
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বুধবার দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (sukanta majumdar) জানিয়েছেন, একশ দিনের কাজ প্রকল্পে যাতে চুরি না হয় সে ব্যাপারে তীক্ষ্ণ নজর রাখবে বিজেপি। এমনিতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তাঁর নিজের এলাকায় নজর রাখারই কথা। বাংলায় বিজেপির (BJP) ৭০ জন বিধায়ক ১৮ জন সাংসদ রয়েছেন। ফলে সুকান্তর এই মন্তব্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন অনেকেই। কিন্তু পাল্টা প্রশ্নও তুলতে শুরু করেছে কংগ্রেস ও তৃণমূল।
কী প্রশ্ন?
কংগ্রেস ও তৃণমূলের প্রশ্ন, তার মানে কি বিজেপি শাসিত রাজ্যে একশ দিনের কাজ প্রকল্পে কোনও চুরি হয়নি? নাকি সেখানে বিজেপি ইচ্ছাকৃত তীক্ষ্ণ নজর রাখেনি বা নজর এড়িয়ে গিয়েছে?
এ প্রশ্ন তুলতে গিয়ে কংগ্রেস ও তৃণমূল কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের পরিসংখ্যানই তুলে ধরছেন। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৭-১৮ আর্থিক বছর থেকে ২০২০-২১ পর্যন্ত চার বছরে একশ দিনের কাজ প্রকল্পে গোটা দেশে ৯৩৫ কোটি টাকা তছরূপ হয়েছে। ভুয়ো জব কার্ড, ভুয়ো অ্যাকাউন্ট ইত্যাদির মাধ্যমে সেই দুর্নীতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে তামিলনাড়ুতে। সেখানে ২৪৫ কোটি টাকা তছরূপ হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশে এই প্রকল্পে চুরি হয়েছে ২৩৯ কোটি টাকা। আর বিহার ও ঝাড়খণ্ডে যথাক্রমে ১২.৩৪ কোটি ও ৫১.২৯ কোটি টাকা। ঘটনাচক্রে ঝাড়খণ্ড ও বিহার এই দুই রাজ্যেই তখন বিজেপি শাসিত সরকার ছিল।
আরও পড়ুন: মমতার মাস্ট্রারস্ট্রোক? গিরিরাজের সঙ্গে দেখা করার সময় চাইলেন শুভেন্দু-সুকান্ত!
কেবল তাই নয়, কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা জানিয়েছেন, এর আগে মধ্যপ্রদেশের সেন্ধওয়াতে এক বিজেপি নেতা একশ দিনের কাজ প্রকল্পে ৫ কোটি টাকা চুরির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন। তখনও সেখানে বিজেপি সরকার ছিল। আরও মজার ঘটনা হল, মধ্যপ্রদেশের ঝির্নিয়াতে দীপিকা পাড়ুকোন ও জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজের মতো অভিনেত্রীদের নামে একশ দিনের কাজের জব কার্ড বানিয়ে টাকা তোলার অভিযোগ রয়েছে।

তা ছাড়া সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের বাগপত, মোরাদাবাদে একশ দিনের কাজে টাকা চুরির অভিযোগ উঠেছে। কোথাও ভুয়ো মাস্টাররোল বানানো হয়েছে তো কোথাও কাজ না করিয়ে টাকা তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ।
পবন খেরার আরও বলেন, নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর একশ দিনের কাজ প্রকল্পকে কংগ্রেসের ঐতিহাসিক ভুল বলে মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু পরে দেখা যায়, এই মোদী সরকারই কোভিডের সময়ে এই প্রকল্পের মর্ম বুঝতে পারে এবং একশ দিনের প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানো হয়।
আরও মজার ব্যাপার হল, শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নয় একশ দিনের কাজ প্রকল্পে টাকা দেওয়া নিয়ে কেন্দ্রের দীর্ঘসূত্রিতার ব্যাপারে বিজেপি বা অন্য আঞ্চলিক দল শাসিত রাজ্যেরও অভিযোগ রয়েছে। গত জুলাই মাস পর্যন্ত একশ দিনের কাজ প্রকল্পে বাংলার পাওনা ছিল ৭১৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে কেবল মজুরি বাবদ পাওনা রয়েছে ২৮০০ কোটি টাকা। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ ব্যাপারে বলেছেন, “এখন টাকা দেবে বলছে। তাঁর কথায়, ‘বছরের শেষে টাকা দিয়ে লাভটা কী? অর্থবছর শেষ হয়ে যাবে, তার মধ্যে টাকা খরচ করা যাবে না। তখন তাঁরা (পড়ুন কেন্দ্র) বলবেন, আমরা দিলাম, ওরা কাজ করল না”।