
মাসিক ফি দিতে না পারায় ২৩ জন ছাত্রছাত্রীকে পরীক্ষায় বসতে দিল না স্কুল কর্তৃপক্ষ
নিয়মিত ক্লাস করলেও অনলাইন পরীক্ষার গ্রুপে জায়গা হয়নি ছাত্রছাত্রীদের। একতরফা সিদ্ধান্ত স্কুলের। অভিভাবকদের সঙ্গে কোনও আলোচনাতেই বসেননি স্কুলের পরিচালন সমিতি। বিচলিত অভিভাবকদের হয়ে আবেদন জেলাশাসকের। জল গড়ালো হাইকোর্ট পর্যন্ত।
প্রতিদিন নিয়মিত অনলাইন ক্লাস নেওয়ার পর, পরীক্ষার দিন সকালে কোনও আগাম বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই পরীক্ষা থেকে বাদ দেওয়া হল মাসিক ফিজ জমা দিতে না পারা ছাত্র-ছাত্রীদের। আজ সকালে এই ঘটনায় অশান্তি ছড়ায় ওই অঞ্চলে। দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে অবস্থিত ওই বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখান অভিভাবকেরা। ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে মমতাজ বেগম, সনৎ ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ চৌহান, মহঃ সাবির মন্ডল সহ একাধিক অভিভাবকরা ছুটে আসেন স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার জন্য। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ নির্বিকার৷ অভিভাবকদের সঙ্গে এ নিয়ে কোনও কথা বলতে রাজি হননি স্কুলের পরিচালন সমিতির সদস্যেরা।
স্কুল কর্তৃপক্ষের এমন তুঘলকি মনোভাবে যারপরনাই বিরক্ত অভিভাবকেরা। তাঁদের মতে বর্তমান অবস্থায় স্কুলের উচিত ছিল সহানুভূতির সঙ্গে বিষয়টির বিবেচনা করা। কয়েক মাস আগে ছেলেমেয়েদের ভর্তি বাবদ নগদ ২৫,০০০ টাকা জমা দিতে হয় স্কুলে। অনলাইন ক্লাসও করেছে ছাত্রছাত্রীরা। তারপরও কিছু ছাত্রছাত্রীকে কেন অনলাইন পরীক্ষার গ্রুপ থেকে বাদ দেওয়া হল, কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সেই প্রশ্নই ছুঁড়ে দেন অভিভাবকেরা। এই ঘটনায় ছাত্রছাত্রীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে তাদের দাবি।
দুর্গাপুর স্কুল ফোরাম গার্জিয়ান সোসাইটির তরফ থেকে সৌমেন রায় জানান- ইতিমধ্যেই দুর্গাপুরের বিভিন্ন স্কুলের অভিভাবকদের নিয়ে আন্দোলন গড়ে উঠেছে স্কুল কর্তৃপক্ষের অমানবিক দাবির বিরুদ্ধে। লিখিতভাবে ওই স্কুলের অভিভাবকেরা আমাদের কাছে তাদের অসুবিধার কথা জানালে তা নিয়ে আগামী দিনে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাঝি বলেন স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন রাখবো বিষয়টি যাতে সহানুভূতি সাথে পুনর্বিবেচনা করা হয়। তিনি এও বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক, ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যত এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে।
বিচউড স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নিতা রায়কে এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে দাবি করেন, পরীক্ষার আগেই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়েছিল অভিভাবকদের। যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী পরীক্ষায় বসতে পারেনি তাদের পুনরায় পরীক্ষায় বসার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
তবে বর্ধিত মাসিক ফিজ দিতে অক্ষম ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষায় বসার ব্যাপারে স্কুল ম্যানেজমেন্ট এখনো কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি, বলেই জানা গেছে। বিষয়টি ইতিমধ্যেই আদালতের বিচারাধীন। বৃহস্পতিবার ১০ই সেপ্টেম্বর কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দোপাধ্যায় এবং মৌসুমী ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ ওই বেসরকারি স্কুলকে আলাদা আলাদা কমিটি গঠন করে ফি সংক্রান্ত সমস্যা মেটানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ডিভিশন বেঞ্চের এই নির্দেশ অভিভাবক এবং ছাত্রছাত্রীদের কতটা স্বস্তি দেয় সেটাই দেখার।