
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বিমানের মধ্যে সামান্য খুনসুটি তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। রাজনীতির আকাশে তাঁর উত্থান ছিল ধুমকেতুর মতোই। সেই তিনি বাবুল সুপ্রিয় দুম করেই খসে পড়লেন রাজনীতির আকাশ থেকে।
সময়টা ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে। একদিন বিমানে উঠেছেন বাবুল সুপ্রিয়। সেই বিমানেরই যাত্রী ছিলেন বাবা রামদেব। একথা সর্বজনবিদিত চোদ্দর ভোটে বিজেপির অনেক প্রার্থী রামদেব ঠিক করেছিলেন। বিমানের সিটে বসেই রামদেব নাকি কাউকে একটা ফোনে বলছিলেন বিজেপির টিকিওট দেওয়ার কথা। সেই শুনে মজা করেই বাবার কাছে টিকিটের আবদার করেছিলেন বাবুল।
তাঁর কয়েক দিন পরেই টুইস্ট ঘটে যায়!
হঠাৎই একদিন বাবুলের ফোনে ফোন আসে। রিসিভ করার পরেই বলা হয়, ধরুন। বাবা কথা বলবেন। তারপর স্বয়ং রামদেব বাবুলকে বলেন, তাঁকে টিকিট দেওয়া হবে। আসানসোলে। রাজি হয়ে গিয়েছিলেন ‘কহো না প্যার হ্যায়’-এর টাইটেল ট্র্যাকের গায়ক।
সেই শুরু। তারপর আর বাবুলকে পিছনে ফিরতে হয়নি। ভোটে দাঁড়ান বাবুল। চোদ্দর ভোট প্রচারে ঝড় তুলে দেওয়া নরেন্দ্র মোদী আসানসোলে এসে বলেছিলেন, ‘মুঝে বাবুল চাহিয়ে।’ তৃণমূলের দোলা সেনকে হারিয়ে সংসদে পৌঁছতে বাবুলের অসুবিধা হয়নি। প্রথমবার সাংসদ হয়েই কেন্দ্রে মন্ত্রী হয়েছিলেন বাবুল।
গায়ক হিসেবে বাবুলের এমনিই পরিচিতি ছিল। মন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে তাই তাঁর বিস্তারে সমস্যা হয়নি। ২০১৪-১৯ পর্যন্ত পাঁচ বছর মোদী সরকারের মন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর উপর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অসন্তোষ ছিল এমন নয়। বরং রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর মাঝেমাঝেই খটামটি লাগত। দিলীপ ঘোষদের সঙ্গে তাঁর বিবাদও সবার জানা। এসবের মধ্যেই উনিশের নির্বাচনেও বাবুলকে ফের আসানসোলেই দাঁড় করান মোদী-শাহ।
বাবুলকে হারাতে কোমর বেঁধে নেমেছিল তৃণমূল। আসন পরিবর্তন করেন বাঁকুড়া থেকে মুনমুন সেনকে আসানসোলে দাঁড় করিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রচারে সুচিত্রা সেনের আবেগকে কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন মুনমুনও। কিন্তু লাভ হয়নি। চোদ্দর তুলনায় অনেক বেশি ব্যবধান নিয়ে উনিশে জেতেন বাবুল। ফের তাঁকে মন্ত্রী করেন মোদী। এবার পরিবেশ দফতরের প্রতিমন্ত্রী।
একথা বলার অপেক্ষা রাখে না, একুশের ভোটে বাংলা দখল হচ্ছেই ধরে নিয়ে একাধিক সাংসদকে বিধানসভায় প্রার্থী করেছিল বিজেপি। যাতে সরকার হলে তাঁদের মন্ত্রী করা যায়। বাবুলকেও দাঁড় করানো হয়েছিল টালিগঞ্জে। উদ্দেশ্য একটাই—তৃণমূলের হেভিওয়েট অরূপ বিশ্বাসকে চাপে ফেলে দেওয়া।
কিন্তু তা আর হয়নি। সাংসদ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুলকে হারতে হয় টালিগঞ্জে। সেই বোধহয় বাবুলের দুঃসময় শুরু। তারপর মোদী মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণে বাংলার চার সাংসদ ঠাঁই পেলেও ছেঁটে ফেলা হয় বাবুল এবং দেবশ্রী চৌধুরীকে।
দেখা যাচ্ছিল তারপর থেকেই বাবুল নিষ্ক্রিয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা যার রুটিন তিনি কেমন নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন। শনিবাসরীয় বিকেলে নিজেই ফেসবুক পোস্ট করে বাবুল জানিয়ে দেন, রাজনীতি থেকে সরে যাচ্ছেন তিনি। অন্য কোনও দলে যাচ্ছেন না। তবে বিজেপিও করছেন না।
রাজনীতিতে বাবুলের আসাটা ছিল হঠাৎ করে। রাজনীতি ছাড়লেন আরও আকস্মিক কায়দায়।