Latest News

নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে ‘এমআই ৫’-কে ডাকার কথা উল্লেখ করেছেন বিচারপতি, কী এই MI5?

দ্য ওয়াল ব্যুরো: সিবিআই-ইডিকে দিয়ে কাজ না হয় তাহলে এমআই ফাইভকে (MI5) ডাকবেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় আজ এমনটাই বলেছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এখন প্রশ্ন হল এই এমআই ফাইভ কারা? কেন এমআই ফাইভের উপর বেশি ভরসা রাখলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়?  

যদিও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় কথার কথাই বলেছেন, কিন্তু এটা ঠিক যে এমআই ফাইভ হল বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক ও বুদ্ধিদীপ্ত গুপ্তচর সংস্থাগুলির একটি। এরা হল ব্রিটিশ ইনটেলিজেন্স এজেন্সি বা ব্রিটিশ গুপ্তচর সংস্থা যারা সাধারণত ব্যর্থ হয় না বা হয়নি। আমাদের দেশের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং সংক্ষেপে ‘র’ এর মতোই এই এমআই ফাইভ যারা দেশের ভেতরে সন্ত্রাসদমনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

আরও পড়ুন: মাটির স্বাস্থ্য ভাল নেই, কারখানা-হাসপাতালের বর্জ্য, তেজস্ক্রিয় কণায় কার্বনের মেঘ জমছে বাতাসে

Terrorism in the UK: number of suspects tops 40,000 after MI5 rechecks its  list | News | The Sunday Times

নিরাপত্তা খাতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করে থাকে বেশির ভাগ দেশ। অতর্কিত হামলা এবং নাগরিকদের প্রাণহানি থেকে রক্ষা করতে প্রতিটি দেশেরই আলাদা গুপ্তচর সংস্থা রয়েছে। তেমনই ব্রিটেনের গুপ্তচর সংস্থা হল এমআই ফাইভ। ব্রিটিশ গুপ্তচর সংস্থার দুটি শাখা আছে—এমআই ফাইভ (MI5) ও এমআই সিক্স (MI6)। এদের বলা হয় এসআইএস (সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস)। এদের সদর দফতর হল লন্ডন। প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯০৯ সালে। অস্ট্রেলিয়ান সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের সঙ্গে যাতে এর নাম গুলিয়ে না যায় তার জন্য এমআই নামেই বেশি পরিচিত এই গুপ্তচর সংস্থা। এমআই ফাইভ ও এমআই সিক্সের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে, সে কথায় পরে আসা যাবে।

এমআই ফাইভ কারা?

এমআই ফাইভ হল ‘মিলিটারি ইনটেলিজেন্স সেকশন’ যারা দেশের অভ্যন্তরে গুপ্তচরবৃত্তি করে। এদের বলা হয়, ডোমেস্টিক কাউন্টার ইনটেলিজেন্স। সহজ করে বললে, দেশের ভেতরে কোনও অপরাধমূলক কাজ হচ্ছে, কোথাও দাঙ্গা বা নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে, সরকারের নিরাপত্তা, সরকারি দফতর ও জনসাধারণের নিরাপত্তার দায়িত্ব এদের। সঠিক সময় সঠিক খবর দিয়ে সতর্ক করাও কাজ এমআই ফাইভের গোয়েন্দাদের। খুবই গোপনে কাজ করে এরা, কাকপক্ষীও টের পাবে না কখন এবং কীভাবে এমআই ফাইভের গোয়েন্দারা ভেতরে ঢুকে খবর বের করে আনবে। বুদ্ধি খাটিয়ে ও গুপ্তচরদের কাজে লাগিয়ে কোনও জটিল মামলার তদন্ত প্রক্রিয়ার সমাধান বের করার কাজও করে এই গোয়েন্দা সংস্থা। দেশের ভেতরে জঙ্গি নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে কিনা বা সীমান্ত এলাকা দিয়ে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ ঘটছে কিনা সেদিকে তাদের সতর্ক নজর। অতন্দ্র প্রহরীর মতো দেশের চারদিকে নজর রাখছে এই বাহিনী। এদের চোখ এড়িয়ে দেশে জঙ্গি অনুপ্রবেশ সাধারণত সম্ভব নয়।

UK intelligence service MI5 reviewing practices after Manchester attack |  Arab News

