Latest News

চার মাসের শিশুর কোমর জুড়ে টিউমার, অপারেশন কীভাবে, দিশাহারা বাবা-মা

প্রায় তিন মাস ধরে ছেলেকে নিয়ে এনআরএস হাসপাতালে যাওয়া আসা করছেন। কিন্তু বেড খালি নেই বলে জানিয়ে শুধুই তাঁদের বাড়ি ফেরৎ পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দিন যত গড়াচ্ছে ছেলের কোমরের অংশে থাকা মাংসপিণ্ডের আকার ততই বড় হয়ে যাচ্ছে।

দ্য ওয়াল ব্যুরো, পূর্ব বর্ধমান: ‘দিদিকে বলো’তে ফোন করে ও বিধায়কের চিঠি দেখিয়েও জটিল অস্ত্রোপচারের জন্য শিশুপুত্রকে এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারলেন না বাবা মা।

জন্মের সময় থেকেই শিশুপুত্রের কোমরের অংশ জুড়ে দলা পাকিয়ে রয়েছে বড় মাংস পিণ্ড। দেখতে অনেকটা বড় টিউমারের মতই। শিশুটি ভূমিষ্ট হওয়ার পরেই চিকিৎসরা বলেছিলেন, অস্ত্রোপচার ছাড়া শিশুর শরীর থেকেই ওই মাংসপিণ্ড আলাদা করা সম্ভব নয়। তারজন্য জন্মের একমাস পর থেকে প্রায় তিন মাস ধরে শিশুটিকে নিয়ে এক সরকারি হাসপাতাল থেকে আরএক সরকারি হাসপাতালে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শিশুর অসহায় বাবা মা। কিন্তু কোথাও কোনও সুরাহা না পেয়ে সন্তানকে নিয়ে এখন চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন চার মাসের শিশুপুত্র রনির বাবা বিশ্বজিৎ মহান্ত ও মা মণিকাদেবী ।

রায়না ২ নম্বর ব্লকের উচালন পঞ্চায়েতের ঘুসটিয়া গ্রামে বসবাস শিশুর পরিবারের। শিশুর বাবা বিশ্বজিত মহান্ত ফুটপাথে বসে সবজি বিক্রি করেন। সবজি বিক্রি করে  যেটুকু রোজগার হয় তা দিয়ে তিনি কোনওরকমে সংসার চালান। বাড়তি আর কোন রোজগার নেই বিশ্বজিতবাবুর। তিনি জানান, তাঁর শিশুপুত্রের বর্তমান বয়স চার মাস। ভূমিষ্ট হবার সময় থেকেই তাঁর শিশুপুত্রের কোমরের অংশে বড় মাংসপিণ্ড দলা পাকানো হয়ে রয়েছে। সেটা দেখতে অনেকটা টিউমারের মতো। তাঁর কথায়, ‘‘ছেলের জন্ম হওয়ার পরেই চিকিৎসকরা বলেছিলেন দ্রুত অস্ত্রোপচার করে শরীর থেকে ওই মাংসপিণ্ড  আলাদা করা না হলে আমার ছেলের জীবন সংশয় দেখা দিতে পারে। অস্ত্রোপচারের জন্য আমি প্রথমে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেছিলাম। কিন্তু সেখানকার  চিকিৎসকরা কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে রেফার করে দেন।’’

তারপর থেকে প্রায় তিন মাস ধরে ছেলেকে নিয়ে এনআরএস হাসপাতালে যাওয়া আসা করছেন তিনি । কিন্তু বেড খালি নেই বলে জানিয়ে শুধুই তাঁদের বাড়ি ফেরৎ পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দিন যত গড়াচ্ছে ছেলের কোমরের অংশে থাকা মাংসপিণ্ডের আকার ততই বড় হয়ে যাচ্ছে। ছেলেকে যাতে এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারেন তার জন্য ‘দিদিকে বলো’ নম্বরে ফোন করে সাহায্য চেয়েছিলেন। এনআরএস হাসপাতালে ছেলেকে ভর্তির ব্যবস্থা হয়ে গেছে বলে তারা আশ্বস্ত করেছিল। কিন্তু ছেলেকে নিয়ে এনআরএস হাসপাতালে গিয়ে তাঁদের নিরাশ হয়েই ফিরতে হয়েছিল। এমনকি রায়নার বিধায়ক নেপাল ঘড়ুইয়ের চিঠি নিয়ে এনআরএস হাসপাতালের সুপারের কাছে গিয়েছিলেন। তাতেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

ছেলেকে বাঁচাতে এখন কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁরা। এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহায্য প্রার্থনা করেছেন। সন্তানকে বাঁচাতে এখন মুখ্যমন্ত্রীই তাঁদের শেষ ভরসা ।

বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ডেপুটি সুপার চিকিৎসক কুনালকান্তি দে বলেন, “জন্মগত ত্রুটির কারণে শিশুদের  এই ধরনের শারীরিক সমস্যা তৈরি হয়। ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘নিউরো মাইরোসিল বা ‘পিঙ্গো মাইরোসিল’। এর অস্ত্রোপচার খুবই জটিল। শিশুর প্রাণহানির আশঙ্কা থেকে যায়। তাই এই জটিল অস্ত্রোপচারের জন্য কলকাতার হাসপাতালেই শিশুকে রেফার করতে হয়েছে।”

রায়নার বিধায়ক নেপাল ঘড়ুই এদিন সব শুনে বলেন, প্রয়োজনে তিনি ওই শিশু সহ তার পরিবারকে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তির ব্যবস্থা করে আসবেন ।

You might also like