
দ্য ওয়াল ব্যুরো: তখন পুজো সবে মিটেছে। বাংলার সব পাড়ায় প্যান্ডেলের কাঠামোর বাঁশও খোলা হয়নি। সেই সময় থেকেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, ডিসেম্বর আসতে দিন। দেখুন না কী হয়।
শুভেন্দুর তালে তাল মিলিয়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মুখেও শোনা গিয়েছিল, বাংলায় ডিসেম্বর ধামাকার আগাম হুঙ্কার!
গেরুয়া শিবিরের সেই কথা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, ‘ওরা ডিসেম্বরে রাজ্যে গন্ডগোল বাঁধাতে চায়। আপনারা এলাকায় থাকুন, সতর্ক থাকুন।’
ডিসেম্বর পড়ে গিয়েছে। বছরের শেষ মাসের তৃতীয় দিনে শুভেন্দু অধিকারীর খাস তালুক কাঁথিতে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) ছোট্ট করে দরজা খুলে বিজেপিকে ফাঁকা করে দেওয়ার বড় ইঙ্গিত দিয়ে দিলেন। যা শীতের রাজনীতিতে নয়া উত্তাপ তৈরি করল বলেই মত অনেকের।
তৃণমূলের দুই সাংসদ বিজেপির সঙ্গে কানামাছি ভোঁ ভোঁ খেলছেন: অভিষেক
অভিষেক প্রায়ই বলেন, তৃণমূল যদি একবার দরজা খোলে তাহলে বাংলায় বিজেপিটাই উঠে যাবে। এদিন কাঁথি প্রভাত কুমার কলেজ মাঠে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এই যে বলছে না, ডিসেম্বর ধামাকা, সরকার পড়ে যাবে, আমি বলছি শুনুন! আমি যদি দরজাটা একবার খুলি না, তাহলে বিজেপি পার্টিটা উঠে যাবে।’
এরপর কেন দরজা খুলছেন না তারও ব্যাখ্যা দেন অভিষেক। ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ বলেন, ‘আপনাদের ভাবাবেগের কথা ভেবে দরজাটা খুলছি না।’ শুভেন্দুর বাড়ির অনতিদূরের এই মাঠের সভায় এরপর জনমত নেন অভিষেক। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মাঝে মাঝে মনে হয় খুলে দিই দরজাটা। আগামী সপ্তাহে খুলি? একটু? পাঁচ সেকেন্ডের জন্য?’
কিন্তু মাঠ তখন প্রায় আধাআধি ভাগ হয়ে গিয়েছে। এক দল বলছেন, দরজায় খিল দেওয়াই থাক। খুলতে হবে না। আর এক দল বলছেন, আচ্ছা ঠিকাছে, খুলুন, অল্প করে!
অভিষেক এরপর জনমত নেন। সেই জনমতের ভিত্তিতে বলেন, ‘দরজাটা তাহলে খোলা যাক। ছোট্ট করে। বেশি বড় করে নয়। বেছে বেছে নেওয়া হবে। যাদের দরজা দিয়ে ঢোকানো হবে তাদের প্রায়শ্চিত্ত করিয়েই নেওয়া হবে। তারা দলের জন্য কাজ করবেন। আর কোনও কর্মী মাথার উপর বসে যাতে ছরি ঘোরাতে না পারে তা আমি নিশ্চিত করব।’
এরপরেই জল্পনা তৈরি হয়েছে, তাহলে কি ডিসেম্বরের বাংলায় ফের একবার বিজেপির ভাঙন দেখা যাবে?
প্রসঙ্গত, শুভেন্দু, সুকান্তরা যেমন ডিসেম্বর ধামাকার কথা বলেছেন তেমন মিঠুন চক্রবর্তী আবার বলেছেন, তাঁর সঙ্গে ২১ জন তৃণমূল এমএলএ যোগাযোগ রাখছেন। কিন্তু গেরুয়া শিবিরের সেসব মুখের কথার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল পাওয়া যায়নি। এখন দেখার, অভিষেকের খুলে দেওয়া দরজার চিলতে ফাঁক দিয়ে কারা কারা ঢোকেন তৃণমূলে।
অনেকের মতে, অভিষেকের কথা যেমন রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল তৈরি করেছে তেমন গেরুয়া শিবিরে সন্দেহের উদ্রেক ঘটাবে। এখন দেখার কী হয় আগামী সপ্তাহে।