সিক্রেট ইনটেলিজেন্স সার্ভিস (MI6) ও ডিফেন্স ইনটেলিজেন্সের (DI)সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে এমআই ফাইভ। সিকিউরিটি সার্ভিস অ্যাক্টের (১৯৮৯) আওতায় রয়েছে এরা। জয়েন্ট ইনটেলিজেন্স কমিটি (JIC)এই গোয়েন্দা শাখার পরিচালনা করে। এমআই ফাইভ কোন পথে কাজ করবে সেটা ঠিক করে ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল।

দুই বিশ্বযুদ্ধেই তুখোড় বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয় এমআই ফাইভ


১৯০৯ সালে ব্রিটেনে এই সিক্রেট ইনটেলিজেন্স সার্ভিসের সূচনা হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে, এরা মিলিটারি ইনটেলিজেন্সের সেকশন ফাইভের আওতায় ছিল। সেই থেকেই নাম এমআই ফাইভ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছুদিন আগে এই গোয়েন্দা সংস্থার বিন্যাসে কিছু বদল আসে। সেই সময় সেনাবাহিনীর দক্ষিণ স্ট্যাফোর্ডশায়ার রেজিমেন্টের প্রধান ভার্নন কেল ছিলেন এই গোয়েন্দা দফতরের প্রধান। শত্রুপক্ষের সেনা বা গুপ্তচররা কোন পথে দেশে ঢোকার চেষ্টা করছে তা খুঁজে বের করাই ছিল এই গোয়েন্দা দফতরের কাজ। সেই সময় এই ইনটেলিজেন্স সেকশনে খুব কম লোকজনই ছিলেন। প্রখর বুদ্ধিমত্তা ও কমব্যাট অপারেশনে দক্ষ এমন লোকেরাই এখানে কাজ করার সুযোগ পেতেন। কঠিন পরীক্ষা দিতে হত।

Britain's MI5 raises threat level from Northern Irish militants |  Reuters.com

শোনা যায়, যুদ্ধ চলার সময় এমআই ফাইভের গোয়েন্দাদের জন্যই কোনও শত্রু সেনা বা গুপ্তচর সহজে ব্রিটেনে পা রাখতে পারেনি। শত্রুপক্ষের যে কোনও পরিকল্পনায় অনায়াসেই জল ঢেলে দিতেন এমআই ফাইভের গোয়েন্দারা। তাঁদের প্রখর বুদ্ধির কাছে হার মানতে বাধ্য হত শত্রু সেনারা। কীভাবে ব্রিটিশ গুপ্তচরেরা শত্রু শিবিরে ঢুকে খবর বের করে আনত তা বোঝাই দুষ্কর ছিল, ধরতে পারা তো অনেক দূর।

প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলার মাঝের সময়টাতে ব্রিটেনে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছিল জার্মান সেনারা। ঠিক যেমন এখন পাক জঙ্গি ও চিনের সেনারা গোপনে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলেন, জার্মান সেনাদের রুখতে নানারকম কৌশল বের করেছিলেন ব্রিটিশ গোয়েন্দারা। তাঁরা এমন জাল বিছিয়েছিলেন যে কোনওভাবেই অন্য দেশের সেনারা ব্রিটেনে ঢোকার বা অশান্তি ছড়ানোর সুযোগ পায়নি।

দুই বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে এমআই ফাইভের প্রতিপত্তি অনেক বেড়ে যায়। স্পেশাল ব্রাঞ্চের হয়ে কাজ শুরু করে তারা। এখনও দেশে নাশকতার সম্ভাবনা আছে কিনা, কোথাও গোপনে অপরাধমূলক কাজ হচ্ছে কিনা সে খবর দ্রুততার সঙ্গে বের করে এমআই ফাইভ। ব্রিটিশ বাহিনীতে তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কোনও কমব্যাট অপারেশনের আগে বা কোভার্ট অপারেশন (গোপনে সন্ত্রাস দমন) করার সময় এমআই ফাইভের গোয়েন্দারা বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।

এমআই ফাইভ ও এমআই সিক্সের মধ্যে পার্থক্য আছে। এমআই সিক্স আন্তর্জাতিক স্তরে কাজ করে, আর এমআই ফাইভ দেশের বাহিনীর হয়ে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস দমনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

You might also like