব্যবহার। পসরা জমতে সময় লাগেনি।
এই মুহূর্তে সংসারের একমাত্র রোজগেরে মানুষ চায়না। বয়স্ক মা রয়েছেন, রিনা কর্মকার। ২২ ও ১৯ বছরের দুই বোন মেঘা কর্মকার এবং মিরা কর্মকার রয়েছে তাঁর পরপরই। চায়না নিজে সেকেন্ড ইয়ার পর্যন্ত পড়াশোনা করে আর করতে পারেননি। কিন্তু দুই বোনের যাতে পড়াশোনায় কোনও ক্ষতি না হয়, তার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন। দুই বোনই এখন নার্সিং প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।
তাই একদিকে বয়স্ক মা আর অন্যদিকে দুই বোনের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতে ঘাম ছুটছে চায়নার। পড়াশোনা করে সরকারি চাকরি করার স্বপ্ন দেখেছিলেন চায়না। আপাতত সাইকেলের ঘুরন্ত চাকার স্পোকের মতোই সে স্বপ্ন অধরা।
দেখুন চায়নার লড়াইয়ের কাহিনি।
চায়না বলেন, “বাবার কাছ থেকেই আমার এই কাজের হাতেখড়ি। তারপর বাবা মারা যাবার পর থেকে সংসারের হাল ধরতে এবং বৃদ্ধা মা এবং দুই বোনের পড়াশোনার খরচ চালাতে আমাকেই দোকান চালাতে হয়।” তাঁর বোন মেঘা কর্মকার বলে, “দিদির জন্য আমাদের গর্ব হয় কিন্ত বাজারে এত লোকের মাঝে দিদিকে কাজ করতে হয় এই ভেবে কিছুটা খারাপও লাগে। আগামী দিনে দিদির জন্য কিছু করব আমরা।”