Latest News

খুশির ঈদ, বেগম জিনা ও কুমুদিনীর বারোমাস্য়া

দ্য় ওয়াল ব্য়ুরো :  প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনার বিরাট বোর্ডের পেছনে ছোট্ট টিনের ঝুপড়ি ঘর। তার মধ্যেই থাকেন কুমুদিনী শীল। কোনওমতে। অশীতিপর ন্যুব্জ শরীরটাকে গুঁজে। চলৎশক্তিহীন।
সেই কবে এক ঝড় বৃষ্টির রাতে বর্ডার পেরিয়ে চলে এসেছিলেন এই পারে। মেয়ে সুষমা আর জামাইকে নিয়ে। এখন তাঁরা আর তাঁর খোঁজ নেয় না কোনও।
কুমুদিনী কোনওমতে পড়ে আছেন রোদ বৃষ্টি ঝড়ের দাপট থেকে মাথা বাঁচানো ছোট্ট এই ঝুপড়িটাতে।
হিন্দু এই বিধবার একমাত্র খড়কুটো এখন মুসলমান জিনা বিশ্বাস। তিনিও বৃদ্ধই। বয়সে কুমুদিনীর প্রায় কাছাকাছিই। সেই কবে পড়ন্ত বিকেলে গঙ্গায় পাট ধুয়ে বাড়ি ফেরার পথে শীতে পথে পরে ঠকঠক করে কাঁপতে দেখেছিলেন কুমুদিনীকে। সেই থেকেই বন্ধুত্ব। তারপর কেটে গিয়েছে একটা দশক। সেই বন্ধুত্বে আজও ভাঁটা পড়েনি।
দু’বেলা আসেন চলা ফেরার ক্ষমতা হারানো বন্ধুকে বাড়ির সামান্য রান্না পৌঁছে দিতে। কুমুদিনীর সাজা পান মুখে না দিলে দুপুরের খাওয়া হজম হয় না জিনার। সকালে একবার বিকেলে একবার সেই অছিলায় চলে আসেন খাবার দিতে।
ঝড় বাদলার রাতে কুমুদিনী কীভাবে পড়ে আছে এইভাবনায় ঘুম হয় না জিনার। কিন্তু কীই বা করতে পারেন তিনি? সামান্য এই খাবার পৌঁছে দেওয়া ছাড়া?
নদিয়ার চাকদহ থেকে গৌরনগর ঘাটের রাস্তার ধারে হিন্দু কুমুদিনী আর মুসলমান জিনার অটুট বন্ধুত্বে যেন আলোকিত হয়ে থাকে অশ্বত্থ গাছটার নীচটা।
সেই আলোর উজ্জ্বলতার দেখা যায় না বহুদূরের রাজস্থানের রাজনগর কিংবা খুব কাছের আসানসোল বা বসিরহাটের অন্ধকার।

কাল ঈদের দিনও জিনা কুমুদিনীর জন্য নিয়ে আসবেন ভালোমন্দ। আর কুমুদিনীর হাতের পানেই জমে উঠবে তাঁর নিজের ভোজও। ধর্ম আর হানাহানির সব বাধা পেরিয়ে অশীতিপর দুই বৃদ্ধার এই বন্ধুত্বই হয়ে ওঠে ভারতবর্ষের গল্প।

 

You might also like