
দ্য ওয়াল ব্যুরো: “শ্রমিক নেতার মাতব্বরিতেই বন্ধ হয়েছে জুট মিল!”– তৃণমূলের বিধায়কের এমন বিস্ফোরক মন্তব্যের জবাবে চাঁচাছোলা জবাবও দিলেন শ্রমিক নেতা! এই ঘটনায় চাপান-উতোর শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। এমনিতেই এখন শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে যথেষ্ট অস্বস্তিতে তৃণমূল। এই সময়েই নিজের রাজগঞ্জ ব্লকের আরএল জুটমিল বন্ধ হওয়া নিয়ে নতুন অশান্তি ঘনিয়েছে।
জানা গেছে, রাজগঞ্জের শিকারপুর অঞ্চলের আরএল জুট মিল মূলত পাটের সুতলি বানাত। গত ২৫ বছর ধরে জনা পঞ্চাশেক শ্রমিক নিয়ে চলছিল এই জুট মিলটি। তৃণমুল ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্টেট ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন নামে একটি শ্রমিক সংগঠন এখানে সক্রিয় ছিল। এই ইউনিয়নের কর্মীরা খগেশ্বর রায় অনুগামী। তাঁদের নেতা নারায়ণ বসাক।
অভিযোগ, এই মিলের শ্রমিকেরা মাত্র ২৪৮ টাকা করে মজুরা পান, যা শ্রম আইন অনুযায়ী ৩৫০ হওয়া উচিত। এছাড়া মিলের মালিক এবার পুজোয় কোনও বোনাসও দেননি। এই সব নানা দাবি নিয়ে গত তিন মাস আগে আইএনটিটিইউসির স্বপন সরকার সেখানে কিছু শ্রমিক নিয়ে নতুন করে সংগঠন খোলেন। এর পর থেকে শুরু হয় একই দলের দুই শ্রমিক সংগঠনের অন্তর্দ্বন্দ্ব।
এর পরে আজ, শুক্রবার সকালে কাজে যোগ দিতে এসে শ্রমিকরা দেখন জুট মিলটি বন্ধ হয়ে গেছে। কাজ হারিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের দারস্থ হন শ্রমিকরা।
এই ঘটনায় রাজগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক খগেশ্বর রায় ক্ষোভের স্বরে জানান, অযৌক্তিক দাবি তুলে মালিক পক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে তৃণমুল শ্রমিক নেতা স্বপন সরকার। যার মাতব্বরির জেরে নাজেহাল হয়ে গিয়েছিলেন মিল মালিক। এই পরিস্থিতিতে মিল চালাতে সমস্যা হচ্ছিল বলে অভিযোগ তুলে তাঁকে কয়েকবার টেলিফোনও করেছিলেন মিল মালিক। খগেশ্বর বাবু তাঁকে মিল বন্ধ না করে একসঙ্গে বসে সমাধানের পথ খুঁজবেন বলে জানিয়েছিলেন।
কিন্তু শুক্রবার সকালে হঠাতই মিলে তালা লাগিয়ে চলে যায় মালিক পক্ষ। মালিক পক্ষ অভিযোগ তোলে, এ জন্য সম্পূর্ণ ভাবে দায়ী স্বপন সরকার। স্বপন সরকারের পেছনে কে মদতদাতা রয়েছেন তাঁকেও খুঁজে বের করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এই ঘটনায় স্বপনবাবুর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে, নাম না করেই বিধায়ককে এক হাত নেন স্বপনবাবু। তিনি জানান, পার্টি আর ট্রেড ইউনিয়ন এক নয়। দোলা সেন অনুগামী স্বপন সরকার আরও একধাপ এগিয়ে তাঁর বক্তব্যে বলেন, “এতদিন বিধায়কের পেটোয়া ধান্দাবাজদের দিয়ে শ্রমিকদের বঞ্চিত করে কম মজুরি দিয়ে এবং তাঁদের প্রাপ্য অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে মিল মালিকের সঙ্গে মিলে শ্রমিক সংগঠন চলছিল। ফলে ন্যায্য বোনাস, হাজিরা বা মজুরি কিছুই পাচ্ছিলেন না শ্রমিকরা। আমি এসে শ্রমিকদের সংগঠিত করে আন্দোলন করতেই ওদের আঁতে ঘা লাগে। তাই গতকাল রাতে কাউকে না জানিয়ে ওরা মিলে তালা লাগিয়ে দেয়।”
স্বপনবাবু আরও জানান ওই মিলের শ্রমিকদের দাবিদাওয়া সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ইতিমধ্যেই শ্রম দফতরে অভিযোগ জানানোর পরে দুবার মিটিং ডেকেছে শ্রম দফতর। কিন্তু মালিক পক্ষ একবারও আসেনি। আজকের ঘটনার পর তিনি আবার শ্রম দফতরে অভিযোগ জানিয়েছেন। শ্রম দফতর জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক ডাকবে বলে তাঁকে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।
স্বপনবাবুর অভিযোগ, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করার আগে মিলের খুঁটিনাটি যাবতীয় বিষয় ভালভাবে জেনে বিধায়কের মন্তব্য করা উচিত ছিলো। বিষয়টি তিনি মেনে নেবেন না বলে দাবি করেন। জেলা সভাপতিকে লিখিত ভাবে জানাবেন বলেও জানান তিনি।